Ajker Patrika

শেষ হলো বর্ণিল ওয়ানগালা

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর
শেষ হলো বর্ণিল ওয়ানগালা

গারো সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ওয়ানগালা বা নবান্ন। গতকাল রোববার শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লিতে দিনব্যাপী হয়ে গেল এ উৎসব। গত দুই বছর করোনার জন্য সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হয়েছিল ওয়ানগালা উৎসবের। তবে এবার করোনার প্রকোপ না থাকায় এ আয়োজন ছিল বর্ণিল।

‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দানের দ্রব্যসামগ্রী এবং ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ওয়ানগালা উৎসব উদ্‌যাপিত হয়। সাধারণত বর্ষার শেষে এবং শীতের আগে নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে গারো সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। এ ছাড়া এটি ‘১০০ ঢোলের উৎসব’ নামেও পরিচিত। এদিন রংবেরঙের পোশাক ও পাখির পালকে সেজে ঢোলের তালে তালে নাচ-গান করে থাকে গারো সম্প্রদায়ের মানুষজন। সঙ্গে থাকে মহিষের শিং দিয়ে বানানো একধরনের বাঁশি।

গারোদের বিশ্বাস, মিসি সালজং বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। এখন ফসল কাটার সময় কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে শস্য দেবতার প্রতি। তাই শস্য দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য নেচে-গেয়ে উদ্‌যাপন করা হয় ওয়ানগালা উৎসব। একসময় এটি ছিল সাংসারেক গারোদের উৎসব। তবে কালের বিবর্তনে গারো সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী হওয়ার পর থেকে উৎসবটি খ্রিষ্টীয় আদলে উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।

গতকাল সকাল নয়টায় মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লির গির্জা চত্বরে ‘থক্কা’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ধর্মপল্লির সহকারী পাল পুরোহিত ও খামাল ফাদার রবার্ট দিলীপ গোমেজ। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্মপল্লির পাল পুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিড দাস।

উৎসবে ক্রুশ চত্বরে বাণী পাঠ, খামালকে খুতুব ও থক্কা প্রদান, সাধারণ মানুষকে থক্কা দেওয়া, নতুন ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎসর্গ, পবিত্র খ্রিষ্টযাগ, দান সংগ্রহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা করা হয়। গারো সম্প্রদায়ের কয়েক শ মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন। প্রার্থনা পরিচালনা করেন ফাদার রবার্ট দিলীপ গোমেজ। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লির পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে বসে মেলা।

উৎসবে আসা হেমারসন চিরান জানান, ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে শস্য দেবতা মিসি সালজংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাতে এসেছেন তিনি। আর এ উৎসবের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজন একসঙ্গে মিলিত হতে পেরেছেন বলে ভীষণ আনন্দিত কলেজশিক্ষার্থী টাংকামি মারাক। শিশু মানবী চিরান ও ইউরেকা রাখসাম জানায়, তারা মেলায় ঘুরতে এসেছে। নাচ-গান দেখে খুব ভালো লাগছে তাদের।

মরিয়মনগর ধর্মপল্লির পাল পুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিড দাস বলেন, ‘১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লির উদ্যোগে ওয়ানগালা উৎসব উদ্‌যাপিত হচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এ উৎসবের মূল লক্ষ্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত