Ajker Patrika

বাল্যবন্ধু

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ১০: ১৯
বাল্যবন্ধু

ছেলেবেলা কেটেছিল পুরান ঢাকায়। এরপর কাজের সূত্রে নতুন ঢাকায় চলে আসা। মা থাকেন পুরান ঢাকায়, তাঁকে দেখতে যেতে হয়। নিয়মিতই মাকে দেখতে যেতেন রফিকুন নবী, কিন্তু বাড়ি থেকে বের হতেন না, তাই বাল্যবন্ধুদের কারও সঙ্গে দেখা হতো না।

বেশ আগের কাহিনি। তখন রিকশা আর স্কুটারের ওপরই বেশি নির্ভর করত মানুষ। সে রকম সময় একবার তিনি পারিবারিক কারণে গেছেন পুরান ঢাকার বাড়িতে। খেয়েদেয়ে বের হয়েছেন যখন, তখন দুটো বেজে গেছে। এ সময় রিকশা বা স্কুটার পাওয়া কঠিন। বদলির সময় বলে নিজের পথে না পড়লে কেউ যাত্রী নিতে চায় না। এ এক বিড়ম্বনা!

চৈত্র মাসের চাঁদি ফাটা রোদ। রিকশা বা স্কুটারের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন রনবী। নারিন্দা পুলিশ ফাঁড়ির কাছে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কোনো বাহন পেলেন না। ঠিক এ সময় একটি বেবিট্যাক্সি পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলে গিয়ে ফিরে এল। রনবীর বয়সী একমুখ দাড়ি-গোঁফওয়ালা বেবিচালক। লোকটা রনবীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কই যাওয়া হইতাছে? উঠলে লইয়া যাই, নাকি? আর্ট কালিজায় যামু?’

তার মানে লোকটা রনবীকে চেনেন! রনবী বললেন, ‘না ভাই, লালমাটিয়া যামু। আর্ট কলেজে যে যাই, আপনি আমারে কোনো দিন লইয়া গেছেন নাকি?’

‘না, যাই নাই। অহন বাসা কি লালমাটিয়ায়?’

‘হুঁ।’

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে লোকটি বললেন, ‘আমারে চিনন যায়? আমি কইলাম চিনি। আমার নামও রফিক। আমরা “মিতা” আছিলাম। মনে আছে? থাকনের কথা না। আমি কলতাবাজারে থাকতাম। খেলতাম তোমাগো স্কুলের মাঠে।’

রনবী চিনতে পারলেন না। তবু বললেন, ‘আর তাই তো! অহন দাড়ি-গোঁফে ঢাকা চেহারা, চিননের উপায় রাখছ নাকি?’

আরও কিছু কথার পর যখন নামছেন রনবী, ভাড়া দিতে চাইছেন, তখন ড্রাইভার রফিক বলছেন, ‘মিয়া, গাড়ি থাইক্যা নাইম্যা তফাত কইরা দিলা? এতক্ষণ কি দস্তিটারে ভাড়ায় খাটাইলাম?’

সূত্র: কাজল ঘোষ সম্পাদিত স্মৃতির ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৭৬-২৭৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত