Ajker Patrika

বৃষ্টিতে বিপাকে কৃষক

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৫০
বৃষ্টিতে বিপাকে কৃষক

যশোরের মাঠে মাঠে চলছে পাকা আমন ধান কাটার ধুম। আবহাওয়া ভালো থাকায় অনেকেই ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। তবে এরই মধ্যে গত দু’দিন সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে।

টানা বৃষ্টিতে সদর, চৌগাছা, বাঘারপাড়া, কেশবপুর, অভয়নগর, মনিরামপুরের অনেক কৃষকই এখনো ধান ঘরে তুলতে পারেননি। এতে অনেকেরই শুকনো ধান ভিজে গেছে। শেষ সময়ে কষ্টের ফলানো ধান ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকাল থেকেই জেলায় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল রোববার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। সকাল থেকেই কখনো মাঝারি, কখনোবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এ অবস্থা আজও (সোমবার) অব্যাহত থাকতে পারে। এ দিকে রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যশোরে ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

কৃষকেরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি আমনের মৌসুমে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। কয়েক দিন ধরে ফসল ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন কিষান-কিষানিরা। এ সময়ে আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে মাঠের অধিকাংশ ধান কেটে বাড়িতে নিয়েছেন তাঁরা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৩-৪ দিনের মধ্যে পুরো ধান ঘরে তোলার কাজ সম্পন্ন হতো। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি। টানা বৃষ্টিতে ভিজে গেছে অনেকের শুকনো ধান। এতে ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা।

সদর উপজেলার জলেশ্বর এলাকার কৃষক আব্দুর রফিক বলেন, ‘ইতিমধ্যে অনেকেই ধান বাড়িতে তুলেছেন। তবে কারও কারও ধান কাটার পর শুকানোর জন্য রেখে দিয়েছেন খেতে। আবার কেউ কেউ শুকনো ধানের মুঠো বেঁধে গাদা করে রেখেছেন। এ অবস্থায় শনিবার ও রোববার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। বৃষ্টিতে ভিজেই ধান কাটা, বাঁধা ও নেওয়ার কাজ করছেন কিষানিরা। এতে বেগ পেতে হচ্ছে। সময় লাগছে বেশি। আর বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় তা নষ্ট হওয়ার উপক্রমও হয়েছে।’

কৃষক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে ১ বিঘা ৮ কাঠা বাড়িতে আনা হয়ে গেছে। ১২ কাঠা জমির ধান বৃষ্টিতে ভিজেছে। দুদিন রোদ্দুর হলে হাসি মুখে সব জমির ধান বাড়িতে আনতে পারতেন তিনি। এমন আবহাওয়া থাকলে অনেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে তাঁর।

শালবরাট গ্রামের কৃষক বাচ্চু মোল্যা বলেন, ‘২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি, সব ধানই মাঠে পড়ে আছে। ’

আমাদের চৌগাছা প্রতিনিধি আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে শনিবার থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর রাত থেকে শুরু হয়ে রোববার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের আমন ধান তোলা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন মাঠের বেশির ভাগ ধান কাটা হয়ে গেলেও অনেকেই ধান গুছিয়ে বাড়িতে নিতে না পেরে মাঠেই গাদা (জালি) দিয়ে রেখেছেন। কেউ কেউ বাড়িতে নিয়ে জালি দিয়ে রেখেছেন। এসব কৃষকই বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যদিও মাঠের কিছু অংশ ধান এখনো কাটা হয়নি।

সিংহঝুলি গ্রামের টনিরাজ জানান, এখনো মাঠের ধান বাড়িতে আনতে না পারায় তাঁর মতো অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। স্বরুপদাহ গ্রামের ফসিউজ্জামান জানান, তাঁর দেড় বিঘা জমির ধান কেটে মাঠে রাখা ছিল। শনিবার বাড়িতে এনে জালি দিয়ে রেখেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, ‘আরও দুই–একদিন না গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। আমন ধান বেশির ভাগই কেটে বাড়িতে নিয়েছেন কৃষক। অনেকেই বোরোর বীজতলা তৈরি করেছেন। এখনো তেমন ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও আরও কয়েক দিন এ অবস্থায় থাকলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, ‘জেলায় এবার ১ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। এর প্রায় ৮০-৮৫ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। বাড়ি তোলা হয়েছে অন্তত ৬০-৬৫ ভাগ ধান। যারা দেরিতে আবাদ করেছিলেন তাঁদের কিছু ধান এখনো মাঠে থেকে গেছে। সেগুলোও ঘরে তোলার প্রক্রিয়া চলছে।’

আবহাওয়া অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বাদল চন্দ্র রায় বলেন, ‘বৃষ্টি বেশি সময় থাকার কথা নয়। সুতরাং এর তেমন একটা প্রভাবও পড়বে না। তবে ধান ভিজে যাওয়ায় কিছু চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫ দেশে সফর বাতিল করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি

স্ত্রীকে হতে হবে নোরা ফাতেহির মতো, না খাইয়ে রেখে তিন ঘণ্টা করে ব্যায়াম করান স্বামী

বাংলা বলায় কলকাতার মার্কেটে ছুরি, বন্দুকের বাঁট ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর, আবারও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেড

২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নামের আগে গণহত্যাকারী, ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত