অরুণ কর্মকার
দেশ-দুনিয়ার সর্বত্র চলছে অস্থিরতা। এই অস্থির সময়ের পথযাত্রী আমরা। সমগ্র মানবজাতি। আমাদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। গন্তব্য অজানা। আমাদের মনে শঙ্কা। আর সংঘাতের-যুদ্ধের ইতিহাস তো রক্তক্ষয়েরই। ইতিমধ্যে বিশ্বের কিছু অঞ্চলে যুদ্ধ চলছে, তবে নতুন করে আরও কোথাও কোথাও যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন কিংবা ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের একটিও খুব অল্প সময়ে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
কী করে বন্ধ হবে? নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) যদি পূর্ব-পশ্চিম-দক্ষিণনির্বিশেষে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে তার অহমের ঝান্ডা ওড়াতে চায়, তাহলে কী করে বন্ধ হবে যুদ্ধের খেলা! সারা পৃথিবীর তাবৎ শক্তি তো তার সামনে মাথা নোয়াবে না। তারপর যুদ্ধরত ইসরায়েলে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব (মন্ত্রী) অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মনে ইহুদি জাত্যভিমান জাগ্রত হলে এবং তিনি তা স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করলে (প্রকৃতই তিনি তা করেছেন, তিনি ইহুদি সম্প্রদায়ের একজন) কী করে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ হতে পারে?
দুনিয়াজুড়ে মানবাধিকারের আত্মস্বীকৃত ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা পাঠানো এবং সংঘাত বন্ধের আহ্বান-সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রস্তাবের ওপর নিরাপত্তা পরিষদে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভেটো দিয়েছে। তাহলে কীভাবে সম্ভব? সর্বোপরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধরত ইসরায়েল সফরে গিয়ে যদি তাদের সুরে সুর মিলিয়েই সব কথা বলেন এবং ইসরায়েলের পাশে থাকার অঙ্গীকার
ব্যক্ত করেন, তাহলেও কি যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে? থাকতে পারে?
এরপরও সম্ভাবনা থাকতে পারে যদি ফিলিস্তিন ইসরায়েলের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। যদি তারা তাদের ভূখণ্ড, জাতিসত্তা সব বিলিয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে হতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনার নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফিলিস্তিনও সে পথে যেতে পারবে না, পারে না। আরও একটি সম্ভাবনা থাকতে পারে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধের। যদি বৃহৎ শক্তিগুলো, অন্ততপক্ষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য একমত হয়ে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আমরা সবাই বুঝি, ওই একমত হওয়ার মতো অসম্ভব আর কিছু নেই, যা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের একক চেষ্টায় (যদি তারা প্রকৃতই চেষ্টা করেও) এসব যুদ্ধ-সংঘাতের অবসান হবে না।
আরও একটি বিকল্প আছে। ওআইসি ও আরব লিগ যদি দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ায়। তবে এই বিকল্পের কথাও শুধু চিন্তার মধ্যে রাখা যেতে পারে। বাস্তবে এ রকম কিছুই হবে না। মধ্যপ্রাচ্য অতীতেও অনেক সংঘাত-সংকটে পড়েছে। কখনোই ওআইসি কিংবা আরব লিগ কোনো নির্ধারকের ভূমিকা নিতে পারেনি। এবারও পারবে না।
সুতরাং যে যুদ্ধ এখনো বলতে গেলে শুরুই হয়নি, সেই যুদ্ধ এবার অনেক দূর পর্যন্ত গড়াতে পারে। পৃথিবীর অপেক্ষাকৃত দুর্বল-দরিদ্র দেশগুলো এর প্রভাবে নানা সমস্যায় পিষ্ট হবে, যার মধ্যে আমরাও আছি।
এবার একটু দেশের দিকে চোখ ফেরানো যাক। এখানেও অনিশ্চয়তা এবং শঙ্কা ছাড়া আর কিছু দৃশ্যমান নয়। শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক—সব ক্ষেত্রে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতিটাই এই মুহূর্তে মুখ্য। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর সময় ঘনিয়ে এলেও এ থেকে উত্তরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না; বরং অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়ে সংকটে রূপ নেওয়ার শঙ্কা প্রবল হচ্ছে।
কারণ সরকার ও সরকারি দল যেমন সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তে অনড় আছে, তেমনি সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। করবে না বলেও মনে হচ্ছে। সর্বশেষ তারা যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। এরপর ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে শুরু করা হবে ‘জয়যাত্রা’। তবে এই কর্মসূচির প্রকৃতি কী হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই বন্ধুর কথোপকথন উল্লেখযোগ্য। তাঁদের একজনকে বলা যায় রাজনৈতিক ঘটনাবলির গভীর ও নিবিড় পর্যবেক্ষক। রাজনীতির ভেতর-বাইরের খবরাখবর রাখেন। গত বুধবার বিএনপি এবং তার আন্দোলনের সাথি সমমনা দলগুলো ২৮ তারিখের মহাসমাবেশ এবং জয়যাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করার পর অপর বন্ধু ফোন করে তাঁর কাছে জানতে চান, ২৮ তারিখে কী হবে? তার পরেই বা কী হতে পারে? জবাবে প্রথম বন্ধুটি তাঁকে বলেন, তিনি ঢাকার বাইরে আছেন। ২৮ তারিখ পর্যন্ত বাইরেই থাকবেন। ২৮ তারিখে কী হবে এবং তারপরেই-বা কী হতে পারে তা জানার জন্য তিনি যেন ২৯ তারিখে তাঁকে ফোন করেন। তখন এ বিষয়ে তাঁকে কিছু বলতে পারবেন।
দুই বন্ধুর এই কথোপকথন হাস্যরসাত্মক হলেও, এর মধ্যে যে বাস্তবতা লুকিয়ে রয়েছে তা হলো, অনিশ্চয়তা। বিএনপি এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অন্যান্য দলের আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত কী অর্জিত হবে, তা কেউ আগাম বলতে পারে না। বলার জন্য যে সমীকরণ মেলানো দরকার, তা এখন পর্যন্ত মিলছে না। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের সমীকরণও মিলছে বলে মনে হয় না। তাঁদের অবস্থা এখন ‘ফলের চিন্তা না করে কর্ম করে যাওয়ার’ মতো। আন্দোলন যখন শুরু করেছেন, অনেকগুলো পর্যায় অতিক্রম করে এক দফা অবধি পৌঁছেছেন, তখন তো তা চালিয়ে যেতেই হবে। সেভাবেই চলছে।
তবে সরকার, সরকারি দল এবং তাদের সহযোগী বা জোটভুক্ত দলগুলো কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দৃঢ়তার সঙ্গেই অগ্রসর হচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরে নিয়েই তারা কর্মকৌশল প্রণয়ন করছে। বিএনপি না এলেও যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, সেই চেষ্টাও আছে। সরকার ও সরকারি দল এই মুহূর্তে তাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্ধারণ করেছে ভোটকেন্দ্রে সম্ভাব্য সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটার সমাগম করানো। এই লক্ষ্যে সরকারি দল এবং তাদের জোটভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে যদি সরকারি প্রশাসনও মাঠে নামে, তাহলে ৬০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত করানো অসম্ভব হবে না বলে তাদের বিশ্বাস। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং জনগণের অংশগ্রহণ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলেও তারা মনে করে।
নির্বাচন কমিশনও তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সক্রিয় আছে। সময়সূচি অনুযায়ী, কমিশনের সব কাজই এগোচ্ছে। তারপরও শেষ পর্যন্ত কী হবে, সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত নন। সবার মধ্যেই একটা কী হয় কী হয় ভাব দেখা যাচ্ছে। আবার শঙ্কাও আছে। সে শঙ্কা হচ্ছে রাজনৈতিক সংঘাতের, যা সাধারণ মানুষ কখনোই চায় না। আবার রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ারও শঙ্কা আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ—এসব অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার অবসান ঘটাতে পারত। কিন্তু সে বিষয়েও দুই দলের অবস্থান বিপরীতমুখী।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
দেশ-দুনিয়ার সর্বত্র চলছে অস্থিরতা। এই অস্থির সময়ের পথযাত্রী আমরা। সমগ্র মানবজাতি। আমাদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। গন্তব্য অজানা। আমাদের মনে শঙ্কা। আর সংঘাতের-যুদ্ধের ইতিহাস তো রক্তক্ষয়েরই। ইতিমধ্যে বিশ্বের কিছু অঞ্চলে যুদ্ধ চলছে, তবে নতুন করে আরও কোথাও কোথাও যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন কিংবা ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের একটিও খুব অল্প সময়ে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
কী করে বন্ধ হবে? নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) যদি পূর্ব-পশ্চিম-দক্ষিণনির্বিশেষে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে তার অহমের ঝান্ডা ওড়াতে চায়, তাহলে কী করে বন্ধ হবে যুদ্ধের খেলা! সারা পৃথিবীর তাবৎ শক্তি তো তার সামনে মাথা নোয়াবে না। তারপর যুদ্ধরত ইসরায়েলে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব (মন্ত্রী) অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মনে ইহুদি জাত্যভিমান জাগ্রত হলে এবং তিনি তা স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করলে (প্রকৃতই তিনি তা করেছেন, তিনি ইহুদি সম্প্রদায়ের একজন) কী করে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ হতে পারে?
দুনিয়াজুড়ে মানবাধিকারের আত্মস্বীকৃত ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা পাঠানো এবং সংঘাত বন্ধের আহ্বান-সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রস্তাবের ওপর নিরাপত্তা পরিষদে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভেটো দিয়েছে। তাহলে কীভাবে সম্ভব? সর্বোপরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধরত ইসরায়েল সফরে গিয়ে যদি তাদের সুরে সুর মিলিয়েই সব কথা বলেন এবং ইসরায়েলের পাশে থাকার অঙ্গীকার
ব্যক্ত করেন, তাহলেও কি যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে? থাকতে পারে?
এরপরও সম্ভাবনা থাকতে পারে যদি ফিলিস্তিন ইসরায়েলের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। যদি তারা তাদের ভূখণ্ড, জাতিসত্তা সব বিলিয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে হতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনার নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফিলিস্তিনও সে পথে যেতে পারবে না, পারে না। আরও একটি সম্ভাবনা থাকতে পারে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধের। যদি বৃহৎ শক্তিগুলো, অন্ততপক্ষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য একমত হয়ে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আমরা সবাই বুঝি, ওই একমত হওয়ার মতো অসম্ভব আর কিছু নেই, যা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের একক চেষ্টায় (যদি তারা প্রকৃতই চেষ্টা করেও) এসব যুদ্ধ-সংঘাতের অবসান হবে না।
আরও একটি বিকল্প আছে। ওআইসি ও আরব লিগ যদি দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ায়। তবে এই বিকল্পের কথাও শুধু চিন্তার মধ্যে রাখা যেতে পারে। বাস্তবে এ রকম কিছুই হবে না। মধ্যপ্রাচ্য অতীতেও অনেক সংঘাত-সংকটে পড়েছে। কখনোই ওআইসি কিংবা আরব লিগ কোনো নির্ধারকের ভূমিকা নিতে পারেনি। এবারও পারবে না।
সুতরাং যে যুদ্ধ এখনো বলতে গেলে শুরুই হয়নি, সেই যুদ্ধ এবার অনেক দূর পর্যন্ত গড়াতে পারে। পৃথিবীর অপেক্ষাকৃত দুর্বল-দরিদ্র দেশগুলো এর প্রভাবে নানা সমস্যায় পিষ্ট হবে, যার মধ্যে আমরাও আছি।
এবার একটু দেশের দিকে চোখ ফেরানো যাক। এখানেও অনিশ্চয়তা এবং শঙ্কা ছাড়া আর কিছু দৃশ্যমান নয়। শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক—সব ক্ষেত্রে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতিটাই এই মুহূর্তে মুখ্য। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর সময় ঘনিয়ে এলেও এ থেকে উত্তরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না; বরং অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়ে সংকটে রূপ নেওয়ার শঙ্কা প্রবল হচ্ছে।
কারণ সরকার ও সরকারি দল যেমন সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তে অনড় আছে, তেমনি সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। করবে না বলেও মনে হচ্ছে। সর্বশেষ তারা যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। এরপর ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে শুরু করা হবে ‘জয়যাত্রা’। তবে এই কর্মসূচির প্রকৃতি কী হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই বন্ধুর কথোপকথন উল্লেখযোগ্য। তাঁদের একজনকে বলা যায় রাজনৈতিক ঘটনাবলির গভীর ও নিবিড় পর্যবেক্ষক। রাজনীতির ভেতর-বাইরের খবরাখবর রাখেন। গত বুধবার বিএনপি এবং তার আন্দোলনের সাথি সমমনা দলগুলো ২৮ তারিখের মহাসমাবেশ এবং জয়যাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করার পর অপর বন্ধু ফোন করে তাঁর কাছে জানতে চান, ২৮ তারিখে কী হবে? তার পরেই বা কী হতে পারে? জবাবে প্রথম বন্ধুটি তাঁকে বলেন, তিনি ঢাকার বাইরে আছেন। ২৮ তারিখ পর্যন্ত বাইরেই থাকবেন। ২৮ তারিখে কী হবে এবং তারপরেই-বা কী হতে পারে তা জানার জন্য তিনি যেন ২৯ তারিখে তাঁকে ফোন করেন। তখন এ বিষয়ে তাঁকে কিছু বলতে পারবেন।
দুই বন্ধুর এই কথোপকথন হাস্যরসাত্মক হলেও, এর মধ্যে যে বাস্তবতা লুকিয়ে রয়েছে তা হলো, অনিশ্চয়তা। বিএনপি এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অন্যান্য দলের আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত কী অর্জিত হবে, তা কেউ আগাম বলতে পারে না। বলার জন্য যে সমীকরণ মেলানো দরকার, তা এখন পর্যন্ত মিলছে না। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের সমীকরণও মিলছে বলে মনে হয় না। তাঁদের অবস্থা এখন ‘ফলের চিন্তা না করে কর্ম করে যাওয়ার’ মতো। আন্দোলন যখন শুরু করেছেন, অনেকগুলো পর্যায় অতিক্রম করে এক দফা অবধি পৌঁছেছেন, তখন তো তা চালিয়ে যেতেই হবে। সেভাবেই চলছে।
তবে সরকার, সরকারি দল এবং তাদের সহযোগী বা জোটভুক্ত দলগুলো কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দৃঢ়তার সঙ্গেই অগ্রসর হচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরে নিয়েই তারা কর্মকৌশল প্রণয়ন করছে। বিএনপি না এলেও যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, সেই চেষ্টাও আছে। সরকার ও সরকারি দল এই মুহূর্তে তাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্ধারণ করেছে ভোটকেন্দ্রে সম্ভাব্য সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটার সমাগম করানো। এই লক্ষ্যে সরকারি দল এবং তাদের জোটভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে যদি সরকারি প্রশাসনও মাঠে নামে, তাহলে ৬০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত করানো অসম্ভব হবে না বলে তাদের বিশ্বাস। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং জনগণের অংশগ্রহণ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলেও তারা মনে করে।
নির্বাচন কমিশনও তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সক্রিয় আছে। সময়সূচি অনুযায়ী, কমিশনের সব কাজই এগোচ্ছে। তারপরও শেষ পর্যন্ত কী হবে, সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত নন। সবার মধ্যেই একটা কী হয় কী হয় ভাব দেখা যাচ্ছে। আবার শঙ্কাও আছে। সে শঙ্কা হচ্ছে রাজনৈতিক সংঘাতের, যা সাধারণ মানুষ কখনোই চায় না। আবার রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ারও শঙ্কা আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ—এসব অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার অবসান ঘটাতে পারত। কিন্তু সে বিষয়েও দুই দলের অবস্থান বিপরীতমুখী।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫