Ajker Patrika

চিকিৎসক ও নৈতিকতা

সম্পাদকীয়
চিকিৎসক ও নৈতিকতা

চিকিৎসা পেশা আর দশটি পেশার মতো নয়। এ পেশায় থাকা মানুষের নৈতিকতা থাকার বিকল্প নেই। শুধু অর্থ অর্জনের উদ্দেশ্যে এ পেশায় আসা উচিত নয়। চিকিৎসকেরা সরাসরি নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করলেই তা জনগণের সেবা বলে বিবেচিত হয়। এ জন্য এ পেশাকে মহৎ পেশাও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু চিকিৎসকের অপকর্মের কারণে এই মহৎ পেশা কালিমালিপ্ত হয়ে পড়ে। এ রকম একটি বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অফিস চলাকালে ফি নিয়ে রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছে।  গতকাল মঙ্গলবার এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

পেশাগত নৈতিকতা একজন চিকিৎসকের প্রধান শর্ত। কিন্তু এ ঘটনায় এর ব্যত্যয় ঘটেছে। এ দেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষেরা অসুখ-বিসুখে দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেই চিকিৎসা পাওয়ার ভরসাস্থল মনে করেন। তাঁরা বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে পারেন না। রোগাক্রান্ত মানুষ রোগমুক্তির আশায় ছুটে আসেন সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের ওই চিকিৎসক যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তা মোটেই চিকিৎসকসুলভ নয়।

একজন চিকিৎসক কোনোভাবেই অফিস চলাকালে সরকারি হাসপাতালে বসে ফি নিয়ে রোগী দেখতে পারেন না। এ কাজটি দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী। একই সঙ্গে চিকিৎসা পেশার নীতি-নৈতিকতাবিরোধীও। ওই চিকিৎসক একই সঙ্গে দুটি অপরাধ করেছেন। এ ঘটনায় উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাঁকে বাধা দেওয়ার কারণে তাঁর সঙ্গেও তিনি অসদাচরণ করেছেন।

এ ঘটনা শুধু ওই চিকিৎসকের একার নৈতিকতার অবনমন নয়, সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার চরম নৈতিকতার স্খলন নির্দেশ করছে। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার দিকটিও ফুটে উঠেছে।

মহান এই পেশাকে ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ উপেক্ষা করলে শুধু আইন দিয়ে চিকিৎসকদের মনোভাব পরিবর্তন করা যায় না। ব্যক্তির সচেতনতা ও আত্মোপলব্ধি এ ক্ষেত্রে খুব জরুরি। তাই আমরা প্রত্যাশা করব, এ পেশার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে চিকিৎসকেরা পেশাগত জীবনে নৈতিকতার চর্চা করবেন।

চিকিৎসকদের নৈতিক স্খলন কোনোভাবেই কাম্য নয়। পেশাগত আচরণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কতগুলো নৈতিক এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা পালনের নিয়ম রয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) চিকিৎসকদের জন্য পেশাগত আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে, যেগুলো লঙ্ঘন করলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

এ ঘটনায় ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা আশা করব, তদন্ত শেষে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উপস্থাপন করা জরুরি। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও অসচেতনতার বিষয়টি স্পষ্ট ধরা পড়েছে। সাধারণ জনগণ কি জানেন না, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসককে ফি দিতে হয় না? তারপরও তাঁরা কেন ফি দিয়েছেন? এ জন্য তাঁদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাও জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংসে ভারত-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এই বিজয় বাংলাদেশি আন্টিদের বিজয়: জোহরান মামদানি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত