মোজাম্মেল হোসেন

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্জাতিক হয়ে গেলে ক্রিশ্চিয়ান এরার পরিবর্তে কমন এরা বা সাধারণ সাল বলা হয়।
২০২৩ শেষ হয়ে শুরু হলো ২০২৪ সাল। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছরটি কেমন যাবে? একটি বছর শেষে প্রায় সব মানুষের মনে এ প্রশ্নটি আনাগোনা করে। ব্যক্তি ও পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সম্পদ-আপদ, সুযোগ-দুর্যোগ প্রভৃতি ছাপিয়ে অবশ্যই প্রশ্নটি স্পর্শ করে সার্বিক জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে, সেই বিন্দুকে।
আমরা এমন একটি বছর অতিক্রম করলাম, যে বছরে কী কী ঘটতে পারে তা একরকম আগেই জানা ছিল। নতুন ঘটনা ঘটেছে খুব কম। আর যে বছরটি শুরু হলো, সেই বছর সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ও সংশয় বেশি। স্থির করেই বলা যায়, এ বছরটি হবে অস্থিরতার। নিশ্চিত বলা যায়, বছরটি হবে অনিশ্চয়তার।
একনজর দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ কেমন গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে চমকপ্রদ উন্নয়ন অভিযাত্রায় একাধিক মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও নির্মাণ অগ্রগতিতে বছরটিও নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আগের বছর পদ্মা সেতু চালুর পরে এই তালিকায় যুক্ত হলো কর্ণফুলী টানেল, এল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের চালান, চালু হলো ঢাকা-কক্সবাজার নতুন রেলপথ, ঢাকা সিটিতে প্রথম মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হলো, খুলল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আংশিক উদ্বোধন হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের। এগুলো তো আকস্মিক ঘটনা নয়, জানাই ছিল।
উন্নয়নের পাশে নেতিবাচক ঘটনা হলো নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে সীমিত আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা, হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজ, ডিম, আলু, মুরগি ও গো-মাংসের দামে অযৌক্তিক উল্লম্ফন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনক হ্রাস, ডলারের অভাব ও মূল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলায় আমদানি-বাণিজ্যে সংকট, সারা বছরই সংবাদমাধ্যমে নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকে স্বাভাবিক লেনদেন বিঘ্নিত হওয়াসহ ব্যাংক প্রশাসনে শৈথিল্য ও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের খবর ইত্যাদি।
এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণের বিস্তার এবং এই রোগে মৃত্যুতে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরটিতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭০১ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫ জন। হাসপাতালে ভর্তির সরকারি তথ্যের বাইরে রোগী ও মৃত্যু আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এবার গ্রামেও ছড়িয়েছে।
বছরজুড়েই চলেছে দেশের বড় দুই দলের একটি বিএনপি ও সমমনা কিছু দলের ডাকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। অন্যথায় নির্বাচন বর্জন তাদের ধনুর্ভঙ্গ পণ। একই দাবিতে আন্দোলনে ২০১৩-১৪ সালে জনগণের ওপর জোর খাটানোসহ লাগাতার হরতাল-অবরোধের ব্যর্থ কৌশল বাদ দিয়ে এবার বিএনপি শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার কৌশল নিয়ে অনেক অগ্রগতি সাধন করে। বছরব্যাপী ইউনিয়ন-উপজেলা স্তর থেকে কেন্দ্রে রাজধানী পর্যন্ত কর্মসূচিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী বড় বড় জমায়েত হয়।
কিন্তু তারা কর্মী-সমর্থকের বাইরে ব্যাপক জনতা নয়। বাস্তবে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকসংখ্যক দেশবাসী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিতে চায় কিন্তু সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির মতো চরম লক্ষ্যকে সমর্থন করে না এবং সে জন্য বিএনপির ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। মাঠের এই পাঠ গ্রহণে বিএনপি নেতারা সক্ষম হননি। বছরের শেষভাগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বিভিন্ন কৌশল ও পুলিশি শক্তিপ্রয়োগে ভেঙে দিতে সরকারকে খুব বেগ পেতে হয়নি। বিএনপির মূল নেতারা কয়েকজনসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পুরতে সরকার সক্ষম হয়েছে।
দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বন্ধনে জড়িত পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আমাদের উপর্যুপরি বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিপালন নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন তুলছে। বিদায়ী বছরটিতে এ বিষয়ে দৃশ্যমান চাপ দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম প্রভৃতি আইন ও মানবাধিকার ইস্যুতে আগের বছরের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে ২০২৩-এর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার নীতি ঘোষণা করেছে।
দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। পশ্চিমের এই চাপকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, চীন ও বাংলাদেশের আন্তসম্পর্ক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়েও দেখা হচ্ছে।
বিদায়ী বছরের এই পটভূমি অতিক্রম করে ২০২৪ শুরুই হতে যাচ্ছে জাতীয় পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জাতীয় সংসদের নির্বাচন দিয়ে। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম যে সুস্থভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, তা আমরা সবাই জানি। প্রকৃত নির্বাচনের জন্য যতগুলো উপাদান আবশ্যক তার প্রায় সবই অনুপস্থিত। রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশে থাকলেও এই নির্বাচনে নেই। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ কয়েকটি অনুল্লেখ্য দল নির্বাচনে আছে।
একতরফা হওয়ার বিপরীতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে, নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার বিচিত্র কৌশল অনুযায়ী প্রভাবশালী দল আওয়ামী লীগেরই অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ ডামির মতো আচরণ না করে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত হানাহানি, মারামারি হচ্ছে। একদিকে নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা বাস ও রেলে নাশকতা এবং অন্যদিকে নির্বাচনী হানাহানিতে সাধারণ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।
দেশে সরকারি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের যৌথভাবে আপাত একতরফা নিয়ন্ত্রণ থাকায় এই হ-য-ব-র-ল পরিবেশেও ৭ জানুয়ারির ভোট গ্রহণ হয়ে যাবে, কম ভোট পড়লেও। এটা অনুমান করা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হবে, তারপর কী? নতুন বছরটা কেমন যাবে? এরূপ একটি অগ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু প্রত্যাখ্যানই করবে না, অবজ্ঞা করবে। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের নৈতিক মনোবল থাকবে না। জনসাধারণ সংসদের প্রতি মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল হবে না।
সামনের দিনগুলোতে আসছে অর্থনৈতিক সংকট, যা বিদায়ী বছরে আমাদেরও দাঁত দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধজনিত কারণে অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুর সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হওয়া শ্রম অধিকার প্রশ্ন পশ্চিমা দেশগুলোর অসন্তোষের হুমকি তৈরি করেছে, যা থেকে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে।
যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য দরকার, সরকারের পদক্ষেপের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন দরকার। ৭ জানুয়ারির মতো নির্বাচন থেকে কোনো সরকার তা আশা করতে পারে না। তাই এই নির্বাচনের রাজনৈতিক সংশোধনের জন্য আবার আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার পথেই সমাধান বের করতে হবে। সে পথে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা এ বছরেই উঠতে পারে। অন্যথায় সংঘাতের পথে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
২০২৩-এর ঘটনাধারা আমাদের অনেকটা পূর্ব-অনুমিত ছিল। জানা ছিল। সেই জানার মধ্য থেকে ২০২৪-এ অনেক অজানার পথে আমরা পা বাড়াচ্ছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্জাতিক হয়ে গেলে ক্রিশ্চিয়ান এরার পরিবর্তে কমন এরা বা সাধারণ সাল বলা হয়।
২০২৩ শেষ হয়ে শুরু হলো ২০২৪ সাল। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছরটি কেমন যাবে? একটি বছর শেষে প্রায় সব মানুষের মনে এ প্রশ্নটি আনাগোনা করে। ব্যক্তি ও পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সম্পদ-আপদ, সুযোগ-দুর্যোগ প্রভৃতি ছাপিয়ে অবশ্যই প্রশ্নটি স্পর্শ করে সার্বিক জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে, সেই বিন্দুকে।
আমরা এমন একটি বছর অতিক্রম করলাম, যে বছরে কী কী ঘটতে পারে তা একরকম আগেই জানা ছিল। নতুন ঘটনা ঘটেছে খুব কম। আর যে বছরটি শুরু হলো, সেই বছর সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ও সংশয় বেশি। স্থির করেই বলা যায়, এ বছরটি হবে অস্থিরতার। নিশ্চিত বলা যায়, বছরটি হবে অনিশ্চয়তার।
একনজর দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ কেমন গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে চমকপ্রদ উন্নয়ন অভিযাত্রায় একাধিক মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও নির্মাণ অগ্রগতিতে বছরটিও নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আগের বছর পদ্মা সেতু চালুর পরে এই তালিকায় যুক্ত হলো কর্ণফুলী টানেল, এল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের চালান, চালু হলো ঢাকা-কক্সবাজার নতুন রেলপথ, ঢাকা সিটিতে প্রথম মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হলো, খুলল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আংশিক উদ্বোধন হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের। এগুলো তো আকস্মিক ঘটনা নয়, জানাই ছিল।
উন্নয়নের পাশে নেতিবাচক ঘটনা হলো নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে সীমিত আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা, হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজ, ডিম, আলু, মুরগি ও গো-মাংসের দামে অযৌক্তিক উল্লম্ফন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনক হ্রাস, ডলারের অভাব ও মূল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলায় আমদানি-বাণিজ্যে সংকট, সারা বছরই সংবাদমাধ্যমে নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকে স্বাভাবিক লেনদেন বিঘ্নিত হওয়াসহ ব্যাংক প্রশাসনে শৈথিল্য ও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের খবর ইত্যাদি।
এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণের বিস্তার এবং এই রোগে মৃত্যুতে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরটিতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭০১ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫ জন। হাসপাতালে ভর্তির সরকারি তথ্যের বাইরে রোগী ও মৃত্যু আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এবার গ্রামেও ছড়িয়েছে।
বছরজুড়েই চলেছে দেশের বড় দুই দলের একটি বিএনপি ও সমমনা কিছু দলের ডাকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। অন্যথায় নির্বাচন বর্জন তাদের ধনুর্ভঙ্গ পণ। একই দাবিতে আন্দোলনে ২০১৩-১৪ সালে জনগণের ওপর জোর খাটানোসহ লাগাতার হরতাল-অবরোধের ব্যর্থ কৌশল বাদ দিয়ে এবার বিএনপি শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার কৌশল নিয়ে অনেক অগ্রগতি সাধন করে। বছরব্যাপী ইউনিয়ন-উপজেলা স্তর থেকে কেন্দ্রে রাজধানী পর্যন্ত কর্মসূচিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী বড় বড় জমায়েত হয়।
কিন্তু তারা কর্মী-সমর্থকের বাইরে ব্যাপক জনতা নয়। বাস্তবে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকসংখ্যক দেশবাসী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিতে চায় কিন্তু সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির মতো চরম লক্ষ্যকে সমর্থন করে না এবং সে জন্য বিএনপির ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। মাঠের এই পাঠ গ্রহণে বিএনপি নেতারা সক্ষম হননি। বছরের শেষভাগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বিভিন্ন কৌশল ও পুলিশি শক্তিপ্রয়োগে ভেঙে দিতে সরকারকে খুব বেগ পেতে হয়নি। বিএনপির মূল নেতারা কয়েকজনসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পুরতে সরকার সক্ষম হয়েছে।
দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বন্ধনে জড়িত পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আমাদের উপর্যুপরি বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিপালন নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন তুলছে। বিদায়ী বছরটিতে এ বিষয়ে দৃশ্যমান চাপ দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম প্রভৃতি আইন ও মানবাধিকার ইস্যুতে আগের বছরের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে ২০২৩-এর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার নীতি ঘোষণা করেছে।
দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। পশ্চিমের এই চাপকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, চীন ও বাংলাদেশের আন্তসম্পর্ক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়েও দেখা হচ্ছে।
বিদায়ী বছরের এই পটভূমি অতিক্রম করে ২০২৪ শুরুই হতে যাচ্ছে জাতীয় পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জাতীয় সংসদের নির্বাচন দিয়ে। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম যে সুস্থভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, তা আমরা সবাই জানি। প্রকৃত নির্বাচনের জন্য যতগুলো উপাদান আবশ্যক তার প্রায় সবই অনুপস্থিত। রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশে থাকলেও এই নির্বাচনে নেই। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ কয়েকটি অনুল্লেখ্য দল নির্বাচনে আছে।
একতরফা হওয়ার বিপরীতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে, নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার বিচিত্র কৌশল অনুযায়ী প্রভাবশালী দল আওয়ামী লীগেরই অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ ডামির মতো আচরণ না করে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত হানাহানি, মারামারি হচ্ছে। একদিকে নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা বাস ও রেলে নাশকতা এবং অন্যদিকে নির্বাচনী হানাহানিতে সাধারণ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।
দেশে সরকারি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের যৌথভাবে আপাত একতরফা নিয়ন্ত্রণ থাকায় এই হ-য-ব-র-ল পরিবেশেও ৭ জানুয়ারির ভোট গ্রহণ হয়ে যাবে, কম ভোট পড়লেও। এটা অনুমান করা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হবে, তারপর কী? নতুন বছরটা কেমন যাবে? এরূপ একটি অগ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু প্রত্যাখ্যানই করবে না, অবজ্ঞা করবে। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের নৈতিক মনোবল থাকবে না। জনসাধারণ সংসদের প্রতি মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল হবে না।
সামনের দিনগুলোতে আসছে অর্থনৈতিক সংকট, যা বিদায়ী বছরে আমাদেরও দাঁত দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধজনিত কারণে অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুর সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হওয়া শ্রম অধিকার প্রশ্ন পশ্চিমা দেশগুলোর অসন্তোষের হুমকি তৈরি করেছে, যা থেকে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে।
যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য দরকার, সরকারের পদক্ষেপের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন দরকার। ৭ জানুয়ারির মতো নির্বাচন থেকে কোনো সরকার তা আশা করতে পারে না। তাই এই নির্বাচনের রাজনৈতিক সংশোধনের জন্য আবার আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার পথেই সমাধান বের করতে হবে। সে পথে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা এ বছরেই উঠতে পারে। অন্যথায় সংঘাতের পথে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
২০২৩-এর ঘটনাধারা আমাদের অনেকটা পূর্ব-অনুমিত ছিল। জানা ছিল। সেই জানার মধ্য থেকে ২০২৪-এ অনেক অজানার পথে আমরা পা বাড়াচ্ছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
মোজাম্মেল হোসেন

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্জাতিক হয়ে গেলে ক্রিশ্চিয়ান এরার পরিবর্তে কমন এরা বা সাধারণ সাল বলা হয়।
২০২৩ শেষ হয়ে শুরু হলো ২০২৪ সাল। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছরটি কেমন যাবে? একটি বছর শেষে প্রায় সব মানুষের মনে এ প্রশ্নটি আনাগোনা করে। ব্যক্তি ও পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সম্পদ-আপদ, সুযোগ-দুর্যোগ প্রভৃতি ছাপিয়ে অবশ্যই প্রশ্নটি স্পর্শ করে সার্বিক জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে, সেই বিন্দুকে।
আমরা এমন একটি বছর অতিক্রম করলাম, যে বছরে কী কী ঘটতে পারে তা একরকম আগেই জানা ছিল। নতুন ঘটনা ঘটেছে খুব কম। আর যে বছরটি শুরু হলো, সেই বছর সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ও সংশয় বেশি। স্থির করেই বলা যায়, এ বছরটি হবে অস্থিরতার। নিশ্চিত বলা যায়, বছরটি হবে অনিশ্চয়তার।
একনজর দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ কেমন গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে চমকপ্রদ উন্নয়ন অভিযাত্রায় একাধিক মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও নির্মাণ অগ্রগতিতে বছরটিও নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আগের বছর পদ্মা সেতু চালুর পরে এই তালিকায় যুক্ত হলো কর্ণফুলী টানেল, এল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের চালান, চালু হলো ঢাকা-কক্সবাজার নতুন রেলপথ, ঢাকা সিটিতে প্রথম মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হলো, খুলল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আংশিক উদ্বোধন হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের। এগুলো তো আকস্মিক ঘটনা নয়, জানাই ছিল।
উন্নয়নের পাশে নেতিবাচক ঘটনা হলো নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে সীমিত আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা, হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজ, ডিম, আলু, মুরগি ও গো-মাংসের দামে অযৌক্তিক উল্লম্ফন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনক হ্রাস, ডলারের অভাব ও মূল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলায় আমদানি-বাণিজ্যে সংকট, সারা বছরই সংবাদমাধ্যমে নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকে স্বাভাবিক লেনদেন বিঘ্নিত হওয়াসহ ব্যাংক প্রশাসনে শৈথিল্য ও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের খবর ইত্যাদি।
এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণের বিস্তার এবং এই রোগে মৃত্যুতে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরটিতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭০১ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫ জন। হাসপাতালে ভর্তির সরকারি তথ্যের বাইরে রোগী ও মৃত্যু আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এবার গ্রামেও ছড়িয়েছে।
বছরজুড়েই চলেছে দেশের বড় দুই দলের একটি বিএনপি ও সমমনা কিছু দলের ডাকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। অন্যথায় নির্বাচন বর্জন তাদের ধনুর্ভঙ্গ পণ। একই দাবিতে আন্দোলনে ২০১৩-১৪ সালে জনগণের ওপর জোর খাটানোসহ লাগাতার হরতাল-অবরোধের ব্যর্থ কৌশল বাদ দিয়ে এবার বিএনপি শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার কৌশল নিয়ে অনেক অগ্রগতি সাধন করে। বছরব্যাপী ইউনিয়ন-উপজেলা স্তর থেকে কেন্দ্রে রাজধানী পর্যন্ত কর্মসূচিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী বড় বড় জমায়েত হয়।
কিন্তু তারা কর্মী-সমর্থকের বাইরে ব্যাপক জনতা নয়। বাস্তবে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকসংখ্যক দেশবাসী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিতে চায় কিন্তু সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির মতো চরম লক্ষ্যকে সমর্থন করে না এবং সে জন্য বিএনপির ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। মাঠের এই পাঠ গ্রহণে বিএনপি নেতারা সক্ষম হননি। বছরের শেষভাগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বিভিন্ন কৌশল ও পুলিশি শক্তিপ্রয়োগে ভেঙে দিতে সরকারকে খুব বেগ পেতে হয়নি। বিএনপির মূল নেতারা কয়েকজনসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পুরতে সরকার সক্ষম হয়েছে।
দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বন্ধনে জড়িত পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আমাদের উপর্যুপরি বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিপালন নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন তুলছে। বিদায়ী বছরটিতে এ বিষয়ে দৃশ্যমান চাপ দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম প্রভৃতি আইন ও মানবাধিকার ইস্যুতে আগের বছরের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে ২০২৩-এর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার নীতি ঘোষণা করেছে।
দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। পশ্চিমের এই চাপকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, চীন ও বাংলাদেশের আন্তসম্পর্ক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়েও দেখা হচ্ছে।
বিদায়ী বছরের এই পটভূমি অতিক্রম করে ২০২৪ শুরুই হতে যাচ্ছে জাতীয় পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জাতীয় সংসদের নির্বাচন দিয়ে। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম যে সুস্থভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, তা আমরা সবাই জানি। প্রকৃত নির্বাচনের জন্য যতগুলো উপাদান আবশ্যক তার প্রায় সবই অনুপস্থিত। রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশে থাকলেও এই নির্বাচনে নেই। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ কয়েকটি অনুল্লেখ্য দল নির্বাচনে আছে।
একতরফা হওয়ার বিপরীতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে, নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার বিচিত্র কৌশল অনুযায়ী প্রভাবশালী দল আওয়ামী লীগেরই অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ ডামির মতো আচরণ না করে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত হানাহানি, মারামারি হচ্ছে। একদিকে নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা বাস ও রেলে নাশকতা এবং অন্যদিকে নির্বাচনী হানাহানিতে সাধারণ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।
দেশে সরকারি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের যৌথভাবে আপাত একতরফা নিয়ন্ত্রণ থাকায় এই হ-য-ব-র-ল পরিবেশেও ৭ জানুয়ারির ভোট গ্রহণ হয়ে যাবে, কম ভোট পড়লেও। এটা অনুমান করা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হবে, তারপর কী? নতুন বছরটা কেমন যাবে? এরূপ একটি অগ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু প্রত্যাখ্যানই করবে না, অবজ্ঞা করবে। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের নৈতিক মনোবল থাকবে না। জনসাধারণ সংসদের প্রতি মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল হবে না।
সামনের দিনগুলোতে আসছে অর্থনৈতিক সংকট, যা বিদায়ী বছরে আমাদেরও দাঁত দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধজনিত কারণে অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুর সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হওয়া শ্রম অধিকার প্রশ্ন পশ্চিমা দেশগুলোর অসন্তোষের হুমকি তৈরি করেছে, যা থেকে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে।
যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য দরকার, সরকারের পদক্ষেপের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন দরকার। ৭ জানুয়ারির মতো নির্বাচন থেকে কোনো সরকার তা আশা করতে পারে না। তাই এই নির্বাচনের রাজনৈতিক সংশোধনের জন্য আবার আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার পথেই সমাধান বের করতে হবে। সে পথে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা এ বছরেই উঠতে পারে। অন্যথায় সংঘাতের পথে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
২০২৩-এর ঘটনাধারা আমাদের অনেকটা পূর্ব-অনুমিত ছিল। জানা ছিল। সেই জানার মধ্য থেকে ২০২৪-এ অনেক অজানার পথে আমরা পা বাড়াচ্ছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্জাতিক হয়ে গেলে ক্রিশ্চিয়ান এরার পরিবর্তে কমন এরা বা সাধারণ সাল বলা হয়।
২০২৩ শেষ হয়ে শুরু হলো ২০২৪ সাল। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছরটি কেমন যাবে? একটি বছর শেষে প্রায় সব মানুষের মনে এ প্রশ্নটি আনাগোনা করে। ব্যক্তি ও পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সম্পদ-আপদ, সুযোগ-দুর্যোগ প্রভৃতি ছাপিয়ে অবশ্যই প্রশ্নটি স্পর্শ করে সার্বিক জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে, সেই বিন্দুকে।
আমরা এমন একটি বছর অতিক্রম করলাম, যে বছরে কী কী ঘটতে পারে তা একরকম আগেই জানা ছিল। নতুন ঘটনা ঘটেছে খুব কম। আর যে বছরটি শুরু হলো, সেই বছর সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ও সংশয় বেশি। স্থির করেই বলা যায়, এ বছরটি হবে অস্থিরতার। নিশ্চিত বলা যায়, বছরটি হবে অনিশ্চয়তার।
একনজর দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ কেমন গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে চমকপ্রদ উন্নয়ন অভিযাত্রায় একাধিক মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও নির্মাণ অগ্রগতিতে বছরটিও নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আগের বছর পদ্মা সেতু চালুর পরে এই তালিকায় যুক্ত হলো কর্ণফুলী টানেল, এল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের চালান, চালু হলো ঢাকা-কক্সবাজার নতুন রেলপথ, ঢাকা সিটিতে প্রথম মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হলো, খুলল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আংশিক উদ্বোধন হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের। এগুলো তো আকস্মিক ঘটনা নয়, জানাই ছিল।
উন্নয়নের পাশে নেতিবাচক ঘটনা হলো নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে সীমিত আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা, হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজ, ডিম, আলু, মুরগি ও গো-মাংসের দামে অযৌক্তিক উল্লম্ফন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনক হ্রাস, ডলারের অভাব ও মূল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলায় আমদানি-বাণিজ্যে সংকট, সারা বছরই সংবাদমাধ্যমে নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকে স্বাভাবিক লেনদেন বিঘ্নিত হওয়াসহ ব্যাংক প্রশাসনে শৈথিল্য ও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের খবর ইত্যাদি।
এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণের বিস্তার এবং এই রোগে মৃত্যুতে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরটিতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭০১ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫ জন। হাসপাতালে ভর্তির সরকারি তথ্যের বাইরে রোগী ও মৃত্যু আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এবার গ্রামেও ছড়িয়েছে।
বছরজুড়েই চলেছে দেশের বড় দুই দলের একটি বিএনপি ও সমমনা কিছু দলের ডাকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। অন্যথায় নির্বাচন বর্জন তাদের ধনুর্ভঙ্গ পণ। একই দাবিতে আন্দোলনে ২০১৩-১৪ সালে জনগণের ওপর জোর খাটানোসহ লাগাতার হরতাল-অবরোধের ব্যর্থ কৌশল বাদ দিয়ে এবার বিএনপি শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার কৌশল নিয়ে অনেক অগ্রগতি সাধন করে। বছরব্যাপী ইউনিয়ন-উপজেলা স্তর থেকে কেন্দ্রে রাজধানী পর্যন্ত কর্মসূচিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী বড় বড় জমায়েত হয়।
কিন্তু তারা কর্মী-সমর্থকের বাইরে ব্যাপক জনতা নয়। বাস্তবে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকসংখ্যক দেশবাসী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিতে চায় কিন্তু সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির মতো চরম লক্ষ্যকে সমর্থন করে না এবং সে জন্য বিএনপির ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। মাঠের এই পাঠ গ্রহণে বিএনপি নেতারা সক্ষম হননি। বছরের শেষভাগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বিভিন্ন কৌশল ও পুলিশি শক্তিপ্রয়োগে ভেঙে দিতে সরকারকে খুব বেগ পেতে হয়নি। বিএনপির মূল নেতারা কয়েকজনসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পুরতে সরকার সক্ষম হয়েছে।
দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বন্ধনে জড়িত পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আমাদের উপর্যুপরি বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিপালন নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন তুলছে। বিদায়ী বছরটিতে এ বিষয়ে দৃশ্যমান চাপ দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম প্রভৃতি আইন ও মানবাধিকার ইস্যুতে আগের বছরের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে ২০২৩-এর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার নীতি ঘোষণা করেছে।
দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। পশ্চিমের এই চাপকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, চীন ও বাংলাদেশের আন্তসম্পর্ক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়েও দেখা হচ্ছে।
বিদায়ী বছরের এই পটভূমি অতিক্রম করে ২০২৪ শুরুই হতে যাচ্ছে জাতীয় পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জাতীয় সংসদের নির্বাচন দিয়ে। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম যে সুস্থভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, তা আমরা সবাই জানি। প্রকৃত নির্বাচনের জন্য যতগুলো উপাদান আবশ্যক তার প্রায় সবই অনুপস্থিত। রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশে থাকলেও এই নির্বাচনে নেই। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ কয়েকটি অনুল্লেখ্য দল নির্বাচনে আছে।
একতরফা হওয়ার বিপরীতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে, নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার বিচিত্র কৌশল অনুযায়ী প্রভাবশালী দল আওয়ামী লীগেরই অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ ডামির মতো আচরণ না করে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত হানাহানি, মারামারি হচ্ছে। একদিকে নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা বাস ও রেলে নাশকতা এবং অন্যদিকে নির্বাচনী হানাহানিতে সাধারণ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।
দেশে সরকারি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের যৌথভাবে আপাত একতরফা নিয়ন্ত্রণ থাকায় এই হ-য-ব-র-ল পরিবেশেও ৭ জানুয়ারির ভোট গ্রহণ হয়ে যাবে, কম ভোট পড়লেও। এটা অনুমান করা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হবে, তারপর কী? নতুন বছরটা কেমন যাবে? এরূপ একটি অগ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু প্রত্যাখ্যানই করবে না, অবজ্ঞা করবে। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের নৈতিক মনোবল থাকবে না। জনসাধারণ সংসদের প্রতি মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল হবে না।
সামনের দিনগুলোতে আসছে অর্থনৈতিক সংকট, যা বিদায়ী বছরে আমাদেরও দাঁত দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধজনিত কারণে অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুর সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হওয়া শ্রম অধিকার প্রশ্ন পশ্চিমা দেশগুলোর অসন্তোষের হুমকি তৈরি করেছে, যা থেকে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে।
যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য দরকার, সরকারের পদক্ষেপের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন দরকার। ৭ জানুয়ারির মতো নির্বাচন থেকে কোনো সরকার তা আশা করতে পারে না। তাই এই নির্বাচনের রাজনৈতিক সংশোধনের জন্য আবার আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার পথেই সমাধান বের করতে হবে। সে পথে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা এ বছরেই উঠতে পারে। অন্যথায় সংঘাতের পথে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
২০২৩-এর ঘটনাধারা আমাদের অনেকটা পূর্ব-অনুমিত ছিল। জানা ছিল। সেই জানার মধ্য থেকে ২০২৪-এ অনেক অজানার পথে আমরা পা বাড়াচ্ছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্
০১ জানুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্
০১ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্
০১ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্
০১ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫