Ajker Patrika

দুই ডজন বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ১১: ৫৬
দুই ডজন বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

আর ১৫ দিন পরেই চালু হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। তবে এরপর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহনের তীব্র চাপ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু কতটা প্রস্তুত এই মহাসড়ক? চালক ও গাড়ির মালিকদের তথ্যমতে, বরিশাল থেকে ভুরঘাটা প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কে রয়েছে বিপজ্জনক দুই ডজন বাঁক। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকসহ মহাসড়কের দুই পাশ প্রশস্ত করা জরুরি। সম্প্রতি বিআরটিএর এক সভায়ও বিভাগীয় কমিশনার এ বিষয়ে তাগিদ দেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগকে। অবশ্য পদ্মা সেতু চালুকে কেন্দ্র করে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সেই অর্থে কোনো সংস্কারকাজের পরিকল্পনা নেই বলে সওজ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মহাসড়ক ঘুরে একের পর এক এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক দেখা গেছে। তা ছাড়া সড়কের দুই পাশে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা আর গাছপালায় সরু হয়ে গেছে রাস্তা। যানবাহনের চালক, যাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা ও সওজ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-ভুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে অন্তত দুই ডজন। এর মধ্যে কাশিপুরের বন বিভাগ ও সমবায় ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তা, গড়িয়ারপাড়ের জননী পেট্রলপাম্প ও কলাডেমা, ক্যাডেট কলেজ, রহমতাপুর সেতুর ঢাল, বিমানবন্দর মোড়, দোয়ারিকা ব্রিজের ঢাল, জয়েশ্রী, গৌরনদী প্রবেশপথ, বামরাইল স্কুলসংলগ্ন, বাটাজোর, আশুকাঠি, টরকি বাজার, কটকস্থল, বার্থি, ভুরঘাটা সেতর আগে বিপজ্জনক সব বাঁক রয়েছে।

বরিশাল-মাওয়া রুটের বিআরটিসি বাসের চালক মনির মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ রোধে সড়কের দুই পাশ অন্তত দুই-চার হাত প্রশস্ত করা দরকার। কিছুদিন আগেই বিমানবন্দরের সামনে মোটরসাইকেল ঢুকে গেছে পিকআপের মধ্যে। অনেক মোড় (বাঁক) আছে, যা গাড়ি স্পিডে থাকলে দেখা যায় না। বিশেষ করে বিমানবন্দরের বাঁক, জয়েশ্রী, আশুকাঠি, টরকি বাজার, বার্থি তারা শংকর মন্দির, ভুরঘাটাসহ এই রুটে ২০ থেকে ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় সওজের দিকনির্দেশনার দিকে তাকানোর সুযোগ থাকে না।

বরিশাল নথুল্লাবাদ জেলা বাস মালিক গ্রুপের সদ্য সাবেক সভাপতি মো. ইউনুস আলী খান বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দিলে যানবাহন বাড়বে কয়েক গুণ। এখনই নথুল্লাবাদ পেরোতে আধা ঘণ্টা লাগে। সামনে তো যানজট লেগেই থাকবে। তাঁরা জেলা পরিবহন কমিটির সভায় সড়ক প্রশস্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

সওজের কার্য পরিদর্শক আ. রাজ্জাক জানান, তাঁরা কিছুদিন আগে রহমতাপুর ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়েছেন। মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ হওয়ায় এখন ধাপে ধাপে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হবে।

তবে গত ২৮ মার্চ বিআরটিএর আয়োজনে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে করণীয় শীর্ষক এক সভায় মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত ভুরঘাটা থেকে বরিশাল নগর পর্যস্ত সড়ক প্রশস্ত করার তাগিদ দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান। তিনি ওই সভায় বলেন, আগামী জুনে পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা-ভুরঘাটা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে ভয়াবহ অবস্থা হবে। এখনই সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ না নিলে নগর অচল হতে পারে। তিনি সড়ক ও জনপথকে এ বিষয়ে তাগিদ দেন।

ওই সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত যত্রতত্র অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। পদ্মা সেতু ছেড়ে দেওয়ার আগেই মহাসড়কের দুই পাশে হেরিং বোন করার চিন্তা করছেন। অবশ্য পদ্মা সেতু চালুর অল্প কয়েক দিন বাকি থাকলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর এমন আশ্বাসের অগ্রগতি নেই।

এ মহাসড়কে প্রায়ই যাতায়াত করা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। তাঁর সামনেই অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। পদ্মা সেতু খোলার আগেই এই বাঁকের স্থান প্রশস্ত করা জরুরি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরিশালের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আল আমিন জানান, বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত তাঁদের সড়ক এখন ভালোই আছে। আপাতত পদ্মা সেতু চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে এই রুটে সংস্কারের চিন্তাভাবনা নেই। চালকেরা এই রুটের অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক থাকা প্রসঙ্গে বলেন, এই মহাসড়ক ফোর লেন হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণও হয়ে গেছে। ওই সময় এ ধরনের বাঁক আর থাকবে না। তার আগে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক সংস্কারের কোনো ধরনের উদ্যোগ তাঁদের নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত