Ajker Patrika

‘তাড়াতাড়ি একটা চেয়ার দাও’

অশোক কুমার
আপডেট : ২৬ জুন ২০২২, ০৮: ৫১
‘তাড়াতাড়ি একটা চেয়ার দাও’

বনফুলের ‘হাটে বাজারে’ নিয়ে সিনেমা করতে চাইলেন তপন সিংহ। যদিও সেটা ডায়েরির ফর্মে লেখা, তবু তার চরিত্রগুলো জীবন্ত বলে ছবি করলে উতরে যাবে। কারা অভিনয় করবেন? তপন সিংহ ঠিক করলেন বোম্বের ব্যস্ত শিল্পী বৈজয়ন্তী মালা আর অশোক কুমারকে নেবেন প্রধান চরিত্রে। বোম্বে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলায় দুজনই ছবিটি করতে উৎসাহী হলেন। বৈজয়ন্তী একবর্ণ বাংলা জানেন না, তাঁর জন্য টেপ রেকর্ডারে তিন রকম স্পিডে সংলাপ রেকর্ড করা হলো।

আর অশোক কুমার? সেই ১৯৩৬ সাল থেকে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রকে দিয়েছেন অন্য এক মাত্রা। অভিনয়ে চিরকাল বুদ্ধিকে লাগিয়েছেন কাজে। স্বাভাবিক অভিনয় করার সাধনায় তিনি নিজেকে ব্যাপ্ত রেখেছেন সারা জীবন। অশোক কুমারের চোখ আর হাসির তুলনা হয় না বলেই তপন সিংহ বিশ্বাস করতেন। মঞ্চের অভিনয় থেকে অনেক দূরে থাকতেন অশোক কুমার। তপন সিংহকে বলেছিলেন, ‘বাঙালি হলেও, বাংলা ভাষার ওপর দখল একেবারে নেই। যা শিখেছি, তা মায়ের কাছে। তাই সংলাপ যদি একটু কম করে দাও, তাহলে আমার সুবিধা হবে।’

তপন সিংহ সংলাপ কমিয়ে দিয়েছিলেন। শুটিং চলাকালে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন অশোক কুমার। প্রচণ্ড হাঁপানির টান। বিপদ হলো। ফোন করা হলো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনকে। তিনি ছোট্ট একটি প্লেনে ডা. ছেত্রীকে পাঠিয়ে দিলেন। ডা. ছেত্রী দু-তিন দিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে বললেন। অশোক কুমার কিন্তু বললেন, ‘সাফ সাফ বলছি, হয় আমাকে কাজ করতে দাও, না হলে বোম্বে পাঠিয়ে দাও।’

অগত্যা! ক্যামেরা চলার আগপর্যন্ত হাঁপানির টানে হাঁপরের মতো বুক ওঠানামা করছিল অশোক কুমারের। কথা বলতেই কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু যেই ক্যামেরা চালু হলো, মুহূর্তে কষ্ট মিলিয়ে গেল। মুখে মিষ্টি হাসি। নিপুণভাবে অভিনয় করে গেলেন। শট শেষ হওয়ার পর বললেন, ‘তাড়াতাড়ি একটা চেয়ার দাও, দাঁড়াতে পারছি না, মরে যাব।’

 

সূত্র: তপন সিংহ, মনে পড়ে, পৃষ্ঠা ৮১-৮২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত