Ajker Patrika

চলতি মাসেই কার্পেটিং শুরু

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২১, ২০: ২৫
চলতি মাসেই কার্পেটিং শুরু

পদ্মা সেতুর উপরিভাগে চলছে শেষ মুহূর্তের বিশাল কর্মযজ্ঞ। লাইটিং, প্যারাপেট ওয়াল, গ্ৰান্ডিং, পুডিং, পলিশিং ও ওয়াকওয়ের কাজ শেষ করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা। সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৬০ মিটার অংশে শেষ হয়েছে পরীক্ষামূলক কার্পেটিংয়ের কাজ। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার জন্য বন্ধ রয়েছে স্থায়ী কার্পেটিংয়ের কাজ। তবে চলতি মাসেই কার্পেটিংয়ের কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ করতে ৩ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। গত ২৩ আগস্ট পদ্মা সেতুতে বসানো হয় সব শেষ রোড স্লাব। এরপর পদ্মা সেতু মাওয়া-জাজিরা সড়ক পথে সংযুক্ত হয়েছে।

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, গত বছর ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হলে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্টিলের (ইস্পাত) সেতু দৃশ্যমান হয়। এরপর সেতুর স্প্যানের ওপর কংক্রিটের তৈরি রোড স্ল্যাব ও রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয়।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব ও ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপরে বসানো স্প্যানে শেষ রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়। এর পর জাজিরা প্রান্তের ৪০ ও ৪১ নম্বর পিয়ারে বসানো স্প্যানের ওপর ৬০ মিটার পরীক্ষামূলক কার্পেটিং করা হয়। বৃষ্টির কারণে আর কার্পেটিংয়ের কাজ করা যায়নি। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সেতুর রোডওয়ে স্ল্যাবের কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করা হবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, কার্পেটিংয়ের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ। রোড স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে যে কংক্রিটের পথ তৈরি হয়েছে, তার ওপর প্রথমে দুই মিলিমিটারের পানিনিরোধক একটি স্তর বসানো হবে। এটি ‘ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন’ নামে পরিচিত, যা অনেকটা প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের মতো। এর ওপর কয়েক স্তরের কার্পেটিং হবে। সব মিলিয়ে পুরুত্ব হবে প্রায় ১০০ মিলিমিটার।

প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেতু নির্মাণের মোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ২৫ হাজার ৮৮৯ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা।

সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। এরপরও প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর থাকবে। তবে সে সময়টা সেতুর কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামত ও ঠিকাদারের পাওনা মেটানোর জন্য নির্ধারিত।

পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট। এর ওপর দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন, নিচ দিয়ে রেল। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণের মানুষ এখন সেতুটি চালুর অপেক্ষায়।

স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তা জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী শিকদার বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। ইতিমধ্যে সেতুর পাশেই নাওডোবায় শিল্প-কারখানা করার জন্য জমি ক্রয় করেছি। অনেক বিনিয়োগকারীরাই এখানে কল-কারখানা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এতে করে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত মাসে সেতুর রোড স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর থাকা স্ল্যাবে ৬০ মিটার পরিমাণ পরীক্ষামূলক কার্পেটিং করা হয়। আবহাওয়া জনিত কারণে কার্পেটিংয়ের কাজ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের শেষের দিকে পুরোদমে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করা হবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরের সড়ক অবকাঠামোর পরিবর্তন হচ্ছে। দুটি সড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। যা দুটি স্থল বন্ধর ও তিনটি সমুদ্র বন্দরকে সংযুক্ত করবে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে বদলে দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত