Ajker Patrika

ডিমের মৌসুমে ভালো নেই হালদার মা-মাছ

মো. আরফাত হোসাইন, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ মে ২০২৩, ০৯: ২৩
ডিমের মৌসুমে ভালো নেই হালদার মা-মাছ

জোয়ারে সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকছে নদীতে। মিঠাপানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে নোনাপানি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য। ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরুর আগে নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, একদিকে আবহাওয়ার অতি তাপমাত্রা, অন্যদিকে লবণাক্ততায় ভালো নেই মা-মাছ।

গবেষকদের মতে, প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে (এপ্রিল-জুন) অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রপাতসহ মুষলধারে বৃষ্টি হলে এবং পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্রোতে পানির তাপমাত্রা কমে ২৭ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। এতে বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের মিথস্ক্রিয়ায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ‘অমাবস্যার জো’তে ডিম ছাড়েনি মা-মাছ।

গবেষকেরা দেখেছেন, এমনিতে বৃষ্টি না হওয়ায় লবণাক্ততা বাড়ছে। তার মধ্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পরিশোধনের জন্য নদীর যে স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে, সেখানে দ্রুত নোনাপানি চলে আসায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতেও লবণাক্ততার হার বেশি। তা ছাড়া কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণও কমে গেছে।

মৌসুম শুরুর আগে নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের শত শত ডিম সংগ্রহকারী ডিম ধরার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। অনেকে ডিম সংগ্রহের ব্যবহৃত নৌকা মেরামত করেছেন। আবার কেউ কেউ নতুন নৌকা কিংবা বাঁশের ভেলা তৈরি করেছেন। প্রস্তুত রেখেছেন ডিম সংগ্রহের জাল, নোঙর, বালতি, থালাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

হালদার প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগরের মতে, হালদার এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ দ্বারা নদীর কুম (নদীর গভীরতা) ভরাট হয়ে যাওয়া। তা ছাড়া ভুজপুর রাবার ড্যাম, নদীর বিভিন্ন শাখা খালে স্লুইসগেটে পানি আটকে রাখায় নদীর পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর নদীর গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন আচরণ পানির তাপমাত্রা ও পানির গুণগত মানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কিত। মাছের অত্যানুকূল তাপমাত্রা হচ্ছে ২২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে এরা অল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। বর্তমানে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

অপর দিকে হালদার পানিতে লবণাক্ততা এখন আদর্শ মানের চেয়ে বেশি। নদীর মদুনাঘাট থেকে সর্তারঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে নেওয়া পানি ল্যাবে পরীক্ষা করে লবণাক্ততা বেশি গেছে। বৃষ্টি হলে এটা কমতে পারে।

গবেষক শফিকুল ইলাম জানান, পরিবেশ অনুকূলে থাকলে ২ থেকে ৭ মের পূর্ণিমার ‘জো’তে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী অমাবস্যার ‘জো’ শুরু হবে ১৬ মে আর শেষ হবে ২১ মে। তা ছাড়া জুন মাসে আরও দুটি ‘জো’ আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত