Ajker Patrika

কুয়াশায় সূর্যের আলো

জাহীদ রেজা নূর
কুয়াশায় সূর্যের আলো

শরীরের এই তিন জায়গা উষ্ণ থাকলে শীতে কাবু হবে না কেউ। এ কারণেই দেখা যায়, তুষারপাতের সময়ও দিব্যি চলাচল করছে মানুষ, নির্ভয়ে।

সেদিন ঢাকা মহানগরীতে শীতের দাপট। শুক্রবার সকাল নয়টা কুড়ি মিনিট। ঘুম থেকে উঠে কে আর এখন নামবে পথে? মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি গার্লস হাইস্কুল বা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অন্য দিনের মতো গাড়ি-ঘোড়ার ভিড় নেই। কিন্তু একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে প্রধান ফটকের সামনে, যা দেখে মন ভরে যায়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি।

কুয়াশা কেটে যাচ্ছে একটু একটু করে। তারই মধ্যে যেন চাদর গায়ে গাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চল। হ্যাঁ, এখানে এসেই থেমেছে গাড়িটা। অপেক্ষা করছে পাঠকের। একজন চালক এবং তাঁর পাশে বসে আছেন আরেকজন। দুজনেরই সুখী সুখী মুখ।
‘কী নাম আপনার?’ জানাশোনার শুরুতে প্রশ্ন করি।
‘সুধীর চন্দ্র বিশ্বাস।’

চালকের নাম জিজ্ঞেস করি। তিনি মো. সালমান। প্রথম জন ২০ বছর ধরে আছেন লাইব্রেরি কার্যক্রমের সঙ্গে। দ্বিতীয় জন আছেন ২২ বছর ধরে!
সুধীর চন্দ্র বিশ্বাস ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের মোহাম্মদপুর ইউনিটের লাইব্রেরি কর্মকর্তা। বইয়ের সঙ্গেই বন্ধুত্ব তাঁর।
‘এই শীতে কেউ আসে?’

‘আসে আসে।’ মুখে একরাশ তৃপ্তি ছড়িয়ে বলেন সুধীর বিশ্বাস। ‘এরই মধ্যে ৮ জন নিয়ে গেছে বই।’
তিনি জানান, ২০ বছর ধরে এই স্পটে প্রতি শুক্রবার তিনি আসছেন। থাকছেন সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। এরই মধ্যে সেই ছেলেমেয়েরা এসে হাজির হয়, যাদের কাছে বই হলো প্রাণ।

এখনও লাইব্রেরি থেকে ধার করে বই পড়ে মানুষ? স্মার্টফোনের যুগে বই কতটা ধরে রাখতে পারে মানুষকে, তা নিয়ে ভাবতে থাকি। এখন তো ফেসবুকের লোগোর মতো হয়ে যাচ্ছে মানুষ—ঘাড় নিচু করে টিপে চলেছে মোবাইল। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিতে থরে থরে সাজানো বইয়ের প্রতি এদের 
কেউ কেউ এখনও আগ্রহ দেখাচ্ছে, যা বিস্ময়কর বটে। ছাপা পত্রিকার কদর কমেছে, ছাপা বইও কি হয়ে পড়বে জাদুঘরের বস্তু? নাকি থাকবে?

এই তো সামনে বইমেলা। এবারও নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবে কয়েক হাজার বই। কিন্তু তার মধ্যে মানসম্পন্ন বই থাকবে ক’খানা? অথচ এই যে ভ্রাম্যমাণ গাড়িটায় দেখতে পাচ্ছি সেই বইগুলো, যেগুলো পড়লে এই শীতের দিনের কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া সকালে এসে হাজির হতে পারে সূর্যের আলো।

এ সময় সেখানে আসেন তিন নারী। আগ্রহী হয়ে ওঠেন বই নিয়ে। সুধীর বিশ্বাস বলতে থাকেন সদস্য হওয়ার ধরন, নিরাপত্তা অর্থ ও বই রক্ষণাবেক্ষণের ফি-এর গল্প।

সেই গল্পগুলো চলতে থাকে। আমি ফিরে আসি। এই বাইশ বছর তো আমি এই শহরের এই তল্লাটেই কাটিয়ে দিয়েছি, কিন্তু কোনো শুক্রবারেই বাড়ির এত কাছে বইয়ের মেলা বসছে, তা টেরই পাইনি!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত