Ajker Patrika

মানবিক ট্র্যাজেডি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১৫: ৩৬
মানবিক ট্র্যাজেডি

দেশভাগ হয়ে গিয়েছিল রাজনীতির মানুষদের অদম্য উৎসাহে। নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে নতুন করে জীবনযাপন শুরু করা যে কতটা বেদনাদায়ক, তা রাজনীতির লোকেরা হয়তো ধারণাই করেননি। কিন্তু সেই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কেটেছে অনেক মানুষের জীবন।

আহমদ রফিকদের পরিবারের বেশির ভাগ চাকরিজীবীর কর্মস্থল ছিল কলকাতা। দেশভাগের পর তাই তাঁদের অনেকেই চলে এলেন পূর্ব পাকিস্তানে। আর পূর্ব পাকিস্তান থেকে অনেকেই চলে গেল ভারতে। মুসলমানরা এল পূর্ব পাকিস্তানে, হিন্দুরা গেল ভারতে।

মুন্সিগঞ্জে যে বাড়িটায় আহমদ রফিকের চাচা থাকতেন, সেটির নাম ছিল নির্মলা কুটির। একই রকম দুটো যমজ দোতলা বাড়ি পাশাপাশি। দুটো বাড়ির প্রতি তলায় একটা ছোট আর একটা বড় ঘর। যিনি বানিয়েছিলেন, তাঁর নিশ্চয়ই দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় খুব কষ্ট হয়েছিল।

নির্মলা কুটিরের গা ঘেঁষে উত্তরের দিকে ছিল আরেকটি হিন্দুবাড়ি। মধ্যবিত্ত এক পরিবার সে বাড়িতে বাস করত। পাকা ভিতের বড় বড় কয়েকটি টিনের ঘর ছিল তাদের। সে বাড়িতে ছিল দুই তরুণী আর এক কিশোরী। তারা চলে আসত নির্মলা কুটিরে গল্প করতে।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মাঝরাতে সেই বাড়িতে ঢিল পড়তে শুরু করল। কারা যেন ভয় দেখাতে শুরু করল। সেই বাড়ির মানুষেরা ভয় পেতে লাগলেন। একজন মানসিক রোগী ছিলেন সে বাড়িতে, মাঝে মাঝে তিনি আর্তনাদ করে উঠতেন।

এ রকম পরিস্থিতিতে কাউকে না বলেই পরিবারটি কলকাতায় চলে যাওয়ার চিন্তা করে। যাওয়ার আগে সেই কিশোরীটি এসে আহমদ রফিককে বলে, ‘জানেন, আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি।’

‘কোথায়?’

‘কলকাতায়।’

‘কেন চলে যাচ্ছ?’

কিশোরী বলল, ‘জানি না।’

কিশোরীটি জানে, কেন যাচ্ছে। কিন্তু সে কথা বলেনি।

যাওয়ার দিন স্টিমারঘাটে হাজির হন আহমদ রফিক। কিশোরীর বাঁধভাঙা কান্না এখনো মনে পড়ে তাঁর।

সূত্র: আহমদ রফিক, পথ চলতে যা দেখেছি, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত