Ajker Patrika

বিচার দাবি স্বজনহারাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ৫৫
বিচার দাবি স্বজনহারাদের

ছয় মাস বয়সেই বাবা-মাকে হারায় রিহান শেখ। রানা প্লাজা ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়েন বাবা মনসুর শেখ ও মা রেহেনা বেগম। মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর ঠাঁই হয়েছে খালা বিলকিস বেগমের কাছে।

রিহান আর এখন ছোট্ট শিশুটি নেই, ৯ বছরে পা রেখেছে। গতকাল রোববার খালু আসাদুল হককে নিয়ে রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর পূর্তিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিল সে। সেখানেই তার বাবা-মাসহ সব নিহতের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় সে।

রিহানের মতো আরও অনেক স্বজনহারাই গতকাল জড়ো হয়েছিলেন ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে। তাঁদের চোখের পানি আর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

সকাল থেকেই নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নানা কর্মসূচি নিয়ে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। স্থানে স্থানে আয়োজন করা হয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের।

সকাল ৭টা থেকেই ধসে পড়া ভবনের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কার্স লীগ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ তৃণমূল গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, রানা প্লাজা গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন, ১২টি শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ এবং টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মৃত মেয়েকে স্মরণ করতে এসে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নাগরি মণি দাশ। তাঁর মেয়ে আলপনা দাস কাজ করতেন ওই ভবনের ৩ তলার একটি পোশাক কারখানায়। ভবন ধসের ১৭ দিন পর তাঁর লাশ পাওয়া যায়।

নাগরি মণি দাস বলেন, ‘তুমরা তো কতই লেইখা নেও, কিন্তু অগো তো বিচার অয় না। যারা আমার ম্যায়ারে মারচে, আমি অগো উপযুক্ত বিচার দেইহা মরবার চাই।’

ধসে পড়া ভবনের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছরেও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হয়নি। অনতিবিলম্বে শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিহতদের স্মরণে ধসে পড়া ভবনের সামনে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র কুমার দাশ বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশের পরেও হতাহতের পরিবারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।’ তিনি নিহত শ্রমিকের পরিবারকে একজন শ্রমিকের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ; ৪৮ লাখ দেওয়ার দাবি করেন।

বিজিএসএফের সভাপতি অরবিন্দু ব্যাপারী বিন্দু বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। জোর করে কারখানায় ঢুকিয়ে ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন হাজারের বেশি শ্রমিক; যাঁদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেক শ্রমিক অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সরকারের কাছ থেকে তাঁরা যতটুকু সাহায্য পেয়েছেন, তা অতি সামান্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত