আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। হাজারো ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতা ও বর্বরতায় এই ভূখণ্ডের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, হাটবাজার, ঘরবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি রাষ্ট্রের ভেঙে পড়া শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি তাঁর মন্ত্রিপরিষদেও এনেছিলেন নতুনত্ব। উচ্চশিক্ষা, মানোন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশক্রমে গঠিত হয়। মূলত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিশন গঠিত হয়।
তখন ছিল মাত্র ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়। নানা মহল থেকে চাপ আসা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেন।কালক্রমে চাহিদা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্ট সে রকম একটি প্রেক্ষাপট থেকে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কোনো দেশ বা সমাজের বিকাশের জন্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। এর চেয়ে বড় বিনিয়োগ আর হতে পারে না। এরই অংশ হিসেবে সে সময় বেতার-টেলিভিশনে তিনি নিরক্ষরতা দূরীকরণে একাধিক পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। শিক্ষাকে অবাধ, অভিন্ন, গণমুখী, সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা সেসবেরই অংশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় সেই অগ্রগতির পথ। গতিরুদ্ধ হয়ে পড়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা।পরবর্তী সময়ে এভাবে কাটে বাকি ১৫টি বছর।
কর্মমুখী ও গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্যে ১৯৮৯-৯০ সালের দিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তাগিদেই শুরু হয় দূরশিক্ষণের প্রাথমিক কার্যক্রম। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। এর আগে এ দেশে দূরশিক্ষণের ভিত্তি স্থাপনের জন্য ২০০ রেডিও বিতরণ, অডিও-ভিডিও কোষ, অডিও-ভিডিও শিক্ষাকেন্দ্র এবং ১৯৮৩ সালে বাইড গঠন করলেও তা শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়।
১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় দূরশিক্ষণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)। তখন অনেকেই উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখেছিল এ উদ্যোগকে। ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কে ছিল এর অফিস। তখন এত বড় বড় অট্টালিকা ছিল না ধানমন্ডিতে। আমার বাসা থেকে সে সময় দেখা যেত অফিস। গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলসংলগ্ন দুটি কক্ষে মেক-শিফ্ট অডিও ভিজ্যুয়াল স্টুডিও এবং ইএনজি ক্যামেরায় কাজ করা হতো তখন। উন্নত বিশ্বে এ শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে প্রসার পেতে একটু সময় লেগেছে। মূলত সময়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম। শিক্ষার উপকরণ ও অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত এই শিক্ষাব্যবস্থা শ্রেণিকক্ষে বা পরীক্ষার হলে উপস্থিত না হয়ে ঘরে বসে সুবিধামতো এ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
একটি বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠী যেমন-দুর্গম অঞ্চলের মানুষ, চাকরিজীবী, গৃহিণী, ঝরেপড়া, অবহেলিত দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে শুরুতে কাজ করত বাউবি। গত ৩০ বছরের পথচলায় এই প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। বিশেষ করে করোনাকালে সব স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর সবাই ঝুঁকে পড়ে দূরশিক্ষণে।
বিস্তৃত হয় প্রযুক্তির কল্যাণ। দেশের সব ঘরে ঘরে মানুষের হাতেই এখন আধুনিক মানের মোবাইল ফোন। তথ্য এখন অবাধ। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশ গুগল ক্লাসরুম, জুম, হ্যাংআউট, স্কাইপের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাইভ ক্লাসরুমের মাধ্যমে পাঠদান করে। ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ভারত, থাইল্যান্ড জুম অ্যাপের মাধ্যমে এবং উইজআইকিউ, স্কুল, উডমাই ব্যবহার করে দূরশিক্ষণকে হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছে।
মানুষের প্রাত্যহিক জীবন হয়েছে সহজ, কাজকর্মে এসেছে গতি, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের। এখন তো ই-বুক না কিনে ধার নেওয়া যায়। এক প্ল্যাটফর্মে সাজানো থাকে সব বই। ওভার ড্রাইভ ডটকম, লিবিঅ্যাপ ডটকম এ চলমান লাইব্রেরি, প্রজেক্ট গাইডলাইনসহ শিক্ষার্থীরা যেমন সহযোগিতা চান, পেয়ে যান। এ দেশেও উন্মুক্ত হয়েছে অনলাইন, ফেসবুক, সেলফ লার্নিং মডিউল, সিডি কনটেইনিং বুক, টিভি, রেডিও, টুইটার, মাইক্রো এসডিকার্ড, আইভিসিআর, ভিডিও কনফারেন্সসহ শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগের অপার এক দুয়ার। বাউবি শুরু থেকে এভাবেই তাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছে। শিক্ষা ও যোগাযোগে সব সময় নতুনত্ব খোঁজে শিক্ষার্থীরা। উদ্ভাবনী মনোভাব, শিখন ও সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে ‘যোগাযোগ’।
গত সপ্তাহে স্নেহাশীষ বাবু যখন ফোন দেয়, ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মিডিয়ার কী অবস্থা? কারণ, শুরু থেকে এই মিডিয়া সেন্টারের সঙ্গে আমাদের সাংবাদিকতা বিভাগের একটি যোগসূত্র কাজ করেছে। প্রেরক, এনকোডিং, মেসেজ, চ্যানেল, রিসিভার, ফিডব্যাক এগুলো যোগাযোগের মূল উপাদান। কে, কাকে, কোন মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ করছে এবং তার মূল্যায়ন বিষয়গুলো খুব লক্ষণীয়। বহুমাত্রিক যোগাযোগের এই যুগে বাউবি মিডিয়া সেন্টারসহ এখন একাধিক মাধ্যমে শিক্ষাদান করে আসছে।
১৯৯২-৯৩ সালের দিকে ‘বাউবি মিডিয়া সেন্টার’ নামে বাংলাদেশ টেলিভিশনের আদলে গাজীপুরে বিশাল এক টিভি স্টুডিও সেন্টার তৈরি করা হয়। তখন বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো টেলিভিশন এ দেশে ছিল না। আধুনিক মানের সব যন্ত্রপাতি, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লাইট, স্টুডিও, এডিট প্যানেল, পিসিআর, অডিও ভিজ্যুয়ালসহ সময়ের সবচেয়ে আধুনিক মেশিনের সেট-আপ নিয়ে শুরু হয় এই সেন্টার।
খ্যাতিমান সাংবাদিক সাইমন ড্রিংসহ দেশি-বিদেশি প্রথিতযশা সাংবাদিকেরা এখানে এসে প্রশিক্ষণ দিতেন। আজকে যাঁরা সাংবাদিকতায় পরিচিত মুখ, বিভিন্ন স্টেশনের নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এই সেন্টারে। এ ছাড়া বড় বড় বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের শুটিংসহ কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হতো বাউবির স্টুডিও সেন্টারে। গত তিন দশকে বাউবি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। প্রোগ্রাম বেড়েছে অনেক, আরও বেড়েছে দায়িত্ব।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার আমার পূর্বপরিচিত। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দ ফজলে রব কুষ্টিয়ায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র মানুষের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ড. হুমায়ুন আখতার তাঁর অভিজ্ঞতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা দিয়ে বাউবির সমস্যাগুলো ঘুচিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন; স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগের মিশেল এক নয়া দ্বার উন্মোচন করবেন—আজ ২১ অক্টোবর বাউবির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস); সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। হাজারো ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতা ও বর্বরতায় এই ভূখণ্ডের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, হাটবাজার, ঘরবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি রাষ্ট্রের ভেঙে পড়া শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি তাঁর মন্ত্রিপরিষদেও এনেছিলেন নতুনত্ব। উচ্চশিক্ষা, মানোন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশক্রমে গঠিত হয়। মূলত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিশন গঠিত হয়।
তখন ছিল মাত্র ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়। নানা মহল থেকে চাপ আসা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেন।কালক্রমে চাহিদা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্ট সে রকম একটি প্রেক্ষাপট থেকে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কোনো দেশ বা সমাজের বিকাশের জন্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। এর চেয়ে বড় বিনিয়োগ আর হতে পারে না। এরই অংশ হিসেবে সে সময় বেতার-টেলিভিশনে তিনি নিরক্ষরতা দূরীকরণে একাধিক পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। শিক্ষাকে অবাধ, অভিন্ন, গণমুখী, সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা সেসবেরই অংশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় সেই অগ্রগতির পথ। গতিরুদ্ধ হয়ে পড়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা।পরবর্তী সময়ে এভাবে কাটে বাকি ১৫টি বছর।
কর্মমুখী ও গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্যে ১৯৮৯-৯০ সালের দিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তাগিদেই শুরু হয় দূরশিক্ষণের প্রাথমিক কার্যক্রম। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। এর আগে এ দেশে দূরশিক্ষণের ভিত্তি স্থাপনের জন্য ২০০ রেডিও বিতরণ, অডিও-ভিডিও কোষ, অডিও-ভিডিও শিক্ষাকেন্দ্র এবং ১৯৮৩ সালে বাইড গঠন করলেও তা শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়।
১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় দূরশিক্ষণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)। তখন অনেকেই উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখেছিল এ উদ্যোগকে। ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কে ছিল এর অফিস। তখন এত বড় বড় অট্টালিকা ছিল না ধানমন্ডিতে। আমার বাসা থেকে সে সময় দেখা যেত অফিস। গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলসংলগ্ন দুটি কক্ষে মেক-শিফ্ট অডিও ভিজ্যুয়াল স্টুডিও এবং ইএনজি ক্যামেরায় কাজ করা হতো তখন। উন্নত বিশ্বে এ শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে প্রসার পেতে একটু সময় লেগেছে। মূলত সময়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম। শিক্ষার উপকরণ ও অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত এই শিক্ষাব্যবস্থা শ্রেণিকক্ষে বা পরীক্ষার হলে উপস্থিত না হয়ে ঘরে বসে সুবিধামতো এ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
একটি বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠী যেমন-দুর্গম অঞ্চলের মানুষ, চাকরিজীবী, গৃহিণী, ঝরেপড়া, অবহেলিত দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে শুরুতে কাজ করত বাউবি। গত ৩০ বছরের পথচলায় এই প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। বিশেষ করে করোনাকালে সব স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর সবাই ঝুঁকে পড়ে দূরশিক্ষণে।
বিস্তৃত হয় প্রযুক্তির কল্যাণ। দেশের সব ঘরে ঘরে মানুষের হাতেই এখন আধুনিক মানের মোবাইল ফোন। তথ্য এখন অবাধ। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশ গুগল ক্লাসরুম, জুম, হ্যাংআউট, স্কাইপের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাইভ ক্লাসরুমের মাধ্যমে পাঠদান করে। ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ভারত, থাইল্যান্ড জুম অ্যাপের মাধ্যমে এবং উইজআইকিউ, স্কুল, উডমাই ব্যবহার করে দূরশিক্ষণকে হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছে।
মানুষের প্রাত্যহিক জীবন হয়েছে সহজ, কাজকর্মে এসেছে গতি, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের। এখন তো ই-বুক না কিনে ধার নেওয়া যায়। এক প্ল্যাটফর্মে সাজানো থাকে সব বই। ওভার ড্রাইভ ডটকম, লিবিঅ্যাপ ডটকম এ চলমান লাইব্রেরি, প্রজেক্ট গাইডলাইনসহ শিক্ষার্থীরা যেমন সহযোগিতা চান, পেয়ে যান। এ দেশেও উন্মুক্ত হয়েছে অনলাইন, ফেসবুক, সেলফ লার্নিং মডিউল, সিডি কনটেইনিং বুক, টিভি, রেডিও, টুইটার, মাইক্রো এসডিকার্ড, আইভিসিআর, ভিডিও কনফারেন্সসহ শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগের অপার এক দুয়ার। বাউবি শুরু থেকে এভাবেই তাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছে। শিক্ষা ও যোগাযোগে সব সময় নতুনত্ব খোঁজে শিক্ষার্থীরা। উদ্ভাবনী মনোভাব, শিখন ও সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে ‘যোগাযোগ’।
গত সপ্তাহে স্নেহাশীষ বাবু যখন ফোন দেয়, ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মিডিয়ার কী অবস্থা? কারণ, শুরু থেকে এই মিডিয়া সেন্টারের সঙ্গে আমাদের সাংবাদিকতা বিভাগের একটি যোগসূত্র কাজ করেছে। প্রেরক, এনকোডিং, মেসেজ, চ্যানেল, রিসিভার, ফিডব্যাক এগুলো যোগাযোগের মূল উপাদান। কে, কাকে, কোন মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ করছে এবং তার মূল্যায়ন বিষয়গুলো খুব লক্ষণীয়। বহুমাত্রিক যোগাযোগের এই যুগে বাউবি মিডিয়া সেন্টারসহ এখন একাধিক মাধ্যমে শিক্ষাদান করে আসছে।
১৯৯২-৯৩ সালের দিকে ‘বাউবি মিডিয়া সেন্টার’ নামে বাংলাদেশ টেলিভিশনের আদলে গাজীপুরে বিশাল এক টিভি স্টুডিও সেন্টার তৈরি করা হয়। তখন বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো টেলিভিশন এ দেশে ছিল না। আধুনিক মানের সব যন্ত্রপাতি, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লাইট, স্টুডিও, এডিট প্যানেল, পিসিআর, অডিও ভিজ্যুয়ালসহ সময়ের সবচেয়ে আধুনিক মেশিনের সেট-আপ নিয়ে শুরু হয় এই সেন্টার।
খ্যাতিমান সাংবাদিক সাইমন ড্রিংসহ দেশি-বিদেশি প্রথিতযশা সাংবাদিকেরা এখানে এসে প্রশিক্ষণ দিতেন। আজকে যাঁরা সাংবাদিকতায় পরিচিত মুখ, বিভিন্ন স্টেশনের নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এই সেন্টারে। এ ছাড়া বড় বড় বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের শুটিংসহ কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হতো বাউবির স্টুডিও সেন্টারে। গত তিন দশকে বাউবি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। প্রোগ্রাম বেড়েছে অনেক, আরও বেড়েছে দায়িত্ব।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার আমার পূর্বপরিচিত। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দ ফজলে রব কুষ্টিয়ায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র মানুষের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ড. হুমায়ুন আখতার তাঁর অভিজ্ঞতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা দিয়ে বাউবির সমস্যাগুলো ঘুচিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন; স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগের মিশেল এক নয়া দ্বার উন্মোচন করবেন—আজ ২১ অক্টোবর বাউবির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস); সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫