Ajker Patrika

সেতু হয়নি, সড়ক এখন মরণফাঁদ

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১২: ১০
সেতু হয়নি, সড়ক এখন মরণফাঁদ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম থেকে পান্টি সড়কের একটি সেতু সংস্কারের উদ্দেশ্যে ভেঙে ফেলা হয় দশ মাস আগে।

এরপর থেকেই ঠিকাদারের খোঁজ নেই। ভাঙা অংশেও নেই কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা। নির্মাণ করা হয়নি চলাচলের উপযোগি বিকল্প সড়ক।

এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। এ পর্যন্ত দুজন নিহতসহ আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে চলাচল করছে যানবাহন ও জনগণ।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার চাদপুর, বাগুলাট ও পান্টি ইউনিয়নের লাখো মানুষের চলাচল এ সড়ক দিয়ে। এ ছাড়া ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার একাংশের মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে।

সড়কটি গ্রামীণ হলেও ব্যস্ততা রয়েছে বেশ। এই ব্যস্ততম সড়কে পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট সেতুটি। সেতু ভেঙে সড়কে খনন করা হয়েছে ছোট পুকুর।

চলাচল স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে জরাজীর্ণ ড্রাইভেশন সড়ক। আর সেই সড়কেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।

উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সড়কের ২ হাজার মিটার চেইনেজে (আদাবাড়িয়া ভাটা এলাকা) তিন মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন মিটার প্রস্থ বক্স কালভার্টের অনুমোদন দেয় এলজিইডি। ৬০ দিন মেয়াদি একাজের চুক্তিমূল্যও প্রায় ১৮ লক্ষ্যে ১২ হাজার ১৯৫ টাকা।

ই-টেন্ডারের মাধ্যমে এ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া আড়ুয়াপাড়ার মেসার্স আসিফ এন্টারপ্রাইজ। ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর একাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। সড়কের মাঝে একটি পুকুর খনন করা হয়েছে। স্থানীয়রা খালের ওপর বাঁশের চরাট বানিয়ে দিয়েছে। চরাটের ওপর দিয়েই চলাচল করছে মানুষ ও ইজিবাইকগুলো।

এ বিষয়ে বাগুলাট ইউনিয়নের নিলয় বলেন, ‘সেতু নির্মাণের নামে খনন করা হয়েছে পুকুর। এখন ভোগান্তির শেষ নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। গত রোববার রাত ১০টার দিকে একজন শিক্ষক মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুর ভাঙা অংশে পড়ে গেলে তাঁর পায়ের ভেতর রড ঢুকে যায়।’

অটোচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘৬ মাসের বেশি সময় রাস্তায় পুকুর কাইটে থৈইছে (রেখেছে)। সারার (মেরামত) নাম নেই। এমন কাম (কাজ) মানসে (মানুষ) করে নাহি।’

সেতু এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ঘরের পেছনের এই ভাঙা সেতুতে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত দশ মাসে একশর বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার একজন ও গত শনিবার আটজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।’

আদাবাড়িয়া গ্রামের আজিজুলের ছেলে রাকিব বলেন, ‘দিনেরাতে সব সময় অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে। কারও নজর নেই এদিকে। রাতে মানুষ গর্তে পরে আহত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত দুজন মারা গেছেন। দ্রুত সেতুটি নির্মাণ হওয়া দরকার।’

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঠিকাদার সাইদুর রহমান লালু বলেন, ‘টেন্ডার নিয়ে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়। কিন্তু বিকল্প রাস্তা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পানি প্রবাহ সচল রাখার জন্য স্থানীয়রা রাস্তা কেটে বাঁশের চরাট দিয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে। তবে দুর্ঘটনার বিষয়ে জানা নেই।’

উপজেলা প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, ‘নানা জটিলতায় কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে ঠিকাদার।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ‘দুর্ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরেছি। প্রকৌশলী অফিসকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত