Ajker Patrika

নির্বাচনী প্রবণতা

সম্পাদকীয়
নির্বাচনী প্রবণতা

শুধু ৪ জানুয়ারির আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদে নির্বাচনের একটি প্যাটার্ন বা প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও কোনো কোনো নির্বাচনী আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে যেমন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন, তেমনি কোথাও কোথাও শরিক দলগুলোকে ছাড় দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাঁদের শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।

যেকোনোভাবে নির্বাচিত হতে পারলেই হলো, সংসদে নিজ দলের আসন বাড়াতে পারলেই হলো, এ জন্য দলীয় শৃঙ্খলা, নীতি-আদর্শ ইত্যাদির প্রতি আনুগত্য থাকুক আর না-ই থাকুক, তাতে কিছু আসে-যায় না। রাজনীতিতে এ স্খলনটি দৃশ্যমান। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বহুদিন ধরেই এই অসুস্থতাকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেও দলে ফিরে আসার যে চোরা-পথটি আবিষ্কার করা হয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী নাম দিয়ে, তা আমাদের রাজনীতিকে ব্যাপকভাবে নীতিহীন করে তুলেছে।

সাদামাটা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেই দলীয় এই শৃঙ্খলাহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হবে। নির্বাচন এলে দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রার্থীরা আবেদন করেন। অনেক যাচাই-বাছাই করে তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দল তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়। এই প্রার্থীকে জয়ী করে আনার জন্য নির্বাচনী এলাকায় দলীয় ঐক্য গড়ে তোলা হয় এবং সেভাবেই চলতে থাকে প্রচারণা। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন ব্যাপকভাবে। মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থীর প্রতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ান। এ সময় প্রথাগতভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর এই বিদ্রোহী প্রার্থীকে সাদরে ফিরিয়ে নেওয়া হয় দলে।

প্রশ্নটা এখানেই। যদি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো দলনেতা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যান, তাহলে তো তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন। সেই শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীকে যখন আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয় দলে, তখন কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা বলে কিছু আর অবশিষ্ট থাকে না। শঙ্কা হয়, এই অসদাচরণই রাজনৈতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়ে যাবে কি না।

অন্যদিকে শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনেও যখন ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে যান এবং শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনকে অনিশ্চিত করে তোলেন, তখন তা শুধু দলীয় রাজনীতি নয়, সামগ্রিকভাবে দেশীয় রাজনীতির পঙ্কিলতা তাতে ধরা পড়ে। স্পষ্ট হয়, ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা তাঁদের নেতা-কর্মীদের নীতি-নৈতিকতার প্রতি উদাসীনই থেকেছেন। নির্বাচনী আসনে যথেচ্ছাচার করার এ যেন এক অলিখিত সংকেত!

গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচন অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু নির্বাচনই সব নয়। পরিকল্পনামাফিক দেশের স্বার্থ রক্ষা করে জনগণের সেবায় নিয়োজিত হওয়াটাই ছিল নির্বাচনে জয়ী হওয়া দলের লক্ষ্য। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে এই নীতিবিবর্জিত রাজনৈতিক অবস্থা জনগণকে রাজনীতি নিয়ে ইতিবাচক হতে দেয় না। এই ট্র্যাজেডির অবসান দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংসে ভারত-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এই বিজয় বাংলাদেশি আন্টিদের বিজয়: জোহরান মামদানি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত