Ajker Patrika

জ্বালানিসংকটে বন্ধ ইট উৎপাদন

মো. মফিজুর রহমান, ফরিদপুর
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ৩৯
জ্বালানিসংকটে বন্ধ ইট উৎপাদন

ফরিদপুরে জ্বালানি (কয়লা) সংকট ও বেশি মূল্যের কারণে চলতি মৌসুমে এখনো ইট উৎপাদনে যেতে পারেননি ভাটার মালিকেরা। এর ফলে জেলায় দেখা দিয়েছে ইটের সংকট। জানা গেছে, গত বছর প্রতি টন কয়লার দাম ছিল সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। কিন্তু চলতি মৌসুমে করোনার কারণে কয়লা আমদানির খরচ বেড়েছে। টনপ্রতি মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৯ থেকে ২২ হাজার টাকা। তা-ও আবার পর্যাপ্ত না। এ কারণে ভাটার মালিকেরা সময়মতো ভাটায় ইট কাটা শুরু করতে পারছেন না।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি জানায়, ফরিদপুর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১২৮টি ইটভাটা। এর মধ্যে ৮টি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। চালু রয়েছে ১২০টি। তার মধ্যে অটো ইটভাটার সংখ্যা ৭টি। বাকিগুলো চলে কয়লা পুড়িয়ে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে জানা যায়, গত বছরের উৎপাদিত ইট এরই মধ্যে বিক্রি শেষ পর্যায়ে। কিন্তু নতুন করে উৎপাদনে যেতে পারছেন না মালিকেরা। জেলায় ইতিমধ্যে ইটের সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি উন্নয়নকাজে ঠিকাদারেরা ইট কিনে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর নতুন ইট উৎপাদনের পর যে দামে বিক্রি হবে, তা বর্তমান বাজারদরের দ্বিগুণ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষ সময় থেকে ইট উৎপাদনে যান ভাটার মালিকেরা। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়েই মাটি কেনা, মাটি থেকে কাঁচা ইট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। কাঁচা ইট রোদে শুকিয়ে অক্টোবর মাসেই প্রথম কিস্তি ইট পোড়ানো শুরু করেন। কিন্তু নভেম্বর মাস শুরু হয়ে গেলেও ইট উৎপাদন শুরু করতে পারেনি ভাটাগুলো।

মালিকেরা বলছেন, গত বছর এক টন কয়লা কিনেছেন সাড়ে ৮ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ কয়েক মাসের ব্যবধানে এখন ১৯ থেকে ২২ হাজার টাকা দামে এক টন কয়লা বিক্রি হচ্ছে। তা-ও আবার পর্যাপ্ত না।

ফরিদপুর ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ধলার মোড় এলাকার এম এ বি ব্রিকসের মালিক মো. আবদুস সালাম জানান, একটি মৌসুমে ৮ রাউন্ডে ৭ থেকে ৮ লাখ করে মোট ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট তৈরি হয়। একেক রাউন্ডে ইট পোড়াতে ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এ বছর কয়লার দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় মৌসুমের প্রায় ৪৫ দিন পেরিয়ে গেলেও ইট উৎপাদন শুরু করেননি তিনি। শুধু তিনি নন কোনো ইটভাটার চিমনিতে ধোঁয়া উড়ছে না। ইট প্রস্তুতকারী মাঠও ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

আবদুস সালাম জানান, প্রতি রাউন্ডে ৭ থেকে ৮ লাখ ইট পোড়াতে প্রায় ১৩০ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। এতে ৮ রাউন্ড পোড়ালে ১ হাজার টনের বেশি কয়লা প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, ‘১ হাজার টন কয়লা কিনতাম ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার মধ্যে। সেই কয়লা এবার কিনতে হবে সোয়া ২ কোটি টাকায়। আবার শুধু যে টাকা হলেই কয়লা মিলছে তা-ও না। সময়মতো সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে না।’

একই কথা বলেন আরেক ভাটার মালিক আবদুর রাজ্জাক মোল্লা। তিনি বলেন, ‘গত মৌসুমে একটি ইটের উৎপাদন খরচ ছিল সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ টাকার মধ্যে। কিন্তু চলতি মৌসুমে একটি ইট উৎপাদনে ১০ থেকে ১১ টাকা খরচ হবে। নতুন ১ হাজার ইটের দাম হবে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এত দামে মানুষ ইট কিনবে কি না, সে নিয়েও চিন্তায় আছি।’

শহরতলির সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকার রউফ ব্রিকসের সুপারভাইজার মিজানুর রহমান জানালেন, ইটভাটা করতে হলে বিভিন্ন জেলার ইট প্রস্তুতকারী শ্রমিকদের মৌসুমের কমপক্ষে ছয় মাস আগে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। অগ্রিম নেওয়া শ্রমিকেরা কাজ করতে আসতে পারছেন না। ফলে প্রতিটি ভাটায় প্রায় ৭০ থেকে ১০০ জন শ্রমিক কাজে আসার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।

ফরিদপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি খলিফা কামাল উদ্দিন বলেন, ৮ হাজার টাকার কয়লা ২২ হাজার টাকায় কিনে ভাটা চালু করা ব্যবসায়িক ঝুঁকি মনে করছেন ভাটার মালিকেরা। ফলে বেশির ভাগ ইটভাটা এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি।

কামাল উদ্দিন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখন উদ্যোগ না নিলে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের শুরুতে বাজারে যে নতুন ইট আসবে, সেই ইটের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে। শুধু তা-ই নয় সরকারি কাজেও ধীরগতি চলে আসবে।

ফরিদপুরের কয়লা ব্যবসায়ী মুজিবর মাতুব্বর বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করা হয় দেশে। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বৃদ্ধি ও শিপমেন্ট খরচ বেড়ে যাওয়ায় কয়লা আমদানিতে খরচ বেড়েছে। ফলে আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি দামে কয়লা বিক্রি করতে হচ্ছে। মূলত মোংলা ও নওয়াপাড়ার আমদানিকারকদের কাছ থেকে কয়লা এনে ফরিদপুরে বিক্রি করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত