Ajker Patrika

মুখ্য আলোচক

সম্পাদকীয়
মুখ্য আলোচক

মুস্তাফা জামান আব্বাসী সবে বিয়ে করেছেন। আসমা আব্বাসীসহ তাঁকে দাওয়াত করলেন জসীমউদ্‌দীন। স্ত্রীর হাতের নানা রকম রান্না পরিবেশন করলেন নিজ হাতে। আসমাকে দেখে বললেন, ‘বাহ! তোমার এত সুন্দর বৌ হয়েছে!’

তিনি ভালো বাসতেন মুড়ি, মোয়া খেতে। তাঁর কাছে গেলে তিনি মুড়ি আর মোয়া খেতে খেতে বলতেন লোকবাংলার গানের কথা। যারা শুনত, তারা অবাক হতো তাঁর জ্ঞানের পরিধি দেখে। কবি খুব গোছালো মানুষ নন। বিষয়বুদ্ধিও খুব একটা ছিল না তাঁর। রেগেও যেতেন কখনো কখনো। একবার মুস্তাফা জামান আব্বাসী রেডিওতে গান করেছেন। তা শুনে জসীমউদ্‌দীনের সে কী রাগ! ফোন করে বললেন, ‘তোমরা কলকাতায় গিয়ে পল্লিগীতির সুর সন্ধান করবে, এটা আমি আশা করি না!’

আব্বাসী বুঝতে পারছিলেন না, কী নিয়ে কথা হচ্ছে। হঠাৎ তাঁর মনে পড়ল, তিনি কলকাতা থেকে নির্মলেন্দু চৌধুরীর বাসায় গিয়ে হাসন রাজা, শীতালং ফকিরের কয়েকটি গান শিখে রেডিওতে গেয়েছিলেন। পূর্ববঙ্গেই তো লোকগানের খোঁজ করা যায়। জসীমউদ্‌দীনের রাগ ভাঙানোই যাচ্ছিল না।

শিল্পী আবদুল আলীম মারা যাওয়ার পর এক ঘণ্টার একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল বিটিভিতে। মুস্তাফা জামান আব্বাসী ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। আবদুল আলীমকে নিয়ে সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন জসীমউদ্‌দীন, তাই তাঁকেই ফোন করলেন আব্বাসী। ‘চাচা, আমরা টেলিভিশনে আবদুল আলীমকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করব। আপনি আসুন, আলোচনা করতে।’

কথাটা শুনে খুব রেগে গেলেন জসীমউদ্‌দীন। বললেন, ‘আবদুল আলীমকে নিয়ে অনুষ্ঠান তো আমারই উপস্থাপন করা উচিত।’

বিপদে পড়লেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তারপরও বোঝানোর জন্য বললেন, ‘চাচা, আপনি সবচেয়ে ভালো বলবেন বলেই আলোচনা করতে বলছি। আপনিই তো মুখ্য আলোচক। এই অনুষ্ঠানে আপনার উপস্থাপনা বা অ্যানাউন্সমেন্ট করা মানায় না।’ বন্ধুপুত্রের অনুরোধ মেনে নিলেন। সেদিন আবদুল আলীমের ওপর কবি জসীমউদ্‌দীনের আলোচনা সবার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। 

সূত্র: জসীমউদ্‌দীন জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৬৪-৬৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত