Ajker Patrika

‘খাসলত’ কি বদলাবে?

সম্পাদকীয়
‘খাসলত’ কি বদলাবে?

রাইড শেয়ারিং নিয়ে যে হুজ্জত পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের, তা থেকে তাদের রেহাই দেওয়ার জন্য অ্যাপ চালু করার কথা ভাবছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তাতে আদৌ কোনো লাভ হবে কি না, তা নিয়ে কিছু শঙ্কা থেকেই যায়। আসলে আমাদের কর্তৃপক্ষ, চালক, মালিক এবং যাত্রীসাধারণের সম্পর্কগুলো এতটাই জটিল যে কোনো ধরনের ভালো উদ্যোগও নিমেষে মন্দ হয়ে যায়।

ধরুন সিএনজিচালিত অটোরিকশার কথা। বুকে হাত দিয়ে কেউ কি বলতে পারবেন, কোনো যাত্রী মিটারে ওঠা ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে? দাম-দর করেই উঠতে হয় এই বাহনে। ওঠার পর চালক ঠিকই চালিয়ে দেন মিটার। সেই মিটারে ভাড়া কত উঠল, সেটা আর বিবেচ্য বিষয় থাকে না। দর-কষাকষির একপর্যায়ে যাত্রা শুরু হয়।

সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ভুক্তভোগীদের বহু অভিযোগ। পুলিশ বিভাগও কখনো কখনো দাপট দেখিয়ে তাদের শায়েস্তা করতে চেয়েছে। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। দুই দিন পর সবই চলে গেছে আগের নিয়মে। অবধারিতভাবে মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়ায় চলতে হয় পথ। সেই বেশি ভাড়াও চলে নিয়ম মেনে। অফিস শুরু বা শেষের সময় ভাড়া হয় আকাশচুম্বী, অন্য সময় কিছুটা সহনীয়। আইন করেও যখন মিটার ব্যবহারে চালকদের বাধ্য করা যাচ্ছে না, তখন বুঝতে হবে, সেটা আসলে আইনের দোষ নয়, দোষ আমাদের ‘খাসলত’-এর। 

উবার এসে ট্যাক্সির বিশাল ভাড়ার চাপ থেকে খানিকটা নিষ্কৃতি দিয়েছিল সাধারণ যাত্রীদের। উবার এখনো অন্য অনেক বাহনের তুলনায় সাশ্রয়ী। এমনকি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চেয়েও কখনো কখনো কম টাকায় উবারে চলা সম্ভব। কিন্তু তারাও কি নিয়ম মেনে চলে?

কাছাকাছি দূরত্বের কথা জানলেই আশপাশের উবারগুলো সেই আবেদন ‘খারিজ’ করে দিতে থাকে। এ যেন তাদের অধিকার। তাদের এই আচরণে বিরক্ত হয়ে না হয় অভিযোগ জানানো যাবে, কিন্তু তাতে কি সমস্যার কোনো সুরাহা হবে? ভুক্তভোগী যাত্রীর দরকার গন্তব্যে পৌঁছানো, কিন্তু সেই গন্তব্যে যাওয়া না-যাওয়া যদি চালকের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে, তাহলে তো বিপদ।

আমাদের আইন এবং জীবনধারা দুই দিকে দুই গতিতে চলতে থাকে। আইনের কথা বলা হলে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা হাসেন এবং তাঁদের দেহভাষায় জানিয়ে দেন, ‘যান আইনের কাছে, দেখুন কিছু করে উঠতে পারেন কি না!’ অন্যদিকে যাত্রীর গন্তব্য সম্পর্কে উদাসীন উবারচালক তাঁর মর্জিমতো ‘খ্যাপ’ খুঁজতে থাকেন। মোটরসাইকেল নিয়ে এখানে আলাদাভাবে কিছু বলা হলো না। শুধু আলাদা হেলমেটের আইন করলে এই বাহনে নিরাপদে উঠতে পারবে যাত্রী, এমন আশা বুঝি দুরাশা। ভুক্তভোগী মানুষমাত্রই জানেন, এই বাহন নিয়েও সমস্যা পাহাড়প্রমাণ।

যেকোনো দেশে যাত্রী পরিবহনে একটা নিয়মনীতি থাকে, যার প্রয়োগ হয়। আমাদের এখানে এখনো সেটা ‘খাসলত’ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তাই অ্যাপ করার চেয়েও বড় কথা, নিয়মের প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সেদিকে নজর দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত