Ajker Patrika

মহানবী (সা.)-এর মানবিকতার গল্প

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৮: ৫৫
মহানবী (সা.)-এর মানবিকতার গল্প

ইসলাম কল্যাণ ও মানবতার ধর্ম। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবতার মূর্ত প্রতীক। আল্লাহ তাআলা তাঁকে গোটা সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত বানিয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর জীবনজুড়ে রয়েছে মানবিকতার অসংখ্য দৃষ্টান্ত, যা ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষকে প্রাণিত করে। এখানে কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

সাহাবিদের প্রতি

মহানবী (সা.) তাঁর সঙ্গীদের খুব ভালোবাসতেন। তাঁদের সুন্দর ও সম্মানজনক নামে সম্বোধন করতেন। সর্বদা তাঁদের প্রতি যত্নশীল থাকতেন। সেবা-সহযোগিতায় সচেষ্ট থাকতেন। সঙ্গীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। অনুপস্থিত দেখলে খোঁজ নিতেন। অসুস্থ হলে দেখতে যেতেন। কেউ মারা গেলে কাফন-দাফন ও জানাজায় অংশ নিতেন। তাঁদের দুঃখ-বেদনায় সমব্যথী হতেন।

রাসুল (সা.) কখনো নিজেকে রাজা এবং সাহাবিদের প্রজা মনে করতেন না; বরং কেউ তাঁর সঙ্গে প্রজাসুলভ আচরণ করলে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে গিয়ে ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে রইল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘স্বাভাবিকভাবে বসো। আমি কোনো বাদশা নই। আমি শুকনো গোশত খেয়ে জীবন ধারণকারী এক সাধারণ কুরাইশ নারীর সন্তান।’ (ইবনে মাজাহ)

অধীনদের প্রতি

রাসুল (সা.) খাদেম, গৃহপরিচারক ও শ্রমিকদের প্রতি মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করেন। এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক ও গৃহপরিচারিকা তোমাদেরই ভাই। সুতরাং তোমরা যে খাবার খাও ও যে মানের পোশাক পরিধান করো, তাদেরও সেই খাবার ও সেই মানের পোশাক পরাও। তাদের ওপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না। একান্তই তাদের দিয়ে যদি অধিক কাজ করাতে হয়, তাহলে তোমরা তাদের সঙ্গে কাজে হাত লাগাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)

শিশুদের প্রতি

মহানবী (সা.) শিশুদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাদের শিশুসুলভ আহ্লাদেপনা, চপলতা ও রাগ সহ্য করতেন। কোলে নিয়ে আদর করতেন। খেলতেন। রসিকতা করতেন। চুমু খেতেন। কখনো তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করতেন না। এমনকি ইবাদতের সময়েও শিশুরা বিরক্ত করলে ধমক দিতেন না।

শত্রুর প্রতি

শুধু আপনজনদের সঙ্গেই নয়; বরং শত্রুদের প্রতিও মহানবী (সা.) মানবিক ছিলেন। তায়েফে শত্রুরা যখন তাঁকে আহত ও অপমান করে তাড়িয়ে দেয়, তখন চাইলে তিনি তাদের চিরতরে ধ্বংস করে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি অনুপম মানবিকতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ, আমার কওমকে পথ দেখান, তারা না বুঝে এমন করেছে।’ (শুআবুল ইমান)

যুদ্ধক্ষেত্রে

যুদ্ধক্ষেত্রেও তাঁর মানবিকতার উদাহরণ বিরল। সৈনিকদের তিনি প্রতিপক্ষের নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও ধর্মগুরুদের হত্যা করতে এবং বিজিত অঞ্চলে লুটপাট করতে নিষেধ করেন। (আবু দাউদ) মুসলমানদের বিজয়ের প্রতিটি ঘটনা তাঁর অনুপম মানবিকতার সাক্ষ্য বহন করে।

জীবজন্তুর প্রতি

শুধু মানুষের প্রতি নয়, অন্যান্য প্রাণীর প্রতিও রাসুল (সা.) মানবতা প্রতিষ্ঠা করেছেন। পশু-পাখিদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখতেন। তাদের কষ্ট অনুভব করতেন। এক সাহাবি পাখির বাসা থেকে ছানা ধরে আনলে তিনি তা ফিরিয়ে দিতে বলেন। আরেক ব্যক্তি তার উটের ওপর অধিক বোঝা তুলে দিলে উটটির চলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল, তা দেখে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এ নির্বাক জন্তুগুলোর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। আরোহণ ও জবাইয়ের ক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করো।’ (আবু দাউদ)

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত