Ajker Patrika

নিজের পাতে ঝোল টানা

সম্পাদকীয়
নিজের পাতে ঝোল টানা

বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের জনগণের সেবক মনে না করে কি উল্টোটা ভাবেন? তাঁরা যে জনগণের সেবার জন্য নিয়োজিত, সে বিষয়টি হয়তো ভুলে যান। কেন বলা হচ্ছে এ কথা? কারণ, সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের অপকর্মের ঘটনা মাঝেমধ্যে আমাদের সামনে আসে।

যাঁরা নীতিনির্ধারক, তাঁরাই অন্যায় অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। সবার ভালো বা সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পেয়েও সারাক্ষণ সচেষ্ট থাকেন নিজের সুবিধা আদায়ে। এ রকম একটি খবর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কথাকচুয়াই গ্রামের সুমন সিংহ তাঁর আলিশান বাড়ির জন্য সরকারি টাকায় দুটি সড়ক নির্মাণ করেছেন। ২০০ মিটারের রাস্তাটি তাঁর বাড়ির গলির মুখে গিয়ে থেমেছে। এরপর গলির মুখ থেকে বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ১৫০ মিটারের আরেকটি সড়ক। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। দুটি সড়ক থেকে শুধু তাঁর পরিবারই উপকৃত হবে। গ্রামের আর কারও এ দুটি সড়ক থেকে উপকার পাওয়ার সুযোগ নেই। সুমন সড়ক দুটির নামকরণ করেছেন তাঁর দাদা-দাদি ও মা-বাবার নামে। দুটি বড় নামফলক বসিয়ে ১ জুলাই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপকে দিয়ে সড়ক দুটির উদ্বোধনও করিয়েছেন। শুধু একটি পরিবারের জন্য সরকারি প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের প্রকল্প নেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ ছাড়া সড়কের নামকরণ নিয়েও রয়েছে তাদের আপত্তি।

বাংলাদেশের অনেক গ্রাম, ইউনিয়ন আছে, যেসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ শুধু সড়ক, সেতু না থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না। যাঁদের কাজ এ ধরনের অবহেলিত জনপদগুলোতে সড়ক নির্মাণ করার, তাঁরা যখন এভাবে শুধুই নিজেদের স্বার্থ-সুবিধার জন্য সরকারি অর্থের অপব্যবহার করে থাকেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে দেশে দুর্নীতির পরিধি কত দূর বিস্তৃত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের অবক্ষয় সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দুর্নীতির সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয় যেন সমানুপাতিক হারে বেড়ে চলছে।

দেশে এখন জমিদারি প্রথা নেই।

তবে কেউ কেউ নিজেদের আক্ষরিক অর্থে জমিদার ভেবে থাকেন মনের অজান্তে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্যক্তিরা সুমন সিংহের মতো সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।  

আমরা ধরে নিতে পারি, দেশে আইন ও বিচারব্যবস্থা বলে কিছু আছে। এখনো সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়নি। আর বিভাগীয়ভাবে শাস্তির ব্যবস্থা দেশের আইনে আছে। যদিও বিভিন্ন ঘটনায় অভিযোগ আছে, নানা সময়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও বিভাগীয় মামলার তদন্তে অনেকের অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হয়; কিন্তু তাঁরা শাস্তি হিসেবে লঘুদণ্ড পেয়ে থাকেন। এ রকম ব্যক্তিদের কোনোভাবেই ভাবার সুযোগ দেওয়া যাবে না যে তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে। একমাত্র যথাযথ শাস্তি প্রদানই পারে এ ধরনের অপকর্ম রোধ করতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত