Ajker Patrika

প্রধান বিচারপতির সুবচন

সম্পাদকীয়
প্রধান বিচারপতির সুবচন

সুবচন আমরা বহু আগেই নির্বাসনে পাঠিয়েছি। এখন ভাষণ হয় ঠিকই, কিন্তু তাতে প্রকাশ পায় প্রধানত দম্ভ বা হুংকার। ভালো কথাও বলা হয় খারাপ শব্দ প্রয়োগ করে। আমরা যে ক্রমেই যুক্তিবোধহীন একটি অসহিষ্ণু জাতিতে পরিণত হতে চলেছি, তা যাঁদের জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে ভাবা হয়, তাঁদের বক্তৃতা শুনলেই স্পষ্ট হয়। তবে গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাঁর বিদায় সংবর্ধনা সভায় যে বক্তৃতাটি করেছেন, তা অনেকটাই সুবচনে ভরা। তিনি বলেছেন, ‘বিচারকদের রাজনৈতিক হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে সংবিধান, আইন, নিজেদের বিচারিক বিবেকের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে বিচারকাজ করতে হবে। সব বিচারককে অসামান্য নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে। নইলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা শুধুমাত্র সংবিধানের ভেতরই আবদ্ধ থাকবে। ধন্য তাঁরাই, যাঁরা অন্তরে শুদ্ধ।’

প্রশ্ন হলো, শুদ্ধ অন্তরের মানুষ খুঁজে পাওয়া কি বর্তমান সময়ে কঠিন কাজ নয়? আমরা এখন অনেকেই চলতি হাওয়ার পন্থী হতে পছন্দ করি। এই সময়ে রাজনৈতিক হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে অসাধারণ নৈতিকতার অধিকারী বিচারক কোথায় পাওয়া যাবে?

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাবেন ২৫ সেপ্টেম্বর। তখন সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকবে। সে কারণে গত বৃহস্পতিবার সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। আপিল বিভাগের ১ নম্বর এজলাসকক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের উদ্যোগে তাঁকে এই বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবী এবং প্রধান বিচারপতির পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। এ 
থেকেই আমাদের বিভাজনের চিত্রটি খুব পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

আইনজীবীদের বিভক্তি নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক বিভক্তি রাজপথ অতিক্রম করে বিচারালয় অভিমুখে ধাবিত হলে, সেটা বিচারালয়ের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনজীবীদের বিভক্তি ও মতভেদ এবং তার প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করার ধারা কি চলমান নয়?
বিচারালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্তত ১০ বার ভাবার পরামর্শ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আপনাদের সিদ্ধান্তে ভুল হলে শেষ বিচারে তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয় বিচার বিভাগের। বিজ্ঞ আইনজীবীদের সেই শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, যে শক্তি বিচারালয়কে দুর্বল করে, গণতান্ত্রিক জীবনযাপন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

প্রধান বিচারপতির এ কথাগুলো বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কি সংশ্লিষ্টরা অনুভব করবেন?
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিচার বিভাগকে প্রজাতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, একটি দেশের জনগণ শাসন বা আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে সে জাতিকে খারাপ দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

অস্বীকার করা যাবে না যে আমরা বাস্তবে এখন অনেকটাই সেই খারাপ দিনের মুখোমুখি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত