Ajker Patrika

খাদ্য মাস্তানি

সম্পাদকীয়
খাদ্য মাস্তানি

লোকসাহিত্যে এমন সব কাহিনি আছে, যা সম্মিলিত মানব ভাবনার স্বয়ংপ্রকাশ। যেমন একটি ছড়ার মধ্যে যখন আমরা পেয়ে যাই, ‘যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই’, তখন বুঝতে পারি, পরিশ্রমের ধন অন্য কেউ লুটে নিচ্ছে। আমাদের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বরাদ্দের খাবার কীভাবে বাইরে চলে যাচ্ছে, তা নিয়ে একটা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থী, হলসংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়, যাকে ‘ফিস্ট’ নামে অভিহিত করা হয়।

কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কুপন বাবদ সামান্য ফি নিয়েই আয়োজনটি সম্পন্ন হয়। জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিবসে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটু ভালো-মন্দ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়, এ তো সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য ঘটনা। আমরা সবাই জানি হল ক্যানটিনের খাদ্যের মানের কথা। এখনো ক্যানটিনের ডাল নিয়ে রসিকতা পুরোনো হয়ে যায়নি। তাই ভালো খাবার যদি আবাসিক শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জোটে, তবে তাতে আনন্দ পাওয়ারই কথা। কিন্তু ওই যে শুরুতে বললাম, ‘নেপোয় মারে দই’, সেটাই পুরো আয়োজনটিকে মলিন করে দিচ্ছে।

হরিষে বিষাদ নেমে আসে, যখন দেখা যায় হলের শিক্ষার্থীদের জন্য যে আয়োজন, তাতে কবজি ডুবিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, প্রশাসনিক পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। এই আয়োজন থেকে তাঁদের বাড়িতে বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়। ফলে হলের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজনের বাজেটে টান পড়ে। ২৫০ থেকে ৪০০টি বিনা মূল্যের খাদ্যের প্যাকেট তৈরি করা হলে যে খরচ পড়ে, তার অর্থের জোগান আসে এই ফিস্টের টাকা থেকেই। তাতে কী হয়? তাতে ফিস্টের খাবারের মান কমে যায়। দু-একটি খাবার বাদ পড়ে যায় তালিকা থেকে। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে এ রকম ঘটনা ঘটেছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিজয় দিবসে তার পুনরাবৃত্তি হলো কি না, সে প্রশ্নটি এখানে বড় নয়। বড় হলো এ প্রবণতাটি।

কেন কোনো ছাত্রসংগঠন কিংবা সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ভাববেন, ক্ষমতা বা প্রভাববলেই তিনি বিনা মূল্যে খাদ্যের অধিকারী হওয়ার দাবিদার? বিষয়টি তো উল্টো হওয়ার কথা ছিল।

নিজেদের কোষাগার থেকেই অর্থ সরবরাহ করে আয়োজনটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আয়োজনের টাকায় করা ফিস্টে একেবারে নির্লজ্জের মতো হাত বাড়াচ্ছেন তাঁরা। এই প্রবণতা শোষক মানসিকতারই পরিচায়ক। এতে কারও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে মনে হয় না; বরং সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই বিনা মূল্যে খাবার আত্মসাৎ করা মানুষদের আড়ালে গালাগাল করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আসলে ছাত্রসংগঠন বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা ভুলেই গেছেন, সেবার মানসিকতা নিয়েই এ কাজগুলো করতে হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রভাব বিস্তারের জন্য এ ধরনের ‘খাদ্য মাস্তানি’ করে তাঁরা বুঝিয়ে দিতে চান তাঁদের ক্ষমতার কথা। এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত