Ajker Patrika

রুপালি সোনার এক গ্রাম

মো. আ. রহিম রেজা, ঝালকাঠি
রুপালি সোনার এক গ্রাম

ঝালকাঠি সদর উপজেলার নেহালপুর গ্রামে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক বেকার যুবক। এক গ্রামেই গড়ে উঠেছে শতাধিক মাছের ঘের। এখানকার উৎপাদিত মাছ যাচ্ছে জেলার নানা প্রান্তে। গ্রামটিতে মাছ চাষের পরিধি আরও বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

ঝালকাঠি-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে কির্ত্তিপাশা মোড় থেকে উত্তরদিকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে নেহালপুর গ্রাম। যেখানে রাস্তার দু’পাশে দেখা মেলে একের পর এক মাছের ঘেরের।

ঝালকাঠির নেহালপুর গ্রামের উদ্যোক্তাদের অন্যতম মো. সাইফুল হক টুটুল। ১৯৯২ সালে এইচএসসি পড়াকালীন নেহালপুর গ্রামের পৈতৃক সম্পত্তির দেড় বিঘা 
জমিতে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। মাছ চাষে সফলতা পেয়ে 
বর্তমানে ২২ বিঘা জমিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন।

মৎস্যচাষি মো. সাইফুল হক বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে চাকরির প্রতি কোনো আগ্রহ না থাকায় নিজের মতো কিছু করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উপায় খুঁজছিলাম। 
দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানলাম, মাছ চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তখন পৈতৃক সম্পত্তির দেড় বিঘা জমিতে পরিত্যক্ত পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে মাছ চাষ শুরু করি। এতে বেশ লাভবান হওয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি মাছ চাষের পরিমাণও বৃদ্ধি করতে থাকি।’
মো. সাইফুল হক আরও বলেন, ‘তখন কোনো প্রশিক্ষণও ছিল না।

নিজের চেষ্টায় ও বাবার দেওয়া পুঁজিতে মাছ চাষ করতে থাকি। এরই মধ্যে সমাজকল্যাণ বিষয়ে বরিশাল ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় (বিএম কলেজ) থেকে অনার্স-মাস্টার্স করি। এরপর যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ২০১০ সালে বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ করতে থাকি। বর্তমানে পৈতৃক সম্পত্তির চার বিঘা এবং ১৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে মোট ২২ বিঘা জমিতে মাছের চাষ করছি।’

জানা যায় মৃগেল, পাবদা, তেলাপিয়া, রুই, কাতলসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে সাইফুৃল হকের মৎস্য খামারে। ঝালকাঠি জেলার সফল মৎস্যচাষিদের মধ্যে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে তালিকাভুক্ত রয়েছি।’

আরেক সফল মৎস্যচাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০০০ সালে নেহালপুর বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৮০ শতাংশ জমিতে তেলাপিয়া, পাঙাশ, রুই, কাতলের সমন্বিত চাষ শুরু করি। যুব উন্নয়নে মৎস্য চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে ঋণ সহায়তা নিয়ে বর্তমানে ২০০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করতে থাকি। এতে বেশ লাভবান হচ্ছি এবং সফলতা পাচ্ছি।’

শহিদুল ইসলাম ঝালকাঠি জেলা ঘের মালিক সমিতির সভাপতি এবং ঘের মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত সততা মৎস্যঘের মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ে ঘের মালিকদের প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। মৎস্যচাষি সাইফুল হক টুটুল ও শহিদুল ইসলাম জানান, তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য জমির লিজ নেন স্থানীয় জমির মালিকদের কাছ থেকে। প্রতিবছরে শতাংশে ১০০ টাকা হারে লিজের চুক্তি ধার্য করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মাছ ঘের থেকে বেরিয়ে গেলেও প্রণোদনা হিসেবে কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।

পরিবহন ও খাদ্যসহ মাছ চাষের প্রতিটি উপকরণের দাম বাড়লে মাছের দাম বাড়েনি।

জানা যায়, নেহালপুর গ্রামে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক বেকার যুবক। এক গ্রামেই গড়ে উঠেছে শতাধিক মাছের ঘের। এখানকার উৎপাদিত মাছ দিয়ে চাহিদা মিটছে জেলার বড় একটি অংশের। গ্রামটিতে মাছ চাষের পরিধি আরও বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এই গ্রামে সংখ্যা বর্তমানে শতাধিক। গ্রামের মৎস্যচাষিরা জানালেন, ঘেরে রুই কাতলা, পাঙাশ, শিং, কই, পাবদা ও মাগুর চাষ হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত মাছ যাচ্ছে পুরো জেলায়। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। তবে, মাছের খাবারের দাম কিছুটা বেশি বলে অভিযোগ তাঁদের।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন চন্দ্র ঘোষ জানান, এই গ্রামে বছরে সাড়ে তিন শ থেকে চার শ টন মাছ উৎপাদন হয়। মাছ চাষের পরিধি আরও বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিধি বাড়লে এখান থেকে পার্শ্ববর্তী জেলায় মাছের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন চন্দ্র ঘোষ আরও জানান, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান অথবা আত্মকর্মী হিসেবে উদ্যোক্তা তৈরিতে মাছ চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সকল চাষিকে সার্বিক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি মাছ চাষে আগ্রহী করতে যুবকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত