Ajker Patrika

তারুণ্যের শক্তি

রুমা মোদক
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২২, ১০: ১২
তারুণ্যের শক্তি

আমার ১৬ বছরের ছেলে কাব্য ছোটবেলায় খুব বায়নাবাজ ছিল। প্রায়ই এটা-ওটা বায়না করত। টিনএজে পড়ার পর ওর পরিবর্তনটা লক্ষ করি। পরিবারের সামর্থ্য বুঝতে পারে। একদম কমে যায় ওর এটা-ওটার বায়না।

মাত্রই ষাণ্মাসিক পরীক্ষা শেষ হলো স্কুলে। নাওয়া-খাওয়াহীন পড়ালেখা, আর পরীক্ষাভীতির ঘুমহীন রাতের শেষ। আমি বলি, ‘বাবা, এবার কদিন রেস্ট নাও।’ তবু পরপর দুদিন গভীর রাতে ওর হাতে মোবাইল দেখে কৌতূহলী হই। এত রাতে মোবাইল দিয়ে কী করো?

কাঁচুমাচু মুখে ও অনেক ভণিতা করে। শেষে বলে, ‘দেবে মা?’ আমি ওর মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি মেসেঞ্জার গ্রুপ করে বন্যার্তদের জন্য টাকা সংগ্রহ করছে। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্ররা। আমি অশ্রু গোপন করে ওর হাতে ৫০০ টাকা তুলে দিই। মোট ৮ হাজার টাকা সংগ্রহ হয় ওদের। প্রয়োজনীয় সওদাপাতি কিনে ত্রাণ দিতে যাওয়া আরেকটি দলের হাতে জিনিসগুলো তুলে দেয় ওরা।

এ আরেক বাংলাদেশ। মূল্যবোধের অবক্ষয়ে আত্মস্বার্থবাদী হয়ে গড়ে ওঠা প্রজন্ম নিয়ে আমাদের যে হতাশা, তার বিপরীতে গড়ে ওঠা আরেক বাংলাদেশ। এ দেশের নরম পলিমাটির মতোই যেমন ইচ্ছে গড়ে নেওয়ার মতো একটি প্রজন্ম। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বন্যার্তদের দুর্দশা দেখে বিবেকের দায়িত্বে আলোড়িত হওয়া। আমিও এদের জন্য কিছু করতে পারি— এমন ভাবনায় উদ্বেলিত হওয়া ছেলেগুলো। যাদের প্রবণতা বলে দেয় সুকুমার বৃত্তিরই উচ্চকিত ভূমিকা এদের বেড়ে ওঠায়। এখন যা অ্যামেচার আবেগ, ভবিষ্যতে তারাই হয়ে উঠতে পারে পুরো দেশের আশা আর ভরসার জায়গা।

সিলেট, সুনামগঞ্জের প্রলয়ংকরী বন্যার সময় এবার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে স্বেচ্ছাসেবকেরা। সাংগঠনিকভাবে, এককভাবে, দলীয়ভাবে। বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষকে ত্রাণ পৌঁছানো—সবাই সবার অবস্থান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সরকারি ত্রাণ কখন পৌঁছাবে, সে আশায় বসে থাকেনি কেউ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ খুলে, পোস্ট দিয়ে, ঘরে ঘরে সাহায্যের জন্য গিয়ে, বাচ্চা ছেলেরা রাস্তায় গান গেয়ে পর্যন্ত টাকা সংগ্রহ করেছে। এই শহরেই দেখেছি এসব। সেই টাকায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছে বন্যাদুর্গত প্রত্যন্ত গ্রামে।

এভরি ক্লাউড হ্যাজ এ সিলভার লাইন। এই প্রলয়ংকরী বন্যার ইতিবাচকতা হলো নতুন করে এ দেশের তারুণ্যের শক্তিকে অনুভব করিয়েছে।

পুরো সুনামগঞ্জে বন্যার পানির তীব্র তোড়ে ঝলমল করছিল এই তারুণ্যের ঝলসানি। সারা দেশ থেকে হাজারো মানুষ ছুটে গেছে সুনামগঞ্জে বন্যার্ত মানুষের পাশে।

সিলেটের বন্যায় ওদের এই প্রয়াস একটা উদাহরণ মাত্র। এই যে মানুষের জন্য মানুষ পাশে দাঁড়ায়, স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে যেসব তরুণ, তারা আমাদেরই সন্তান। আমাদের ভবিষ্যৎ। এদের এই সুকুমার বৃত্তিকে কাজে লাগানো গেলে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ খুব কঠিন নয়। আর যদি এর ব্যত্যয় হয়, তবে তার জন্য দায়ী থাকব আমরা—পূর্ব প্রজন্ম। এখন আমরা যাঁরা অভিভাবক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক সবাই।

লেখক: সাহিত্যিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত