Ajker Patrika

বিকট শব্দে বিস্ফোরণ, আগুন

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ১১: ৩৫
বিকট শব্দে বিস্ফোরণ, আগুন

রাত ৯টা থেকেই একটু একটু করে জ্বলছিল কনটেইনার। তখনো আশপাশে সেভাবে আতঙ্ক ছড়ায়নি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮–১০ জন কর্মী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিলেন। কর্মীদের কেউ কেউ আগুন নেভাতে তাঁদের সহযোগিতা করছিলেন। কেউ কেউ আবার ঘটনার দৃশ্য করছিলেন ভিডিও লাইভ। কিন্তু রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এতে অনেকেই ছিটকে পড়েন এদিক-ওদিক। কারও হাত উড়ে যায়, কারও পা!

বিস্ফোরণের শব্দটা এতটাই বিকট ছিল আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা প্রকম্পিত হয় তাতে। সেই বিস্ফোরণে যাদের ঘরে থাই কাচের জানালা-দরজা আছে, তার বেশির ভাগই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। তাতে আতঙ্কে আশপাশের গ্রামের মানুষ সরে যান নিরাপদ দূরত্বে।

ডিপোর উত্তরের সীমানাদেয়াল লাগানো কেশবপুর গ্রাম। বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ তারাকী পরিবারের চার সদস্য নিয়ে চলে যান প্রায় এক কিলোমিটার দূরের আরেকটি গ্রামে। শনিবার মধ্যরাতে তারাকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নয়টার দিকে আগুন লেগেছে শুনে ভেবেছি ছোটখাটো। সে জন্য পরিবার নিয়ে বাসায় ছিলাম। হঠাৎ ১১টার দিকে বিকট শব্দে কন্টেইনার বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। এরপর আতঙ্কিত হয়ে এক কিলোমিটার দূরের আরেকটি গ্রামে চলে এসেছি পরিবার নিয়ে।’

ডিপোর দক্ষিণপাশের কদমরসুল গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর নাঈম। বিস্ফোরণের শব্দে তাঁর বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে পড়ে। গতকাল দুপুরে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাসায় ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বাসার সব থাই কাচের জানালা ভেঙে পড়ে। পরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কয়েক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বাসায় ফিরি।’

কেশবপুরের লালবেগ এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাস্মদ জোবায়েত। তাঁর সেমিপাকা বাড়িতে অবশ্য কাচের অস্তিত্ব নেই। ফলে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বাড়িটি। তবে আশপাশের যেসব বাড়িতে কাচের দরজা-জানালা আছে তা ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন রোবায়েত। গতকাল বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা হলে বলেন, ‘এমন শব্দ কখনো শুনিনি। যাদের ঘরে থাই জানালা-দরজা আছে বেশির ভাগই ভেঙে পড়েছে। অনেকে ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিকের সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ফিরলেও সেই শব্দ এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।’

বিএম ডিপো কনটেইনারের প্রায় আধা কিলোমিটার পূর্বের ডাকবাংলো জামে মসজিদের কাচও ভেঙে পড়ে বিস্ফোরণে। পাশের ফারুক স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিপোর পাশের একটি হোটেলে ভাত খাচ্ছিলাম। এমন সময় কানে আসে বিস্ফোরণের শব্দ। এরপর আর কিসের ভাত। কোনোরকমে দৌড়ে পালিয়ে আসি। পরে এসে দেখি দোকানের পাশের মসজিদের কাচ ভেঙে পড়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এ সময় কর্মীদের অনেকেই বেরিয়ে আসেন। কিন্তু হঠাৎ কনটেইনার বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেকেই সেখানে তলিয়ে যান। বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১৪৬ জন। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায়ও সেখানে কনটেইনারে থেমে থেমে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর সহজ উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত