Ajker Patrika

আবারও পদ্মার আগ্রাসী রূপ

মো. শামিম রেজা, রাজবাড়ী
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১২: ৫২
আবারও পদ্মার আগ্রাসী রূপ

রাজবাড়ীকে বলা হয় পদ্মাকন্যা। জেলার পাঁচটি উপজেলার চারটিরই (পাংশা, কালুখালী, সদর ও গোয়ালন্দ) অবস্থান পদ্মার পাড় ঘেঁষে। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে পদ্মার তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে এ জেলা। এরই মধ্যে নদীর পেটে চলে গেছে জেলার ৯ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমি। এ ছাড়া ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে পদ্মা।

সম্প্রতি আবারও আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে পদ্মা। গত বুধবার সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরসিলিমপুরে নতুন করে ২৫ মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এ নিয়ে গত দুই মাসে পদ্মার ভাঙনে এক হাজার মিটারের বেশি এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সদর উপজেলায় পদ্মা এখন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রবেশ করেছে। এলাকাভেদে শহর রক্ষা বাঁধ থেকে নদীর দূরত্ব পাঁচ থেকে দশ ফুটের মধ্যে। যেকোনো মুহূর্তে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধটিও পদ্মার পেটে চলে যাওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।

সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের শফিক মোহাম্মদ আলী জানান, একটা সময় তাঁর জায়গাজমি ছিল প্রায় ৮০ বিঘা। জমিতে উচ্ছে, পটোল, ধান, আখসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করতেন। সংসারে কোনো অভাব ছিল না। নদীভাঙনের কারণে সব হারিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব।

একই গ্রামের মো. কেসমত আলী মণ্ডল জানান, তাঁর ১০০ বিঘা জমি ছিল। এতে ধান, পাটসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ হতো। খেত পরিচর্যার জন্য প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। ভাঙনের কারণে তাঁর জায়গাজমি সবকিছুই এখন পদ্মার পেটে। এখন তিনি অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করে সংসার চালান।

খোকন মাহামুদ বলেন, বর্তমানে পদ্মা বেড়িবাঁধের কাছে অবস্থান করছে। অথচ নদী ছিল অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে। ওই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ছিল কয়েকটি গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, ১৯৮৫ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়েছে ৯ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে সদর উপজেলা থেকে গোয়ালন্দ উপজেলা পর্যন্ত ৮ হাজার হেক্টর, সদর থেকে কালুখালী ২৬০ হেক্টর, কালুখালী থেকে পাংশা উপজেলায় ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত স্থায়ী নদীভাঙন রোধে ৩টি প্রকল্পে ৫৫০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পাড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হয়েছে। রাজবাড়ী জেলায় ৮৫ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে পদ্মা নদী। সব জায়গায় তো নদীর তীর সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় বা প্রয়োজনও নাই। যেসব জায়গা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সেসব জায়গা চিহ্নিত করে বড় একটা প্রকল্পের প্রস্তাব করেছি। সেই প্রকল্পে পাংশা ও কালুখালী উপজেলায় ১১ কিলোমিটার, সদর উপজেলার চরসিলিমপুর থেকে মহাদেবপুর ৪ কিলোমিটার, গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তর মোড় থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ ধরা আছে। ইতিমধ্যে বোর্ডে একটি নোট শিট পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত দুই বছরে এই জেলায় নদীভাঙনের কারণে ৮৬০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে টিন, নগদ অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, রাজবাড়ী জেলা প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়ে। এ বছর গোদার বাজার এলাকায় তিনটি পয়েন্টে ভাঙনের কারণে নদী শহর রক্ষা বাঁধের কাছে চলে এসেছে। এই তিনটি পয়েন্টে বিশেষজ্ঞ দিয়ে তদন্ত করে সেখানে যেন উপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় সেজন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি লিখেছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত