Ajker Patrika

‘টপ সয়েল’ যাচ্ছে ইটভাটায়

নোয়াখালী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৩৪
‘টপ সয়েল’ যাচ্ছে ইটভাটায়

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মাটিখেকোদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের কারণে ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়কগুলো। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ মদদে ফসলি জমির উপরের অংশ (টপ সয়েল) চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে এর জন্য দায়ী করেছেন এলাকাবাসী।

এদিকে মাটিখেকোদের গাড়ির ধুলাবালির কারণে নারী, পুরুষ, শিশুরা প্রতিদিন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাতের বেলায় এসব গাড়ির বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মানুষের।

সরেজমিনে জানা গেছে, সরকারি খাসজমি, নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলের চাষযোগ্য খাসজমি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমির টপ সয়েল ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়ায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কেউ বাধা দিলেই মাটি ও বালুখেকোরা হয়রানির ভয় দেখান। ফলে সাধারণ মানুষও এখন প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ দিয়েও হয়রানি করা হয়। এ নিয়ে চরহাজারীর প্রতিবাদী যুবলীগকর্মী রিয়াদকে দলীয় ক্যাডারদের ইঙ্গিতে পুলিশি হুমকি ও হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাটি বহনকারী ট্রাক ও ট্রাক্টরচালকেরা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যদের টাকা দিয়ে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটির কারবার করা হচ্ছে।

সিরাজপুরের কাইয়ুমসহ একাধিক মাটি ব্যবসায়ী জানান, প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ না করে এ ব্যবসা করার সাধ্য কারও নাই।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চরপার্বতীর মৌলভীবাজার এলাকার মাটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে স্থানীয় আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে। চরহাজারীর মাটির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আশরাফ আলী, মো. মিজান, মিলন কোম্পানি, সবুজ কোম্পানি, জন্টু হাজারী। তবে তাঁদের মূল নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা, এ বক্তব্য সদ্য নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগের। এখানে মাটিখেকো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক আশরাফ আলী চরহাজারী ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগের আশীর্বাদপুষ্ট লোক বলে অনেকের অভিযোগ।

মুছাপুর ইউনিয়নের উত্তর মুছাপুর সরকারি খাস জায়গা থেকে ২৮টি ট্রাক ও ৩টি ভেকু দিয়ে চাষ উপযোগী সরকারি খাসজমির মাটি লোপাট হচ্ছে। এতে ওই এলাকার সব রাস্তা ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ভিডিওসহ জানানোর পরও স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে ওই এলাকাবাসী। শান্তিরহাটের পূর্বদিকে মাতালিয়া ঘাট রোড এলাকায় নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চল ও চাষাবাদ উপযোগী শত শত একর খাসজমি থেকে ৫-৭ ফুট গভীর করে মাটি লুটে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে।

চরহাজারী ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি বেশ কয়েকবার মাটির গাড়ি আটক ও মাটি কাটা বন্ধ করেছি। একাধিকবার এসব গাড়ি ও চাবি আটক করেছি। কিছু সময় বন্ধ থাকার পর আবার এসব অবৈধ কাজ চলে। বিশেষ করে ছুটির দিনে মাটিখেকোরা বেপরোয়া হয়ে যায়। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে। কেন যেন পেরে উঠছি না।’

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, মাটি, বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত