Ajker Patrika

বাদল সরকার

সম্পাদকীয়
বাদল সরকার

বাদল সরকার একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি নাট্যব্যক্তিত্ব। তিনি থার্ড থিয়েটার নামে ভিন্ন এক নাট্যধারার প্রবক্তা ছিলেন। নাটককে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে দেখতেন। নাটক শুধু নির্মল আনন্দ আর বিনোদনের জন্য নয়। সমাজের মানুষের যাপিত জীবনের লড়াই-সংগ্রামকে নাটকে তুলে ধরার জন্য তিনি আজীবন কাজ করেছেন।

মূলত তাঁর রাজনৈতিক ভাবনার উদয় ঘটে নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। তিনিই প্রথম মঞ্চের বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যে নাটককে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। বাদল সরকারের জন্ম কলকাতায়, ১৯২৫ সালের ২৫ জুলাই। শৈশবে নাম ছিল সুধীন্দ্রনাথ সরকার।

কিন্তু পরবর্তীকালে পরিচিত হয়েছিলেন বাদল সরকার নামে। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ট্রান্সফার হয়ে ভর্তি হন শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। এখান থেকে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। পেশা হিসেবে কাজ শুরু করেন নগর-পরিকল্পনাবিদ হিসেবে। কাজ করেছেন ভারত, ইংল্যান্ড ও নাইজেরিয়ায়। আবার সাহিত্য ও নাটকের প্রতি আগ্রহের জন্য বৃদ্ধ বয়সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘কম্পারেটিভ লিটারেচার’ বিষয়ে এমএ পাস করেন ১৯৯২ সালে।

পাঁচের দশকের গোড়া থেকেই তাঁর নাট্যজীবন শুরু হয়। প্রথম জীবনে শৌখিন থিয়েটারে অভিনয়ের পর ‘শতাব্দী’ নামে নতুন একটি নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে প্রথম নাটক ‘সলিউশন এক্স’ লেখেন। এরপর তিনি আরও কয়েকটি মৌলিক নাটক লিখলেও তাঁকে ষাটের দশকের মাঝামাঝি সর্বভারতীয় খ্যাতি এনে দেয় ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ নাটকটি। এ নাটকটি বহুরূপী পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর তাঁর রচিত ‘বাকী ইতিহাস’, ‘প্রলাপ’, ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘শেষ নাই’ সব কটিই শম্ভু মিত্রের নেতৃত্বাধীন বহুরূপী গোষ্ঠীর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয়।

নিজের নাট্যদল শতাব্দী গঠনের পর তিনি একেবারে কলকাতার কার্জন পার্কে খোলা আকাশের নিচে নাটক দেখানো শুরু করেন। তাঁর প্রবর্তিত ‘থার্ড থিয়েটার’ জনপ্রিয় হলেও, তিনি শেষ দুই দশক প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন।

ব্যতিক্রমী এ নাট্যব্যক্তিত্ব ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের ১৩ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত