Ajker Patrika

আগে টিকা পেয়ে খুশি তাঁরা

শাহীন রহমান, পাবনা
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৪৪
আগে টিকা পেয়ে খুশি তাঁরা

ফকিরহাটের ভূমিহীন হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনাভাইরাসের টিকা পেয়েছেন। বিনা মূল্যে জমি ও ঘর পাওয়ার পর টিকা পেয়ে খুশি তাঁরা। সরকারের এ উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উপজেলার তিনটি বঙ্গবন্ধু পল্লীর বাসিন্দারা।

শ্রমজীবী হিসেবে জনসমাগমে কাজ করতে হয় বলে তাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁদের টিকা দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। এখন ত্রাণের বদলে কাজ করে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চায় আশ্রয় প্রকল্পের বাসিন্দারা।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ফকিরহাটে ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র মানুষের স্থায়ী বসবাসের জন্য তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়। উপজেলার বৈলতলী গ্রামে বঙ্গবন্ধু পল্লী-১, লখপুর ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু পল্লী-২ ও শুভদিয়া ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু পল্লী-৩ নামের আশ্রয়কেন্দ্র তিনটিতে ১১৮টি দরিদ্র পরিবার বাস করে। ভূমিহীন এসব পরিবার এবার গণটিকার আওতায় এসেছে।

বঙ্গবন্ধু পল্লী-১-এর বাসিন্দা সাথী বেগম, শহীদুল মীর, রাজিয়া বেগম, জালাল শেখ, শারমিন, আশুরা বেগমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, তাঁদের মতো গরিব মানুষেরা বিনা খরচে পাকা ঘর, জমির দলিল এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এবার টিকা পেয়েছেন। নিজেদের আর অবহেলিত মনে করেন না তাঁরা। সবার যা প্রাপ্য, তাঁরাও তা পেয়েছেন।

ওই সব আরও বাসিন্দা বলেন, তাঁরা আর ত্রাণ চান না, কাজ করে সম্মানের সঙ্গে বাঁচবেন। সন্তানদের কাজে না পাঠিয়ে এখন থেকে স্কুলে পাঠাবেন।

রাজিয়া বেগম বলেন, তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাড়ি, জামাকাপড় ফেরি করে বিক্রি করেন। টিকা দেওয়া না থাকায় আগে অনেক বাড়িতে কাপড় নিয়ে ঢুকতে দিত না। টিকা দেওয়ার পর এখন আর সমস্যা হয় না।

জালাল শেখ বলেন, সারা দিন ভ্যান চালান। কখনো মালামাল, কখনো যাত্রী, আবার কখনো রোগী পরিবহন করেন। টিকা দিয়ে এখন নিজেকে সুরক্ষিত মনে করছেন তিনি।

পিলজঙ্গ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মোড়ল জানান, তিনটি বঙ্গবন্ধু পল্লীতে বসবাসকারী বৃদ্ধ, নারী ও অসুস্থ মানুষদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। দিনমজুর, গৃহকর্মী, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিক ইত্যাদি পেশায় থাকার কারণে একদিকে যেমন তাঁরা করোনার ঝুঁকিতে ছিলেন, অন্যদিকে টিকা না দেওয়ার কারণে কাজ হারানোর আশঙ্কাও ছিল। টিকা নেওয়ার পর তাঁদের সে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কেটে গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, বঙ্গবন্ধু পল্লীর টিকা পাওয়ার যোগ্য প্রায় ৬০ ভাগ বাসিন্দা প্রথম ডোজ টিকা কার্যক্রমের আওতায় এসেছেন। বাকিদেরও বিশেষ ক্যাম্পের মাধ্যমে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে টিকা মানেই তাঁর আর করোনা হবে না—এমনটি না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা বেগম বলেন, শ্রমজীবী স্বল্প আয়ের মানুষদের কাজের প্রয়োজনে অন্যের সংস্পর্শে আসতে হতে পারে। তাই তাঁদের টিকার আওতায় নিয়ে আসাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের আত্মনির্ভরশীল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, বঙ্গবন্ধু পল্লীর সঙ্গে মহাসড়কগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, খাবার পানির জন্য গভীর নলকূপ, ঘরের পাশে সবজিখেত বা গবাদিপশু পালনের জন্য একখণ্ড জমির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্বপন দাশ আরও বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে তাঁদের করুণার চোখে দেখলে হবে না। বরং অন্যদের মতো সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাঁদের সক্ষম করে তুলতে হবে। সে জন্যই তাঁদের টিকা দেওয়া, বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত