Ajker Patrika

বাংলা গানের প্রেমে বিদেশি

রিমন রহমান, রাজশাহী
বাংলা গানের প্রেমে বিদেশি

‘আমার মন কেমন করে/ কে জানে, কে জানে’ গানটি ভারী গলায় গাইলেন ৬৯ বছর বয়সী আমেরিকান নাগরিক জন থর্প। শেষ করে আবার একই গান গাইলেন ইংরেজিতে। অনুবাদ করা এই গানের সুর, তাল—সবই বাংলা গানের মতো। শুধু ভাষাটাই আলাদা। একটি-দুটি নয়, জন থর্প রবীন্দ্রনাথের শতাধিক গান ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন।

একই সুর ও তালে এসব গান তিনি গাইতে পারেন।জন থর্পের বাড়ি মার্কিন মুলুকে। সংগীতে মাস্টার্স করেছেন সে দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমেরিকার মেইন স্টেট থেকে প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন ১৯৮০ সালে। একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে দুই দেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের কাজে এসেছিলেন তিনি। সে কাজেই যান কুষ্টিয়ায়। সেখানে গিয়ে ‘আনন্দেরই সাগর থেকে এসেছে আজ বান’ গানটি প্রথমবার শোনেন। গানটি এত ভালো লাগে যে সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতে অনুবাদ করে ফেলেন। ঠিক রাখেন তাল ও সুর। সেই থেকে শুরু। কুষ্টিয়াতেই শিখতে শুরু করেন বাংলা ভাষা।

জন থর্প ১৯৯৫ সালে আমেরিকায় ফিরে যান। তবে সেই এনজিওর কাজ নিয়ে তিনি ২০১১ সালের শেষের দিকে আবার বাংলাদেশে আসেন। পরের বছর রাজশাহী নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় ‘বরেন্দ্র মিউজিক্যাল আর্ট সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

সেখানে পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন তিনি। বাংলা ও ইংরেজিতে চর্চা হতো রবীন্দ্রসংগীতের। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদ, স্বরলিপিসহ রবীন্দ্রনাথের ১০২টি গান নিয়ে শিক্ষাকল্যাণ ট্রাস্ট জন থর্পের একটি বই প্রকাশ করে। বরেন্দ্র মিউজিক্যাল আর্ট সেন্টার তাতে সহযোগিতা করে। বইয়ের নাম ‘আনন্দেরই সাগর থেকে...ফ্রম আ জুবিলান্ট সি...’।

জন থর্পের স্ত্রী জেন থর্প রাজশাহীতে বস্তিবাসী শিশুদের জন্য একটি স্কুল করেছিলেন। তবে ২০১৮ সালের দিকে তাঁরা নিজ দেশে ফিরে যান। চলতি মাসের শুরুতে জন থর্প রাজশাহী এসেছেন। সব মিলিয়ে থাকবেন এক মাস। তাঁর সম্মানে শনিবার রাজশাহী নগরীর একটি হোটেলে ‘ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজক ছিল ‘ফাউন্টেইন মিউজিক্যাল আর্ট সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল সজল জন থর্পেরই ছাত্র ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে জন থর্প রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু গান বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় গেয়ে শোনান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। জন থর্প অনুষ্ঠানে নিজে কি-বোর্ড বাজিয়ে তাঁদের নিয়েও গান গেয়েছেন। তিনি রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও নজরুল ও লালনের গানের মূলভাব, ছন্দ, তাল ও লয় মিল রেখে ইংরেজিতে গাইতে পারেন।

জন থর্প বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় “আনন্দেরই সাগর থেকে এসেছে আজ বান’’ গানটি শোনার পর ভীষণ ভালো লাগে। কারণ, পালতোলা নৌকা চলে আমার দেশেও। আমার পরিবার থাকে সমুদ্রের পাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে এই গানটা আমি অনুবাদ করলাম। খেয়াল রাখলাম, সুর ও তাল যেন ঠিক থাকে। সেই আমলে ক্যাসেট টেপ ব্যবহার করতাম। সেখান থেকে অনেক রবীন্দ্রসংগীত শুনলাম। যেগুলো পছন্দ, সেগুলো আমি অনুবাদ করলাম।’

জন থর্প আরও বলেন, ‘বাংলা ভাষা তো খুব পবিত্র জিনিস। আমেরিকায় কেউ রবীন্দ্রনাথের গান শোনেনি। যদি তাঁর গান শোনে বাংলায়, তাহলে বুঝবেই না কিছু। তাই আগে বাংলা শিখলাম। তারপর শুনতে শুনতে কয়েকটা গান শিখলাম। এরপর সুর ও তাল মিল রেখে ইংরেজিতে গাইলাম, যেন আমার দেশের লোক সেই গানের সুর এবং কথা একটু বুঝতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবার পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

পাবনায় বজ্রপাতে ফেটে চিরে গেল মেহগনিগাছ

ঈদুল আজহার ছুটি ১০ দিন

এনসিপি নেতা সারওয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি: শহিদুল আলম

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত