Ajker Patrika

শেষ সময়ের আগে

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৩ জুন ২০২২, ০৯: ১৬
শেষ সময়ের আগে

একটু একটু করে তখন অচল হয়ে যাচ্ছেন শম্ভু মিত্র। এত দিন যে আড্ডা হতো, সেই আড্ডায় ধীরে ধীরে কমতে লাগল মানুষ। শম্ভু মিত্র কখনো হাসতে হাসতে বলতেন, ‘এইটা বেশ ইন্টারেস্টিং।’

বলা তো হলো অচল, আসলে সে কথা দিয়ে কিন্তু পঙ্গুত্ব বা অথর্বতা বোঝানো হচ্ছে না। চোখ খারাপ হয়ে গিয়েছিল খুব। তাই বাইরে কোথাও যেতে চাইতেন না। আকাশে হয়তো কড়া রোদ। তিনি বলতেন, ‘কী রে, আকাশটা মেঘলা নাকি রে?’

তারপর বেশ আমোদ করে বলতেন, ‘কী ফার্স্ট ক্লাস বল তো! সব সময়ই কেমন আকাশে মেঘ দেখতে পাই! অন্ধ হওয়ার কত সুবিধে।’

কুঁচকির হাড়ে সামান্য চিড় ধরায় হাঁটার ধরনটা একটু বদলে গিয়েছিল। যাঁদের সঙ্গে শম্ভু মিত্র কথা বলতে ভালো বাসতেন, তাঁরা তত দিনে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। শাঁওলী মিত্র অনেককেই আসতে অনুরোধ করেছেন, কিন্তু তাঁদের কেউ কেউ আর আসার সময় বের করতে পারেননি। পছন্দের কেউ যদি চলে আসতেন, তাহলে কী যে খুশি হতেন শম্ভু মিত্র! শাঁওলী বাড়িতে ফিরলেই কী কথা হলো, তার সবটাই বলতেন।

কিন্তু মাথাটা ছিল টনটনে। স্বচ্ছ ছিল ভাবনার জগৎ। একবার শাঁওলীকে বলছেন, ‘একটা লেখা লিখতে হবে। তোকে বা আর কাউকে। রাজনীতির সঙ্গে সমাজে বাঁচবার জন্য যে সততার প্রয়োজন—তার সম্পর্কটা কী? এটা তো কাউকে ভাবতেই হবে!’

কিংবা ‘বুদ্ধকে নিয়ে আরও পড়াশোনা করবার ছিল। বুদ্ধ মানুষটা…কীভাবে…সময়ই হলো না!’ ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করছেন ‘তুতেনখামেন’ নিয়ে!

কিন্তু আতশ কাচ দিয়েও যখন আর পড়তে পারছিলেন না, তখন তাঁর বাঁচার ইচ্ছে মরে গেল। বলতেন, ‘আর কদ্দিন মাগো? আর পারি না! তুই ভাব–বুড়োটা ৮২ বচ্ছর বেঁচে আছে। পড়তে পারে না, খবর রাখতে পারে না!’

মৃত্যুটা কারও হাতে নেই শুনে বললেন, ‘দূর ওসব বোগাস কথা! একটু পটাশিয়াম সায়ানাইড এনে দাও দিকি!’

শাঁওলী বলল, ‘তোমার কপালে মৃত্যু না লেখা থাকলে দেখবে পটাশিয়াম সায়ানাইডেও ভেজাল!’ শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন শম্ভু মিত্র!

সূত্র: শাঁওলী মিত্র, তর্পণ, পৃষ্ঠা ৮১-৮৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত