Ajker Patrika

সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড

অরুণ নন্দী
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৫০
সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড

সাঁতার সব সময়ই কাটতেন অরুণ নন্দী। চাঁদপুরের মানুষ, বাজারের পাশে খালে অথই পানি। সময় পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে জেলা চ্যাম্পিয়ন হন তিনবার। দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় পান দ্বিতীয় স্থান।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হেঁটে হেঁটেই চলে গেলেন ফেনী সীমান্তে। সেখান থেকে একটানা তিন দিন হেঁটে আগরতলা। সেখানে খুঁজতে থাকেন সুইমিং ক্লাব। পছন্দ হয় বউবাজার ব্যায়াম সমিতি।

সে সময় তিনি খবর পান, যুক্তরাষ্ট্রের বি সি মুর ১৯৩২ সালে ৮৯ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট অবিরাম সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। এই রেকর্ড ভাঙতে হবে।

সে সময় কলকাতায় মুজিবনগর সরকারের ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলীর সঙ্গে কথা বলে অবিরাম সাঁতারের জন্য সময় নির্ধারিত হয় ৮ অক্টোবর। স্থান কলকাতার কলেজ স্কয়ার ট্যাংক।

পোস্টারে ছেয়ে যায় কলকাতার দেয়ালগুলো। সাঁতার শুরুর আগে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। যাঁরা অরুণ নন্দীর লাইফ সেভার ছিলেন, তাঁরা সবাই ভারতের জাতীয় দলের সাঁতারু।

পানির মধ্যে ভেসে চা, দুধ, পানি খাওয়া হচ্ছিল। এ সময় প্রচণ্ড বমি পায়। মোট ১৪ বার বমি করেন তিনি। বমির সঙ্গে রক্ত। ৯ অক্টোবর বমি কমে আসে। ১০ অক্টোবর পায়ে ক্রাম ধরে। কোচ আর ডাক্তার বলেন ক্রাম চলে যাবে। বুকে আর হাতে ভীষণ ব্যথা হতে থাকে। তারপরও অবিরাম সাঁতার কেটে যেতে থাকেন। টানা তিন দিন না ঘুমানোয় প্রচণ্ড ঘুম পায়। কাঁদতে থাকেন অরুণ। কিন্তু সবার উৎসাহে পানি থেকে উঠলেন না। এরই মধ্যে দিলীপ দের ৮১ ঘণ্টার এশিয়ান রেকর্ড ভঙ্গ করে বি সি মুরের রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেন। একটানা ৯০ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার কাটার পর তাঁকে ডাঙায় তুলে আনা হয়। বিশ্ব রেকর্ড করে যুদ্ধরত বাংলাদেশকে পৃথিবীর সঙ্গে ভিন্নভাবে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। তাঁকে বাহ্বা দিতে এসেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, সত্যজিৎ রায়, উত্তমকুমার প্রমুখ।

সূত্র: দুলাল মাহমুদ, খেলার মাঠে মুক্তিযুদ্ধ, পৃষ্ঠা ৫২৪-৫২৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত