Ajker Patrika

খানাখন্দ-ধুলায় পথ চলা দায়

শামিমুজ্জামান, খুলনা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৫
খানাখন্দ-ধুলায় পথ চলা দায়

এমনিতেই খানাখন্দে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক সড়ক। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত ধুলাবালু। এতে একদিকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, আবার রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। ধুলাবালুতে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জিসহ নানা রোগ।

খুলনা মহানগরীর আহসান আহমেদ রোড, হাজী মুহসীন রোডের সংযোগস্থল থেকে কাস্টমঘাট, শেরেবাংলা রোড, সামসুর রহমান রোডসহ বিভিন্ন সড়কে চলছে সংস্কারকাজ। এ ছাড়া খুলনা শিপইয়ার্ড রোড, আবদুল বারি সড়ক, সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, বয়রা মেইন, এমএ বারী সড়ক, রায়েল মহল রোড খানাখন্দে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। এসব সড়ক দিয়ে বাস-ট্রাক চলাচলের সময় ধুলাবালুর কারণে পথচারীদের সমস্যা হয়। সড়কে দুই পাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসবাসকারীরাও পড়ছেন বিপাকে।

এ ব্যাপারে খুলনা শিপইয়ার্ড রোডের মুদিব্যবসায়ী মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, খানাখন্দ সড়কের কারণে পথ চলাচলে সমস্যা হয়। আবার অতিরিক্ত ধুলার কারণে দোকান খুলে বসা দায় হয়ে পড়েছে। সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়কে ময়ূরী ব্রিজসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা তসলিম হোসেন বলেন, রাস্তা ভাঙা, দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে এলেও সংস্কার হয়নি। বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচলে অতিরিক্ত ধুলার কারণে এ এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে।

নগরীর ১ নম্বর কাস্টমঘাটের বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, কয়েক মাস ধরে চলছে এ রাস্তার উন্নয়ন। এখনো শেষ হয়নি। বর্ষার সময় ধুলাবালি কাদায় পরিণত হতো। মৌসুম পরিবর্তনের ফলে কাদার পরিবর্তে এখন তা ধুলাবালি। একটু বাতাস হলে রাস্তায় বের হওয়া যায় না। তা ছাড়া জানালা খোলার উপায় নেই।

ধুলাবালুর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মো. নাজমুল কবির এ প্রতিবেদককে জানান, ধুলাবালুর কারণে শ্বাসনালি, অ্যাজমা, সিওপিডি, ব্রংকাইটিস ও ফুসফুসে ক্যানসারসহ চর্ম রোগ হতে পারে। ধুলাবালুর মধ্যে অনেক ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, যা সরাসরি ফুসফুসে যায় না। এটা শ্বাসনালিতে জমে পরে ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং পরে স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। শ্বাসনালির গায়ে যে কোষগুলো থাকে, সেগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হন। তবে যাঁরা জন্মগতভাবে শ্বাসকষ্টের রোগী, তাঁদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে ধুলাবালু।

এর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বাতাসে যাতে ধুলাবালুর উড়তে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাইরে বের হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করে হাত, মুখ ও নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্ষার সময় বাতাসে ধুলাবালুর পরিমাণ কম থাকে। শুষ্ক মৌসুম এলে এর পরিমাণ বেড়ে যায়। বাণিজ্যিক এলাকায় দূষণের মাত্রা একটু বেশি। বাতাসে দুই ধরনের উপাদান পাওয়া গেছে। একটি ভারী ও অপরটি হালকা। হালকা ধুলাবালু সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে তিনি জানিয়েছেন। এটি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। বালু পরিবহনে কোনো নিয়ম ও কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কেউ কোনো নিয়ম মানছেন না।

প্রতিকারের উপায় হিসেবে তিনি বলেছেন, বালু পরিবহনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নির্মাণাধীন বাড়িগুলো চারপাশ ঢেকে কাজ করা উচিত। এ ব্যাপারে খুলনা নিরাপদ সড়ক চাই সম্প্রতি ধুলামুক্ত নগরী চেয়ে প্রতিকারের জন্য কেসিসি মেয়র বরাবর দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, খুলনা মহানগরীসহ পার্শ্ববর্তী অধিকাংশ সড়ক বেহাল, চলাচলের অনুপযোগী। আবার সংস্কারের নামে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। অনেক সড়ক খানাখন্দে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধুলাবালুর কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তিনি রাস্তাগুলো সংস্কারের দাবি জানানোর পাশাপাশি রাস্তাগুলো ধুলামুক্ত করতে পানি ছিটানোর দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত