Ajker Patrika

ঘটনাচক্রে শিক্ষক তবুও আমি গর্বিত

মো. আবু নাসের খান
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২১, ২০: ৩৮
ঘটনাচক্রে শিক্ষক  তবুও আমি গর্বিত

ঘটনাচক্রে শিক্ষক! শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে তুচ্ছতাচ্ছিল্য থাকলেও আমি গর্বিত। সাধুবাদ শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে। অনেক দেরি হয়ে গেছে, তবুও শিক্ষামন্ত্রীর বাস্তবতা নির্ভর অনুধাবন, সাধুবাদ জানাই। আজ আমি শিক্ষক, নাকি চাকরিজীবী দুটোর তফাৎ নিয়ে ভাবি না। কিন্তু ভাবা দরকার ছিল, নিজের ও জাতির ভালো চিন্তা করে। শিক্ষক হলেতো প্রশিক্ষণ গ্রহণ, পাঠদান এবং শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে ভাবতাম। আজ এর পাশে মর্যাদা ও বেতন নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্ত পেশা শিক্ষকতায় যুক্ত থেকে বেতন নিয়ে ভাবাটা আমার লোভের বহিঃপ্রকাশ।

রাজনীতি, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সাংবাদিক পেশাজীবীরা হয়তো লোভী নয়, সংগত কারণে সম্মান নিয়ে ভাবছে। আজ আমার অসংগত চিন্তা ও ঘটনাচক্র নিয়ে কিছু বলছি; আলোচনাটা শিক্ষকতা নিয়ে। তবুও প্রারম্ভিক আলোচনায় উঠে আসে ছাত্রত্ব। ছাত্র হিসেবে একেবারে খারাপ ছিলাম না। প্রাথমিক ডিঙিয়ে নিম্ন মাধ্যমিক পেরোনোর পরে পরিবারের উপদেশ বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে হলো। তথ্য প্রযুক্তির সুবিধাহীন সময়ে অগ্রজদের উপদেশ পথ দেখিয়েছে। অগ্রজদের দেখানো পথেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হই।

পরিবারের হাল ধরার বড্ড তাড়াহুড়োয় রসায়ন বিষয়ে সম্মানটা (অনার্স) শেষ না করেই ২০০৩ সালে বিএটা শেষ করলাম। ২০০৪ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। বাবার আদেশ ‘দরখাস্ত করো’। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় দু’বছর লেগে যায়। কোনো প্রকার এদিক-সেদিক ছাড়াই প্রাথমিকে চাকরিটা হয়ে গেল। সংসারের বড় ছেলে বলে, চাকরি এটাই করতে হবে। বাড়ি-ঘরও দেখা হবে, চাকরিও করা হবে। কোম্পানি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করে ফেললাম। কারণ আজও বাবার অবাধ্য হতে পারিনি। এভাবেই ঘটনাচক্রে আমি শিক্ষক।

সরকারের যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েই সেটা হলো। তৎকালীন ১৭তম গ্রেডে যোগদানের পর চাকরির ১৫ বছর পরে ১৩ তম গ্রেডে উন্নীত হয়েছি। একটা টাইমস্কেল নিয়ে দ্বাদশ গ্রেডে অবস্থান। ২০১৫ সালের পে-স্কেল কেড়ে নিল ২টি টাইমস্কেল। অনেককে চলে যেতে দেখেছি একই পদে চাকরি করে, নেই কোনো পদোন্নতি। প্রধান শিক্ষকেরা আজও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। যদিও ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণা করেছিলেন, তাও আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়।

বহু ক্যাডারের ভিড়ে ক্যাডারহীন শিক্ষা কর্মকর্তা শ্রীহীন। শ্রীহীনের অধস্তন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী শিক্ষক; পরিবার দেখাশোনার পাশাপাশি বাড়তি রোজগার, সম্মানের আশায় আসলেও ভালোবেসে আসার কারণ কী হতে পারে? ভালোবেসে পেশায় আগমনের হেতু কী? অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষকের চেক বন্ধক রেখে লোন নেওয়া!

শিক্ষামন্ত্রী আপনি যথার্থই বলেছেন, বেশির ভাগ শিক্ষকই ঘটনাচক্রে শিক্ষক। ঘটনাচক্রে শিক্ষক হলেও এ পেশায় আসতে দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। পেশায় দীর্ঘ পথচলার সঙ্গী শিক্ষক ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েছে। আজ ভালোবেসে মনে প্রাণে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে যারপর নেই চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে। আপনারাই যদি আমাদের তাচ্ছিল্য করে বলেন, তাহলে অন্যরা কীভাবে আমাদের মূল্যায়ন করবে একবার ভাবুন। তবে আর যেন কেউ ঘটনাচক্রে এই পেশায় না আসে সে ব্যবস্থা করলেইতো ভালোবেসে বা স্বপ্ন বুনে এ পেশায় আগমন ঘটবে। উপলব্ধিই যখন করেছেন তখন এর শেকড়ে গিয়ে সমাধানের ব্যবস্থা আপনারাই করবেন। সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে যবনিকাপাত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ মিলল মেঘনায়, শোকাহত আজকের পত্রিকা

‘সামনে চমকপ্রদ বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে, অনেক বিষয় আমি জানি’

কিশোরগঞ্জে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ১

‘মব’ সৃষ্টি করে ৩ কিশোরকে সেতুর সঙ্গে বেঁধে রাতভর পিটুনি, নিহত ১

সনদ জালিয়াতি: ব্যাংকের চাকরি যাওয়া জাহাঙ্গীরের স্কুল সভাপতির পদও গেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত