Ajker Patrika

তাঁর কথা নয়, তাঁকে শোনা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ১১: ৪৭
তাঁর কথা নয়, তাঁকে শোনা

রোমাঁ রোলাঁ যে বাড়িতে থাকেন, তার একদিকে হ্রদ, অন্যদিকে পর্বত। লেজার পর্বতমালার নিচে জেনেভা হ্রদ, সেখানে গ্রামের পর গ্রাম। তারই এক গ্রামে তখন থাকতেন রোমাঁ রোলাঁ। অন্নদাশঙ্কর রায় সেখানে গেলেন মণীন্দ্রলাল বসুর সঙ্গে। রোলাঁ ইংরেজি বোঝেন না, অন্নদাশঙ্কর বোঝেন না ফরাসি। তাই অনুবাদে বুঝে নিতে হলো দুজন দুজনকে।

বাইরের দিক থেকে রোলাঁর কুটিরটিকে নিঃস্ব মনে হয়। দেখে মনে হয় না, এত বড় একজন সাহিত্যিক এ রকম জরাজীর্ণ এক বাড়িতে থাকেন। কিন্তু ভেতরে গেলেই বাড়িটির অন্য চেহারা। বসার ঘরে বই ভরা শেলফ, বই-ছড়ানো টেবিল, ফুলের সাজি, ফুলগাছের টব, দেয়ালে দেয়ালে ছবি। অন্নদাশঙ্করের হঠাৎ মনে হলো, রোমাঁ রোলাঁর ঘরের অন্তর-বাহির তাঁর নিজের অন্তর-বাহিরের প্রতিরূপক।

সাদাসিধে পোশাক, নীলকৃষ্ণ স্যুট, টাই নেই, পাদরিসুলভ কলার। এক হাতে দারিদ্র্যের সঙ্গে, অন্য হাতে অসত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে এসেছেন জীবনভর।

রোলাঁ মণীন্দ্রলাল বসুর ‘পদ্মরাগ’-এর প্রশংসা করলেন। শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’রও প্রশংসা করলেন। শ্রীকান্তের ইতালিয়ান অনুবাদ হয়েছে, ফরাসি অনুবাদ হচ্ছে তখন। যুদ্ধের কথা উঠতেই শান্ত মানুষটি উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। উত্তেজিত শব্দাবলির সঙ্গে ডান হাতের প্রবল ওঠা-নামা দেখে অন্নদাশঙ্করের মনে হচ্ছিল, সামনে বুঝি বসে আছেন কিং লিয়র। বললেন, ‘নেশনরা যত দিন না ঠেকে শিখছে যে এক নেশনের ক্ষতিতে সব নেশনের ক্ষতি, যুদ্ধ তত দিন থাকবেই। মানুষের যুদ্ধের দেখি অবসান হলো না। আলো জ্বালান, আলো জ্বালান, দিকে দিকে আলো জ্বালিয়ে তুলুন। যুদ্ধের প্রতিষেধক—শিক্ষা।’

শিক্ষা নিয়ে কথা উঠতেই বললেন, ‘আর্টিস্ট কেবল চিরকালের সৌন্দর্য সৃষ্টি নিয়েই থাকবে না, স্বকালের সমস্যা-সমাধানেও সাহায্য করবে। মানুষের মধ্যে একাধিক আত্মা আছে। কোনোটা করবে আর্টের কাজ, কোনোটা করবে সমাজের সেবা।’

অন্নদাশঙ্কর বলেছেন, ‘আমরা তো তাঁর কথা শুনতে যাইনি, আমরা গিয়েছিলুম তাঁকে শুনতে ও তাঁকে দেখতে।’ তাঁকে শুনতে—কথাটা দারুণ!

সূত্র: অন্নদাশঙ্কর রায়, পথে প্রবাসে, পৃষ্ঠা ২৮-৩২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত