Ajker Patrika

ডিসেম্বর মাসের ভাবনা

আব্দুর রাজ্জাক
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪: ৪২
ডিসেম্বর মাসের ভাবনা

ডিসেম্বর মাস এলেই সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা রাশিয়ার কথা মনে পড়ে যায়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই জাতিসংঘে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে অনেক আলোচনা চলছিল। পাকিস্তানি বাহিনী যখন পরাজয়ের দারপ্রান্তে, বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছেন, একের পর এক শহর থেকে হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করছেন, আমেরিকা ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পেরেছিল, এ দেশে তাদের আর রক্ষা হবে না। সেই সময় আমেরিকা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় জাতিসংঘে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা রাশিয়া যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভেটো দেয়, একে একে তিনবার। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

প্রসঙ্গটি তুললাম এ কারণে যে এই ডিসেম্বর মাসেই জাতিসংঘে চলছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী একের পর এক ধ্বংস করে দিচ্ছে গাজার সব অবকাঠামো। নির্বিচারে হত্যা করেছে ১৫ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণকে, যার মধ্যে আছে পাঁচ হাজারের বেশি শিশু। আহত হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ ফিলিস্তিনি জনগণ। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে গাজা, অনাহারে আছে লাখো ফিলিস্তিনি। চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, বিশেষ করে হাসপাতালগুলো একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে তৃষ্ণায় কাতরাচ্ছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। এসব মানবতার ছবি দেখেও ওয়াশিংটনের মন গলে না।  

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও আজকের ফিলিস্তিনের এই অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে একটা কথা প্রমাণিত হয়ে যায়, আমেরিকা সঠিক সময়ে, সঠিক বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে না। সত্যের পথে যারা যুদ্ধ করে, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে না। আমেরিকার সাধারণ মানুষ এটা উপলব্ধি করতে পারলেও দেশটির ক্ষমতাশীলরা সব সময়ই এটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের অদূরদর্শিতার কারণে।

পত্রিকায় দেখলাম এসব কারণে জো বাইডেনকে জনপ্রিয়তায় ছাড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প। আমেরিকার এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় বহু দেশে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। অবশেষে আমেরিকাও সেখান থেকে হাত গুটিয়ে চলে এসেছে, কয়েক দশকে এর বহু প্রমাণ আছে।

যে কথাটা এখন বলতে চাইছি—রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বর্তমানে দেশের কোনো মিডিয়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিস্তারিত কিছু দেখা যায় না। রাশিয়া প্রথম থেকেই বলে আসছিল, এটা তাদের নিউ নাৎসিজমের বিরুদ্ধে বিশেষ অপারেশন। এই বিশেষ অপারেশনের কারণে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে যেখানে রাশিয়ান ভাষাভাষী জনসংখ্যা বেশি, সেখানে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। ওই অঞ্চলের মানুষ রাশিয়াকে সমর্থন করেছে, গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একত্রকরণের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এ চারটি অঞ্চল হলো দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপরোঝিয়া ও খেরশন। এসব অঞ্চলের অবস্থা এখন স্বাভাবিক। আছে রাশিয়ার অধীনে। এখানে পুনর্নির্মাণ চলছে জীবনযাত্রার। 

রাশিয়া বিশেষ অপারেশন শুরু করার পর থেকে যে বিষয়টির প্রতি খেয়াল রেখেছিল—সাধারণ মানুষ যেন নিরাপদে থাকে, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রায় দুই বছরের যুদ্ধে মাত্র ৫ হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। রাশিয়া এত বড় পরাশক্তি, তবুও তারা তাদের সামর্থ্যের সামান্যটুকু ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেছে। এটাই হলো রাশিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে পার্থক্য। এসব কারণে ভ্লাদিমির পুতিন এখন মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সমাদৃত নেতা। গত সপ্তাহে সৌদি আরবে বিশেষ উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন তিনি।

কিছুদিন আগে শোনা গিয়েছিল ইউক্রেনীয় বাহিনীদের মধ্যেই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলা চলছে, ইউক্রেনের বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি ও জেনারেল ভিক্টর খারিনকোকে। ২০ হাজারের মতো সৈন্য ইতিমধ্যে পালিয়ে গেছে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এই যুদ্ধে ইউক্রেন ও ন্যাটো খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। তাই দৃষ্টি ফেরানোর জন্য আমেরিকাসহ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো গাজার ওপরে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই মরণঘাতী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনিদের দাবি ন্যায্য। একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে তাদের দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে যদি আমেরিকা দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে হয়তো আমেরিকার কিছুটা মুখ রক্ষা হবে। অন্যথায় বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যে পরিণতি হয়েছিল, সেটাই ঘটবে। এটাই ছিল ডিসেম্বর মাসের ভাবনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কথিত গোয়েন্দা এনায়েতকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা, প্রাডো গাড়িও দেন তাঁকে

জনপ্রশাসনের ১৭ কর্মকর্তাকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে বদলি

৯ পুলিশ পরিদর্শক বাধ্যতামূলক অবসরে

এনসিপির সেই নেত্রীকে দল থেকে অব্যাহতি

গণবিক্ষোভ আতঙ্কে মোদি সরকার, ১৯৭৪-পরবর্তী সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত