Ajker Patrika

কদর কমেছে শীতল পাটির

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ)
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২২, ১২: ৩৬
কদর কমেছে শীতল পাটির

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা চত্বর থেকে ঝাঐল ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। এ গ্রামের নারী-পুরুষেরা বাপ-দাদার আমল থেকেই শীতল পাটি তৈরির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে প্লাস্টিকের পাটির দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্পটি।

এদিকে কারিগরেরা বলছেন, শীতল পাটির দাম বাড়লেও ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না তাঁরা। তাঁদের দাবি এ পেশা টিকিয়ে রাখতে হলে আধুনিক মানের শীতল পাটি তৈরির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ গ্রামে অধিকাংশ নারীই এই পেশায় যুক্ত। শীতল পাটি বিক্রির আয়ে চলে তাঁদের সংসার। তাই শত কষ্টেও তাঁদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ২০০ পরিবারের গ্রামটির প্রায় ৮০০ নারী-পুরুষ।

সরেজমিন দেখা গেছে, পুরুষেরা জমি থেকে পাটি বোনার বেত কেটে আনছেন। পরে সেগুলো দা দিয়ে এক ধরনের বেতি সুতা বানিয়ে সেদ্ধ করে রোদে শুকানো হচ্ছে। এরপর তাতে নানা বাহারি রং দেওয়ার পর আবার রোদে শুকানো হয়। বেতি সুতা রোদে শুকানোর পর নারী (শ্রমিক) শিল্পীরা নিপুণ হাতে তৈরি করছেন শীতল পাটি। প্রকারভেদে বিক্রি হয় প্রায় ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সোহাগী, বুলবুলি, বেলী ও সীমা এই নারী কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের শীতল পাটির টাকায় চলে সংসার। তবে এ পাটির কদর কমে গেছে। শীতল পাটির দাম বাড়লেও বাড়েনি তাঁদের মজুরি।

পাটি আকারভেদে কারিগরেরা পান ১৬০ থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। তাঁদের একটি পাটি বুনতে দু-তিন দিন সময় লাগে। একটা পাটি বুনতে যে পরিশ্রম আর সময় লাগে, সে অনুযায়ী মজুরি পান না বলে জানান।

দুলাল চন্দ্র ভৌমিক (৬০) বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই এই পেশায় জড়িত। শীতল পাটি বুনিয়ে ও বিক্রি করেও তাঁর সংসার চলে। বর্তমানে প্লাস্টিকের পাটি ও মোটা পলিথিন কাগজসহ নানা প্লাস্টিক পণ্যের কারণে শীতল পাটির কদর কমে গেছে।

দুলাল চন্দ্র ভৌমিক আরও বলেন, সরকারিভাবে আধুনিক মানের শীতল পাটি তৈরির প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

দুর্গা রানী (৩৬) নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, পূর্বপুরুষেরা এ পেশাই ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি এ পেশায় জড়িত। শীতল পাটি আগের মতো ব্যবহার না হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে। শীতল পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল বেত। তার দাম বাজারে অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম। সে জন্য অনেকে পাটি বোনার বেতের খেত ভেঙে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন। এ জন্য বেতের প্রাপ্তিও কমে যাচ্ছে। এদিকে পরিশ্রম অনুযায়ী মূল্য না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বিকল্প পেশায় চলে যাচ্ছেন। এ শিল্প বাঁচাতে তাঁরা সরকারি সুবিধা চান।

জানতে চাইলে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, পাটি তৈরির শিল্পীদের ইতিমধ্যে দুবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শিল্পটি টিকিয়ে রাখার জন্য আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া কীভাবে শীতল পাটির বাজারজাত বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত