Ajker Patrika

বিশ্বাস মেলে কোথায়?

সম্পাদকীয়
বিশ্বাস মেলে কোথায়?

আদুরে ছোট বোনের বিয়ে। প্রবাসী ভাই থাকতে পারছেন না সেই বিয়েতে। হয়তো কাজ পড়েছে জরুরি। তাই আরেক প্রবাসীকে দিয়ে বোনের জন্য পাঠালেন গয়না, নতুন বর-বউয়ের জন্য দুটি নতুন মোবাইল ফোন সেট, আরও নানা দামি উপহার। বাহককে যাতায়াতের যাবতীয় খরচ দিয়ে দিলেন, যেন সময়মতো উপহার সামগ্রী পৌঁছে যায় বোনের কাছে।

বিমানবন্দরে উপহারের বাহকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বিয়ের কনের বাবা। দেখা মেলেনি উপহারের বাহকের। তাঁর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে যান শাওন নামের ওই অভিযুক্ত প্রতারক। বোনের অপেক্ষার পালা বেড়ে যায়। ভাইয়ের দেওয়া উপহার হাতে এল না সময়মতো। তাই ভেঙে গেল বিয়েটা!

ভুক্তভোগীর পরিবার রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় মামলা করে। দ্রুত কাজ শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। শাওনকে গ্রেপ্তারও করে ফেলে তারা। নাটকীয় এ ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে।

অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, শাস্তি হবে—সে খুব ভালো ব্যাপার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের তৎপরতার জন্য ধন্যবাদ পাবে। কিন্তু এই অপরাধ সংঘটিত হতে হতে যে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস বিলুপ্ত হয়ে গেল, সেই ব্যাপারটিকেও খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। খুব করে বিশ্বাস অর্জন করার কৌশল শাওন রপ্ত করতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো সেই বিশ্বাসটা ভেঙে দিতে পেরেছেন সহজে। বন্ধু ভেবে যিনি শাওনের কাছে কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত সম্পদ দিয়েছিলেন পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে, তিনি হয়তো আর কোনো দিন কারও ওপর ভরসা করতে পারবেন না। আর বিশ্বাস-ভরসার জায়গা যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখন মন থেকে মমতাও মুছে যায়।

এই ঘটনাটি একটি উদাহরণ মাত্র। প্রতিদিন এমন হাজারো বিশ্বাসঘাতকতার গল্প গড়ে উঠছে, সংঘটিত হচ্ছে অপরাধ। এসব যখন পত্রিকার পাতায় কিংবা টেলিভিশনের খবরে প্রকাশ পায়, সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই সতর্ক হয়ে যায়—অন্যকে ভরসা করতে মস্তিষ্ক সায় দেয় না। এরকম চলতে থাকলে পৃথিবীটা একসময় হয়ে পড়বে প্রেমহীন, কঠোর। মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদ্যতা থাকবে না। স্বার্থপর হয়ে উঠবে সবাই। এমন সমাজ কি কাম্য?

দিন দিন অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে অপরাধীর সংখ্যাও। কারণ, তাদের মধ্যে আদর্শের বীজ বপন করা হয়নি। সবার ঘর থেকে মনে হয় আদর্শলিপির বইটা কোথাও হারিয়ে গেছে। শৈশবে শেখা আদর্শ-কথাগুলো মেনে চললে সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভবত খুব কঠিন কিছু নয়।

জরিপ না করেও এ কথা বলা যায় যে, সব অপরাধের মূল কারণ অর্থলোভ। অর্থলোভে পড়েই যে শাওন ওই প্রবাসী ও তাঁর পরিবারকে ধোঁকা দিলেন, তা তো স্পষ্ট। অথচ তিনি লোভ না করলে সুন্দর একটা সম্পর্ক রাখতে পারতেন প্রবাসী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে। আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে তিনি বাড়ি-গাড়ি কিনতে পারলেও, পারতেন না সুন্দর কোনো সম্পর্ক কিনতে, তা তো নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জম্মু-কাশ্মীরে ধ্বংস করা হলো ৪৪ হাজার কেজি রসগোল্লা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত