Ajker Patrika

বিড়ম্বনা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১০: ১৩
বিড়ম্বনা

সালাহউদ্দীন আহমদ তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। তাঁর স্ত্রী হামিদা খানম ইডেন গার্লস কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল। কোনো নতুন শিক্ষক তাঁর সুবিধামতো থাকার জায়গা না পেলে সালাহউদ্দীন আহমদের বাড়িতে এসে থাকতেন।

রাজশাহীর এক ভালো পাড়ায় একটি নতুন দোতলা বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিলেন সালাহউদ্দীন আহমদ। বাড়িওয়ালার স্ত্রী ছিলেন হামিদা খানমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সে কারণেই এই বাড়ির নিচের তলাটি ভাড়া নিতে পেরেছিলেন সালাহউদ্দীন। সালাহউদ্দীন আহমদকে একবার খুব বিড়ম্বনায় ফেলেছিলেন মোহাম্মদ আবদুল বাকী নামে এক অধ্যাপক। তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ, পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়িয়েছেন। সেখান থেকে অবসর গ্রহণ করার পর ড. জুবেরীর আমন্ত্রণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আসেন। শুরুতে উঠেছিলেন উর্দুভাষী শিক্ষক সাইদউল্লার বাড়িতে। সালাহউদ্দীন আহমদ প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন জেনে বাকী সাহেব বলতে লাগলেন, হামিদা আর সালাহউদ্দীন দুজনেই তাঁর ছাত্র ছিলেন। অথচ সালাহউদ্দীন প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়ার পর তিনি সে কলেজে যোগ দিয়েছিলেন।

একদিন তিনি সালাহউদ্দীনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বললেন, ‘সালাহউদ্দীন, আমি ঠিক করেছি, এখন থেকে তোমার বাড়িতে থাকব।’

ভদ্রতার খাতিরে সালাহউদ্দীন বললেন, ‘এটা আপনার বাড়ি, স্যার। স্বাগত।’

নিজের অবিবাহিত কন্যা এবং একজন পরিচারকসহ সালাহউদ্দীন আহমদের বাড়িতে উঠলেন অধ্যাপক বাকী। রোজ সকালে সালাহউদ্দীনের বাবুর্চির হাতে একটা ফর্দ ধরিয়ে দিতেন অধ্যাপক বাকী। কিন্তু কোনো পয়সা দিতেন না। দৈনিক এক পোয়া ঘি, এক পোয়া সরিষার তেল, দিনের জন্য বড় রুই মাছ, রাতের জন্য মুরগি—এই ছিল তাঁর খাবার। সালাহউদ্দীনের ফতুর হওয়ার জোগাড়! এক মাস পর যখন তিনি চলে যাচ্ছেন, তখন তিনটি দশ টাকার নোট সালাহউদ্দীন আহমদের হাতে তুলে দিতে চাইলেন। সালাহউদ্দীন আহমদ নিতে অস্বীকার করায় তিনি বললেন, ‘আমি জানতাম, তুমি নেবে না।’

তাঁরা চলে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন সালাহউদ্দীন আহমদ।

সূত্র: সালাহউদ্দীন আহমদ, ফিরে দেখা, পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত