Ajker Patrika

নৃশংসতার মূল সূত্র দৃষ্টিভঙ্গি

সম্পাদকীয়
নৃশংসতার মূল সূত্র দৃষ্টিভঙ্গি

সেই নারীকে। ধর্ষণচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় রাগ করেই হয়তোবা তাঁকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলেছিল এই বদমাশের দল। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিন্তু আঘাত তাঁকে বাঁচতে দেয়নি।

তিনি ছিলেন তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় কারখানা থেকে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে উঠেছিলেন বাসে। ভালুকার সিডস্টোর এলাকায় অন্য যাত্রীরা নেমে গেলে বাসে যাত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন একা। একা এক নারী, এর অর্থই হলো, তাঁকে এখন ধর্ষণ করা যাবে—এ রকম এক ভাবনা নিশ্চয়ই খেলে গিয়েছিল এই তিন বদমাশের মাথায়। একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে, কতটা অমানবিক হলে তিনজন তিন বয়সী মানুষ একে অন্যকে সাক্ষী রেখে একজন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে পারে!
বাসে একা নারীর ওপর হামলে পড়ার ঘটনাও এটাই প্রথম নয়।

কিন্তু কেন এই প্রবণতার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা ভেবে দেখা দরকার। অবদমিত কাম প্রকাশের জন্য যেখানে ইচ্ছে, যখন ইচ্ছে একা কোনো নারীকে পেলেই ধর্ষণের বলি হতে হবে কেন, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভাববেন নিশ্চয়ই। কিন্তু শুধু বিশেষজ্ঞদের ভাবনায় এই অরুচিকর নৃশংসতার অবসান হবে না। এই মানসিকতা তৈরির 
জন্য দায়ী আরও কিছু বাস্তবতা। সেগুলোর কয়েকটির কথা এখানে বলে রাখা দরকার।

নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই রয়েছে এই নৃশংসতার মূল সূত্র। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে অপমান করা হয়। তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করা হয়। সামাজিকভাবে পুরুষকেই সংসারের প্রধান হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে এবং এ কারণেই বহু প্রতিষ্ঠানে নারীকে হেয় করে দেখা হয়। পরিবার থেকেই ছেলে ও মেয়েসন্তানের প্রতি দুই ধরনের আচরণ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হতে না পারলে নারী নির্যাতন কমবে না।

অবদমিত কাম প্রকাশের সুযোগ খুঁজে পাওয়ার একটা বড় কারণ হলো, এ ধরনের আচরণের ফলে যে বড় শাস্তি হতে পারে, সে কথা জানা নেই তাদের। একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে সেই নারীকে হত্যা করে কিংবা রাস্তায় ফেলে দিয়ে ঝাড়া হাত-পা হওয়া যাবে, কোনো মামলা হবে না—এ রকম একটা ভাবনাও হয়তো এই অপরাধপ্রবণতাকে উসকে দেয়। কারিগরি উন্নতির এই যুগে বিভিন্ন মাধ্যমে উত্তেজনাকর দৃশ্যের অবতারণাও এই অপরাধ করার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

দুই সন্তানের জননী আজ মৃত। তাঁর সন্তান এই তিন বদমাশের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন। আমরাও চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। চাই, সেই শাস্তির কথা ফলাও করে প্রকাশিত হোক, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো বদমাশ এই পথে পা না বাড়ায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত