Ajker Patrika

রেস্তোরাঁ সড়কে একদিন

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৩৫
রেস্তোরাঁ সড়কে একদিন

 মনের মানুষ যেখানে, কিসের সন্ধানে সেখানে যেতেন মহাত্মা লালন, তার উত্তরে তিনি নিজেই সন্দিগ্ধ ছিলেন। নইলে গানের মাধ্যমে সেটা বলে যাবেন কেন? আধ্যাত্মিক ব্যাপার-স্যাপারে সব সময় একটা সন্দিহান বিষয় আছে বা থাকে। কিন্তু ইহজাগতিক ব্যাপার-স্যাপারে সন্দেহের তেমন কোনো অবকাশ নেই। আমরা যারা নচ্ছার প্রকৃতির মানুষ, অধ্যাত্মবাদের উপলব্ধি যাদের জিভের ডগায়, সাধনার ধারায় যাদের চোখ-জিভ আর পাকস্থলী সিদ্ধ, তারা জানি আমরা কেন ‘সেখানে’ যাই। সাঁইজি জানতেন, একবিংশ শতকের উচ্ছন্নে যাওয়া চতুর প্রজন্ম নদীর ধারা না চিনলেও রাস্তাটা ঠিকই চিনে নেবে এবং সে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাবে গন্তব্যে, সঙ্গে মনের মানুষ থাক বা না থাক।

চতুর মানুষেরা অনেকভাবেই সে রাস্তায় যেতে পারেন। মিরপুর রোডের রাপা প্লাজার কাছে দাঁড়ালে ডান দিকে নাক বরাবর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক। সেটি সোজা গিয়ে মিশেছে সাতমসজিদ রোডে। এ সড়কের এক প্রান্ত সাতমসজিদ রোডের যে জায়গাটায় গিয়ে মিশেছে, সে জায়গাটা ইংরেজি টি অক্ষরের মতো। ওটা ২৭ নম্বরের মোড়। সেই টি-তে পৌঁছানোর আগেই হাতের বামে ছিল জিনজিয়ান। ডানে বারবিকিউ টু নাইট। টি-এর মাথায় দাঁড়িয়ে বামে ঘুরলে হাতের বামে মোড়ের ওপরই পড়বে ফোর সিজন, কাচে ঘেরা, সামনে বেশ খানিকটা জায়গাসহ। তার পাশে ডান দিকে লাগোয়া ছায়ানটের সুন্দর দালান দাঁড়িয়ে আছে। এটা গেল একটা প্রবেশপথ। সেই টি অক্ষরের এক প্রান্ত চলে গেছে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে। অর্থাৎ সেই দিক দিয়েও এ রাস্তায় আসা যায়।

এসেই যখন পড়েছেন, এবার চলতে থাকুন। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের পর পাবেন শংকর। তারপর আবাহনী লিমিটেডের মাঠ। তারপর ধানমন্ডি ৮, ৯, ১১, ১৫ ইত্যাদি বিখ্যাত সব সড়কের মোড়। সেগুলো ছাড়িয়ে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড। তার পাশেই সীমান্ত স্কয়ার। সেটা ছাড়িয়ে সিটি কলেজ। তারপর আবার মিরপুর রোড। পুরো সড়কটি এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

কিন্তু কেন এই সড়কের এত বয়ান আজ এই ছুটির দিনে? কারণ যে আছে, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। হ্যাঁ, এই রাস্তাটাকে বলা যায় ‘সুগন্ধ সরণি’ কিংবা ‘ফুড স্ট্রিট’ অথবা আপনার মনে যা আসে তা-ই। সেই ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড় থেকে শুরু করে সিটি কলেজের মোড় পর্যন্ত নাতিদীর্ঘ সড়কটির দুই পাশে রয়েছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ। আক্ষরিক অর্থেই অসংখ্য। বিখ্যাত তো আছেই, গলি-ঘুপচিতে ঘাপটি মেরেও আছে অনেক রেস্তোরাঁ, রসিক ছাড়া তাদের খোঁজ পাওয়া একটু কঠিন। এ সড়কের কোনো কোনো বিল্ডিংয়ের ৯০ শতাংশজুড়ে আছে অদ্ভুত সব রেস্তোরাঁ। দুপুর গড়ালেই এ পাড়ার চেহারা বদলে যেতে থাকে। নিয়ন আলোর সাইনবোর্ডগুলো যখন দৃশ্যমান হয় রাতের আঁধার ভেদ করে, তখন বুঝতে পারবেন আপনি আছেন ঢাকার খাদ্য সরণিতে। কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিট কিংবা পুরোনো দিল্লির গলিগুলোতে যেমন সার দেওয়া খাবারের দোকান থাকে, ঢাকার ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডও তা-ই।

২৭ নম্বর মোড় ছাড়ানোর পরই নাভানা জি এইচ হাইটস। সেখানে আছে গ্লোরিয়া জিনস, দিল্লি দরবার, সুমো, দা ফায়ার গ্রিল, ছাতিম, কমিক ক্যাফে, বুফে লঞ্জ, বিয়েবাড়ি রেস্টুরেন্ট। সুমো জাপানি খাবারের দোকান। এই দালানে আছে কোরিয়ান চেইন শপ বিবি.কিউ। এরপর একটু এগিয়ে আবাহনী মাঠের কোনায় ডান দিকে শংকরে আছে স্টার কাবাব, তার ওপরে পিৎজা হাট। একই বিল্ডিংয়ে আছে সেকেন্ড কাপ কফি কোম্পানি, দা ডাম্পলিং হাট, দা ইটার, পিৎজ্জা বার্গার, ওল্ড ট্রেন্স, এ ওয়ান ফুড অ্যান্ড পেস্ট্রি।

যদি বুফে খেতে চান তাহলে যেতে হবে ১১/এ-তে। সেখানে বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ আপনাকে দেবে বুফে খাওয়ার সুযোগ। সেখানে পাবেন ফরেস্ট লাউঞ্জ, স্পাইসি রমনা, দা বুফে স্টোরি, কাবাব ফ্যাক্টরি, দা ক্যাফে রিও, গার্লিক এন জিঞ্জার। এর পাশেই রাস্তার ডান দিকে পাবেন রূপায়ণের জেড আর প্লাজা। সেখানে আছে সাকিব’স ৭৫, হ্যাং আউট, হান্ডি, নইর, ডার্ক, ক্যাফে ওল্ড ১৯-সহ আরও কয়েকটি রেস্তোরাঁ। এ সড়কেই পাবেন ‘কাচ্চি ভাই’য়ের ডেরা।

বলে রাখি, ধানমন্ডি ৯/এ-এর কেবি স্কয়ারে প্রায় পুরোটাই রেস্তোরাঁর দখলে। সেখানে আছে প্রায় বিশটি রেস্তোরাঁ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চিজ, টেক আউট, রায়া বুফে, ম্যাড শেফ, ক্যাফে দ্রুম, অলটিটুড ইত্যাদি। এর পরেই ধানমন্ডি ৮/এ। এখানে আছে শেফস টেবল, ইউনিমার্টের ওপরে দুটি ফ্লোরজুড়ে। শেফস টেবল মানে বুঝতেই পারছেন, সেখানে ছোট ছোট অনেক ফুড কোর্ট আছে। যেকোনো ফুড কোর্টে বসে অর্ডার করতে পারেন পছন্দের খাবার। এর পাশে আনাম র‍্যাংগজ প্লাজায় আছে বুমারস। আনাম র‍্যাংগজ প্লাজা পেরিয়ে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড। সেখানে হাতের ডানে পাবেন কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজা। এই বিল্ডিংটিরও বেশির ভাগজুড়ে আছে বিভিন্ন পদের রেস্তোরাঁ। আছে ট্রাম্প ক্যাফে, ক্যাফে অসটেরিয়া, প্লাটিনাম ক্লাব, ক্যাপিটাল লাউঞ্জ, ক্যাফে ইউফোরিয়া, বুফে ও’ক্লক, পার্ক অ্যান্ড স্মার্ক ইত্যাদি। এর পাশের বিল্ডিংয়ে আছে মিনুস কিচেন, সুলতানস ডাইন। জিগাতলায় আছে সীমান্ত স্কয়ার। সেখানে বেশ কিছু ফুডকোর্ট আছে। সীমান্ত স্কয়ারের উল্টো দিকে ভূত। আর সিটি কলেজের কাছে পাবেন স্টার কাবাব।

খেয়াল করলে দেখবেন, সাতমসজিদ রোডের দুই প্রান্তে দুটি স্টার কাবাব আছে। একটি সিটি কলেজের কাছে, অন্যটি আবাহনী মাঠের উল্টো দিকে।

কী আছে এই রেস্তোরাঁগুলোয়? না ঘুরলে, না খেলে জানবেন কীভাবে? তবে মোটা দাগে বলা যায়, কাচ্চি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে কন্টিনেন্টাল, জাপানিজ, কোরিয়ান, ভারতীয়, দেশি—সব ধরনের খাবারই পাবেন ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে। পাবেন বুফে থেকে শুরু করে সালাদ, চা থেকে কফি—সবই।

সকাল থেকে রেস্তোরাঁগুলো মোটামুটি খোলা থাকলেও জমে ওঠে মূলত দুপুরের পর। চলে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত।

ছুটির দিনে যাবেন নাকি সন্ধানে, সাঁইজির নাম নিয়ে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত