Ajker Patrika

মৃৎশিল্পীদের দিন কাটছে কষ্টে

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২২, ১৪: ২৯
মৃৎশিল্পীদের দিন কাটছে কষ্টে

প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না মৃৎশিল্প। এ শিল্পে জড়িত অনেকে পেশা বদল করে চলে যাচ্ছেন অন্য কাজে। আর জড়িতরা দিন পার করছেন কষ্টে।

সদর উপজেলার আঁকচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মাটির তৈরি হাঁড়িপাতিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস বানাচ্ছেন কুমারেরা। ওই গ্রামের বাড়ির উঠোনের এক কোণে বসে মাটির সরা তৈরি করছিলেন বিনতী পাল। তৈজসপত্র তৈরির কাজে স্বামী উৎপল পালকে সহযোগিতা করেন তিনি। কাজের ফাঁকে বিনতী পাল জানান, এ পেশায় সারা দিন কাজ করেও ঠিকমতো সংসার চলে না তাঁদের। অনেক সময় খেয়ে-না খেয়ে কাটে। এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যাওয়ার পুঁজি নেই বলে পেশা পরিবর্তন করতে পারছে না এ দম্পতি।

ওই গ্রামের গোপাল পাল জানান, নুন আনতে তাঁদের পান্তা ফুরায়। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পড়ানো তো দূরের কথা, দুবেলা অন্ন জোটানোই কষ্টসাধ্য। পাশাপাশি এই শিল্পের জন্য মাটি ও জ্বালানির জোগানের ক্ষেত্রেও নানা সীমাবদ্ধতার কথা জানান গোপাল। গোপাল পালের বড় ভাই বিকাশ পাল বলেন, ‘একসময় বাহারি নকশার আসবাব তৈরি করে এলাকায় আমাদের পরিবারের ভালো নাম-ডাক ছিল। ওই থেকে আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে অবস্থা আর ভালো নেই। সবকিছুর বাড়তি দাম। ব্যবসাও আগের মতো নেই।’

মৃৎশিল্পের আরেক কারিগর জয়পাল বলেন, ‘বাজারে প্লাস্টিক, মেলামাইন, সিলভার আর স্টিলের জিনিসপত্র কিনলেও মানুষ মাটির জিনিসপত্র আর কিনছে না। এ কারণে বিক্রিও কমে গেছে। আমাদের পরিবারের সদস্যরা বেকার হয়ে পড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের মৃৎশিল্প একদিন মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।’

কুমারদের দুর্দশার বিষয়ে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ বলেন, এই ইউনিয়নে পাল সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০০ পরিবার একসময় মৃৎশিল্প তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাত। এখন ১৮০ থেকে ২০০টি পরিবার এ পেশায় জড়িত। মৃৎশিল্পীদের অনেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য পেশা বদল করছেন।’

ঠাকুরগাঁও পরিবেশবাদী সংগঠন সৃজনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভোক্তাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের পণ্য না কিনে পরিবেশবান্ধব মাটির জিনিসপত্র কিনতে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘জেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে সাধ্যমতো কারিগরদের পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন। তাঁদের পণ্য উৎপাদনে কাঁচামালের সমস্যা থাকলে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত