Ajker Patrika

‘ভূল’

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ১০: ০৯
‘ভূল’

কলকাতার পার্কসার্কাসে জন্ম শহীদ কাদরীর। ১৯৪২ সালে। বাবার মৃত্যুর পর বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কয়েক দিন আগে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন তাঁরা। বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন খোকন। তিনি একদিন এসে শহীদের বড় ভাই শাহেদের খোঁজ করছিলেন। তিনি শহীদকে বলেন, ‘তুই শামসুর রাহমানের কবিতা পড়েছিস? নাম শুনেছিস?’

‘না তো, আমি নাম জানি না।’

‘আরে তাঁর কবিতা তো দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়। দেশ পত্রিকায় কখনো দেখিসনি?’

‘না তো!’

‘আচ্ছা, আমি বাচ্চু ভাইকে তোর কথা বলব।’ বলে চলে যান খোকন।

মহিউদ্দিন আহমদের ছদ্মনাম ছিল আহমদ মীর। তিনি ‘স্পন্দন’ নামে পত্রিকা বের করতেন ওয়ারী থেকে। তাঁর পত্রিকায়ই ছাপা হলো শহীদ কাদরীর প্রথম কবিতা ‘পরিক্রমা’। কবিতাটি ছিল মার্ক্সিস্ট কবিতা। দ্বিতীয় কবিতাটিও ছাপা হয় সেখানেই ‘জলকন্যার জন্য’ নামে। স্পন্দন খুলে কেউ তাঁর কবিতা পড়ছে কি না, সেটা দেখার জন্য খান মজলিসের বুক স্টলে যেতেন শহীদ কাদরী। একদিন দেখেন শামসুর রাহমান সেখানে দাঁড়িয়ে ‘স্পন্দন’ খুলে কবিতা পড়ছেন। শামসুর রাহমানকে শহীদ কাদরী জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার কেমন লাগল “জলকন্যার জন্য” কবিতাটা?’ শামসুর রাহমান হেসে বললেন, ‘আপনি কি শহীদ কাদরী? আপনার কথা তো খোকন আমাকে বলেছে।’

শহীদের পকেটে এক টাকা ছিল। সদরঘাটের রিভার ভিউ ক্যাফেতে শামসুর রাহমানকে নিয়ে গেলেন তিনি। চা-বিস্কুট নিয়ে বসলেন। শহীদ বললেন, ‘আমার কাছে আরেকটা কবিতা আছে, শুনবেন?’

শামসুর রাহমান শুনলেন। সে কবিতায় একটা লাইন ছিল, ‘মেয়েটা সারারাত জেগে ভূল বানানে কবিতা লেখে...’।

শামসুর রাহমান বললেন, ‘আপনার “ভূল” বানানটা কিন্তু ভুল।’

এভাবে শুরু হলো কথা। শামসুর রাহমানের আশিক লেনের বাড়ি যান সেখান থেকে। তাঁর ছাপা হওয়া কবিতার বান্ডিল বের করে শুনিয়ে যান একের পর এক কবিতা। গাঢ় হলো বন্ধুত্বের বন্ধন।

সূত্র: জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, শহীদ কাদরী লেখা না-লেখার গল্প, পৃষ্ঠা ৪৫-৪৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত