Ajker Patrika

সভা ও ভূরিভোজ

সম্পাদকীয়
সভা ও ভূরিভোজ

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে ঘটেছে অদ্ভুত এক ঘটনা। বিনা অনুমতিতে নির্বাচনী সভা ডেকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় ভূরিভোজের আয়োজন করেছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে বলে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর এক কর্মীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। তাতেও থামেননি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। ঘণ্টা দুয়েকের ব্যবধানে আবারও একই স্থানে বিনা অনুমতিতে সভা ও ভূরিভোজের আয়োজন করেন তাঁরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত আবার সেখানে গেলে আদালতের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও তাঁর লোকজন।

একে তো প্রতিমন্ত্রীর ভাই, তার ওপর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী! এ রকম একজন দাপুটে মানুষের নির্বাচনী সভা (হোক না তা বিনা অনুমতিতে!) আর ভূরিভোজ মাটি করে দিলে কি সেই প্রার্থীর মেজাজ ঠিক থাকে? মেজাজের প্রসঙ্গ যখন উঠলই, তখন বলতে হয়, রাজনীতিতে আসলেই কি আর মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখার চল আছে? আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যের সঙ্গে আচরণে বিনয় প্রদর্শন—এগুলো কি এখনো রাজনীতির মাঠে ক্রিয়াশীল? নির্বাচনের মাঠ কিংবা এলাকার কর্মকাণ্ড—কোনোটাই কি এখন জনগণের 
রায়ের ওপর নির্ভরশীল?

সংসদে পাঁচ বছরের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় একটি দিনই ছিল, যেই দিনে জনগণের কাছে আসতে হতো সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের। তেমনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নির্ভর করতে হতো জনগণের রায়ের। আর নির্বাচনের দিনটিতে যেন ভোটটা নিজের পক্ষে পড়ে, তার জন্য প্রচারণার সময় এলাকার উন্নয়নের আশ্বাস দিতে হতো। নির্বাচিত হয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে সেই প্রার্থীকে নতুন করে ভোট দিতেন না সচেতন ভোটাররা। তাই ইচ্ছে হোক আর না হোক, নির্বাচনের সময় জনগণের কাছে আসতেই হতো প্রার্থীকে।

কিন্তু বহুদিন ধরেই আমরা দেখছি, এক পক্ষ নির্বাচন করছে, আরেক পক্ষ নির্বাচন বর্জন করছে। কেন্দ্রে কত ভোট পড়ছে, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। কে নির্বাচিত হবেন, তা যেন পূর্বনির্ধারিত। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই বললেই চলে। যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, তাহলে তা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। আর এ থেকেই জনগণ জেনে যায়, ভোটকেন্দ্রে যাওয়া বা না যাওয়া এখন আর ভোটের মাঠের চিত্রকে বদলাতে পারবে না। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আকর্ষণ নেই।

কেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে অসদাচরণ করছেন একজন হেভিওয়েট প্রার্থী, সেটা বুঝতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে রাজনীতির বর্তমান হালের বিষয়টি। পেশিশক্তি প্রদর্শনের সঙ্গে পরোক্ষ একটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেছে রাজনীতিবিদদের। সেটা দেখানো মানেই জনগণকে বুঝিয়ে দেওয়া—আমিই কিন্তু এই অঞ্চলের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করি! 
রাজনীতি থেকে বিনয় হারিয়ে গিয়ে পেশিশক্তির জয় হলে গণতন্ত্র হয়ে পড়ে টালমাটাল। তাতে লাভ হয় না কারোরই—এ কথা এই রাজনীতিবিদেরা কবে আর বুঝবেন?

আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি কি তিনি পেয়েছেন? দল থেকে কি তাঁকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাবের ওপরই নির্ভর করে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। এ ঘটনায় সেই ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে, সেটা বোঝা কঠিন নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত