Ajker Patrika

পদ্মায় বিলীনের পথে চকরাজাপুর ইউনিয়ন

গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন, বাঘা
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৭: ৪১
পদ্মায় বিলীনের পথে চকরাজাপুর ইউনিয়ন

প্রমত্তা পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে বিলীনের হুমকিতে পড়েছে বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়ন। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা।

উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান চকরাজাপুর ইউনিয়নের। গত দুই মাসে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর ৪ নম্বর চকরাজাপুর ওয়ার্ডের পুরোটি গ্রাস করেছে পদ্মা।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনের তীব্রতা চলছে নতুন করে জেগে ওঠা পদ্মার চরের লক্ষ্মীনগর, কালিদাসখালী এলাকায়। বিলীনের হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকায় থাকা কালিদাসখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভূমিহীন বাহের আলীর উপহারের পাকা বাড়ি। কালিদাসখালী বিদ্যালয়সংলগ্ন পাকা সড়কটির প্রায় ২০০ মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। বাহের আলী তাঁর পাকা বাড়িটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।

জানা গেছে, ভাঙনের কবলে পড়লে কালিদাসখালী গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবন, পরিষদসংলগ্ন চেয়ারম্যানের বসতবাড়ি ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ইউনিয়নটির চারটি গ্রামের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, আমবাগানসহ কয়েক একর ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা সড়ক পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে কেউ অন্য জায়গায় আবার কেউ জমি লিজ নিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন। পরিবার নিয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। এখন অন্য জায়গায় বাড়ি তুলছেন তিনি। ভাঙনের কবলে পড়লে চর এলাকার ১১৫টি বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান, নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর বাঘা জোনাল অফিসের জিএম সুবীর কুমার।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই মাস ধরেই পদ্মার ভাঙন কমবেশি চলছে। এতে বিলীন হচ্ছে গাছপালাসহ ফসলি জমি, গ্রাম, সড়ক, ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত বছরের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছপালা। চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ চলে গেছে নদীগর্ভে।

লক্ষ্মীনগর এলাকার আজমল হোসেন ও মামুন মাতবর জানান, জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা থেকে এলাকা ছাড়তে পারছেন না তাঁরা। নিরুপায় হয়ে অন্যের জমিতে বসতি গড়েছেন।

স্থানীয় টুকু দেওয়ান বলেন, সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে ভাঙনকবলিত চরাঞ্চলের বাসিন্দারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, গত বছর ভাঙনের কবলে পড়লে দুই কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেওয়া হয় বিদ্যালয়টি। এ বছর আবার ভাঙনের কবলে পড়েছে।

চকরাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, ‘শুনেছি উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতপাড়া থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগরের শেষ মাথা পর্যন্ত নদীশাসনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চকরাজাপুর ইউনিয়নসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের মানুষ ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাবে।

বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, তিন দশকের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরাজাপুরসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ ও কবরস্থান। অনেকেই অন্যত্র গিয়ে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন।

ইউএনও পাপিয়া সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, নদীশাসনের জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বাঘার ১৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত