Ajker Patrika

আবদুর রাজ্জাকের লাশ

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০২
আবদুর রাজ্জাকের লাশ

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বাড়িতে যখন অধ্যাপক নাজিম মাহমুদের ঘুম ভাঙল, তখনো তিনি জানেন না কী ঘটেছে গত রাতে। তিনি শুধু শুনতে পেলেন, তাঁর স্ত্রী মহা তর্ক করছেন কারও সঙ্গে। এগিয়ে দেখেন, সামনে এক সৈনিক। সৈনিকটি চিৎকার করে বাড়ির ওপরের কালো পতাকা নামানোর আদেশ দিচ্ছে। নাজিম মাহমুদের স্ত্রী তর্ক করছেন। বলছেন, ‘আমরা পতাকা নামাতে পারব না!’

নাজিম মাহমুদ বুঝিয়ে বললেন, পতাকা চিলেকোঠার ছাদে উড়ছে। সেখানে তাঁরা উঠতে পারেন না। প্রয়োজন হলে সৈনিকটাই যেন পতাকা নামানোর ব্যবস্থা করেন।

সহকর্মী সৈয়দ ইবনে আহমদকে দেখলেন রেলিংয়ে ঝুঁকে জুবেরী ভবন মাঠের দিকে উঁকি মারতে। তারপরই তিনি ঘরে গেলেন। বেজে উঠল টেলিফোন। নাজিম মাহমুদ শুনতে পেলেন সৈয়দ ইবনে আহমদের কণ্ঠ, ‘বাইরে গুলি হচ্ছে, গুলি।’

‘কেন, গুলি কেন?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন নাজিম মাহমুদ।

‘আপনি কিছুই জানেন না?’

‘না তো!’

‘রেডিও খুলুন। মার্শাল ল জারি হয়েছে।’

রেডিওতে শোনা গেল ইয়াহিয়ার কণ্ঠস্বর। মুজিব নাকি দেশদ্রোহী। বলছেন ইয়াহিয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সচেঞ্জে যোগাযোগ করলেন নাজিম মাহমুদ। অপারেটর জানালেন, ‘এক্সচেঞ্জ থেকে সবাইকে কল করা যাচ্ছে না। ডাইরেক্ট লাইন সম্ভবত কেটে দিয়েছে।’

এরপর জানা গেল আরেক তথ্য। ২৫ মার্চ রাতে গার্ড আবদুর রাজ্জাকের ডিউটি ছিল প্রশাসন ভবনের গেটে। মধ্যরাতে পাকিস্তানি মিলিটারির একটা ট্রাক আসে, তাতে কয়েকজন জওয়ান। তারা ফটকের কলাপসিবল গেট খুলে দিতে বলে। খুলে দেননি আবদুর রাজ্জাক। তাঁকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।

২৬ মার্চ সকালেও তাঁর লাশ পড়ে ছিল প্রশাসন ভবনের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখে।

সূত্র: নাজিম মাহমুদ, যখন ক্রীতদাস: স্মৃতি ৭১, পৃষ্ঠা ১৫-১৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত