Ajker Patrika

কৃষি মার্কেটের আগুনেও সেই পুরোনো সন্দেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কৃষি মার্কেটের আগুনেও  সেই পুরোনো সন্দেহ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের আগুন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আবার পুরোনো সন্দেহ জাগিয়েছে। তাঁরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে মার্কেট ভাঙার সিদ্ধান্তের পর আগুন লাগা স্বাভাবিক নয়। তাঁদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের অনড় অবস্থানের কারণে মার্কেট ভাঙতে না পেরে জায়গা খালি করতে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনেরও একই সন্দেহ। তিনি বলছেন, সিটি করপোরেশন যেসব মার্কেট ভেঙে পাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলোই আগুনে পুড়েছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, আগুনের সঙ্গে মার্কেট ভাঙার সিদ্ধান্তের কোনো সম্পর্ক নেই।

গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স পুড়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর গত বৃহস্পতিবার ভোরে আগুনে পুড়ে গেল মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের কয়েক শ দোকান। দুটি মার্কেটই সিটি করপোরেশন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কৃষি মার্কেট ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়েছিল গত রমজান মাসে।

এদিকে আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া মালপত্র লুটের অভিযোগ করেছেন কৃষি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। আগুনে সামান্য ক্ষতি হওয়া চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য নামমাত্র দামে গতকাল শুক্রবার মার্কেটের সামনে বিক্রি করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।

কৃষি মার্কেটের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত। জোর করে ভাঙার চেয়ে আগুন লাগিয়ে ফাঁকা করার সহজ পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। আগুনে মার্কেট পুড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা আর আগের জায়গা ফেরত পান না। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা পাননি, তাঁরাও পাবেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত কয়েকটি কাঁচাবাজার ভেঙে বহুতল মার্কেট করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একাধিকবার উচ্ছেদের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় দোকান ছাড়ার নির্দেশ আটকে গেছে। ফলে মার্কেট ভাঙা যাচ্ছে না। এমন মার্কেটে আগুন লাগায় ব্যবসায়ীদের সন্দেহ জোরদার হয়েছে।

ডিএনসিসি সূত্র বলছে, তাদের আটটি মার্কেট ‘অতি নাজুক’। এগুলো হলো—গুলশান উত্তর কাঁচাবাজার, গুলশান দক্ষিণ পাকা মার্কেট, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা, রায়েরবাজার মার্কেট, কারওয়ান বাজার ১ ও ২ নম্বর মার্কেট, কারওয়ান বাজার অস্থায়ী কাঁচাবাজার (কিচেন মার্কেট), কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়ত। এসব মার্কেটে কার্যক্রম চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

গত ৪ এপ্রিল আগুনে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুনে ছয়টি মার্কেটের কয়েক হাজার দোকান পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছিলেন, মার্কেট খালি করতে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে। কারণ, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্যবসায়ীদের তুলতে না পেরে ডিএসসিসি মার্কেট খালি করতে আগুন দিয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন গতকাল বলেন, ‘আমাদের পরিষ্কার সন্দেহ হয়, এসব আগুন স্বাভাবিক নয়, রহস্যময়। সিটি করপোরেশন যে মার্কেটগুলো ভেঙে পাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই মার্কেটগুলোতে আগুন লেগেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পাকা মার্কেট চাই, তার অর্থ এই নয় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পাকা মার্কেট করতে হবে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, আগুনের সঙ্গে মার্কেট ভাঙার কোনো সম্পর্ক নেই। আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানগুলো সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ দেওয়া। 

পোড়া দোকানে লুটের অভিযোগ
কৃষি মার্কেটের পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে জেনেভা ক্যাম্প ও আশপাশের লোকজনের বিরুদ্ধে মালপত্র লুটের অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। চাঁদপুর স্টোরের মালিক শারমিন আক্তার বলেন, ছাইয়ের নিচ থেকে উদ্ধার করা মালপত্র একপাশে গুছিয়ে রেখে দোকানের শাটার লাগিয়ে গিয়েছিলেন। সকালে এসে দেখেন শাটার খুলে গুঁড়া সাবান, চিনির বস্তাসহ সব জিনিস নিয়ে গেছে।

তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আজিজুল হক বলেন, সব ফটকে পুলিশ রয়েছে। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সকালে গিয়ে দেখা যায়, আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া চাল, ডাল, আলু, লবণ, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য নামমাত্র দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এগুলোতে ধোঁয়ার গন্ধ ও ভেজা। ৮০ টাকা কেজির চাল বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি। কেউ কেউ এক বস্তা চাল বিক্রি করেন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। কম দামে পেয়ে কিনেছেনও অনেকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত