Ajker Patrika

জয়টা বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে দিল

হাবিবুল বাশার সুমন
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৩১
জয়টা বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে দিল

আমাদের অনেক সাফল্য আছে। সন্দেহ নেই, এই জয় আমার তালিকায় সবার ওপরে থাকবে। বিশ্বকাপসহ অনেক টুর্নামেন্টেই আমরা দারুণ কিছু জয় পেয়েছি। তবে আজকেরটা (গতকালের) বিশেষ জয়। কারণ, নিউজিল্যান্ড দল নিজেদের কন্ডিশনে খুবই শক্তিশালী।

খুব কম দলই ওদের মাঠে জিততে পারে। এই রেকর্ড সবারই জানা।

আর টেস্টে আমরা কঠিন সময় পার করছিলাম। সর্বশেষ (পাকিস্তানের বিপক্ষে) সিরিজ ভালো যায়নি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাজে খেলেছি। দলের আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে নেমে গিয়েছিল। দেশের ক্রিকেটে যত মাইলফলক আছে, এই জয় সেগুলোর একটি। এটা বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে দিল। আমার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, এই দলকে নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি।

যখন ছেলেরা খারাপ খেলে, তখনো আমি দলের অংশ। এবার জয় পেল। এখন অনেক ভালো লাগছে। একটা দল গড়ে তুলতে কোচিং স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্ট, বোর্ড পরিচালক, নির্বাচক—সবারই অবদান আছে। সবাই দলকে ভালো করতে সহায়তা করে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, মাঠে যারা খেলে। ওদের সবাইকে টুপি-খোলা অভিবাদন।

জয়টি বিশেষ বলার আরেকটি কারণ, ছেলেরা (মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে) টানা পাঁচ দিন দুর্দান্ত খেলেছে। ওয়ানডেতে এক দিন, টি-টোয়েন্টিতে আধবেলা ভালো খেললে জেতা যায়। কিন্তু টেস্ট জিততে হলে প্রায় পাঁচ দিনই ভালো খেলতে হয়। সবাই আমার সঙ্গে একমত হবে যে বাংলাদেশ এই টেস্টে তেমনই করেছে। প্রতিটি সেশন, প্রতিটি দিন তারা ভালো ক্রিকেট খেলেছে। কৃতিত্ব খেলোয়াড়দেরই দিতে হবে।

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মুমিনুল ভালো কথা বলেছে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসেছে এই জয়। এর মধ্যে ইবাদতের ৬ উইকেট ছিল সবচেয়ে স্পেশাল। তবে মাহমুদুলের ৭৮, শান্তর ফিফটি, লিটনের ধারাবাহিকতা আর মুমিনুল তো সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছে। শুধু ব্যাটিংয়েই নয়; দলের প্রয়োজনে যে বল হাতে তুলে নিয়েছে ও গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট এনে দিয়েছে। এমনটাই তো হওয়া উচিত। টেস্ট জিততে আপনাকে যেমন রান করতে হবে, উইকেটও ফেলতে হবে। শুধু রান করলে বড় জোর ড্র করতে পারবেন। কিন্তু জিততে হলে প্রতিপক্ষকে দুইবার অলআউট করতেই হবে। সবাই জানে, আমাদের মিডল অর্ডার কতটা শক্তিশালী। শুধু টপ অর্ডার ক্লিক করলেই আমরা বড় স্কোর গড়তে পারি। মিডল অর্ডারও একটু সময় পায়। প্রথম ইনিংসে সংগ্রহটা বড় হলে বোলাররাও আত্মবিশ্বাস পায়। এটাই সাফল্যের মূল কারণ।

এবারের মতো জটিল পরিস্থিতিতে কখনো পড়তে হয়নি। একে তো কঠিন কন্ডিশনে খেলতে গিয়েছি, তার ওপর বারবার কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা বেড়েছে। আমরা ঘরের মাঠে সব সময়ই শক্তিশালী দল, দেশের বাইরে ততটা নয়। এবার বিদেশেই আমরা ঘুরে দাঁড়ালাম। সেটাও সীমিত প্রস্তুতি নিয়ে। সমালোচকেরা কথা বলবেই। তাদের নিয়ে কী বলা উচিত ঠিক জানা নেই। সমালোচকদের কথায় কিন্তু দলে প্রভাব ফেলে। তাদের বোঝা উচিত, খেলোয়াড়েরাও রক্ত-মাংসের মানুষ। মনে রাখতে হবে দলটা আমাদেরই। এটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। খারাপ খেললে সমালোচনা হবেই। নয়তো খেলোয়াড়েরা কীভাবে বুঝবে তারা কোন জায়গাগুলোতে ভুল করছে। তবে সমালোচনা যেন সীমা না ছাড়ায়।

সিরিজের শেষ টেস্টে ড্র করলেই আমরা সিরিজ জিতে যাব। তবে নিউজিল্যান্ডও সিরিজ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে। আমার কাছে মনে হয়, এখনই সিরিজ জয়ের চিন্তা করা ঠিক হবে না। আমরা যে পরিস্থিতি তৈরি করেছি, এটা ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তার আগে জয় উদ্‌যাপন করা যাক। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে যে জেতা যায়—ম্যাচের পর এই বিশ্বাস জন্মানোই বড় ব্যাপার। খুব কম দলই ওদের দেশে টেস্ট সিরিজ জিতেছে। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে আমরাও খুব কাছে চলে এসেছি। একটা টেস্ট যখন জিততে পেরেছি, তাহলে সিরিজ জিততে পারব না কেন?

হাবিবুল বাশার সুমন: সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির নির্বাচক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত