Ajker Patrika

শহীদ সুজীত বর্মণের স্বজনেরা কোথায়?

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ২১
শহীদ সুজীত বর্মণের  স্বজনেরা কোথায়?

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াই। একপর্যায়ে পিছু হটে সেনারা। সিদ্ধান্ত হয় রেললাইন উড়িয়ে দেওয়ার। দায়িত্ব পড়ে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ সুজীতের কাঁধে। প্রথম মাইনের বিস্ফোরণ সফল হয়। কিন্তু দ্বিতীয়টির বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে সুজীত শহীদ হন। তাঁর শরীরের সঙ্গে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় কাঁধের ব্যাগটিও। ওই ব্যাগেই ছিল মুক্তিযোদ্ধা দলটির সবার বিস্তারিত ঠিকানা। সহযোদ্ধারা শুধু জানতেন, সুজীতের পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহে। দেশ স্বাধীন হলে সহযোদ্ধারা তাঁর স্বজনদের খোঁজে ময়মনসিংহ যান।

কিন্তু তাঁর ঠিকানা কিংবা স্বজনদের কাউকে খুঁজে বের করতে পারেননি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তাঁরা জানেন না শহীদ সুজীতের স্বজনেরা কারা। তাঁরা এখন কোথায়?

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী মুক্ত হয় আদমদীঘি সদর। ৭ নম্বর সেক্টরের ৬৮ নম্বর দলের কয়েক শ বীর মুক্তিযোদ্ধা সান্তাহার শহর মুক্ত করতে পশ্চিম ঢাকা রোড থেকে সামনের দিকে যেতে থাকেন। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এল কে আবুল, মেজর (অব.) আব্দুল হাকিম ও মো. হায়াত। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা সান্তাহার থেকে মিটার গ্রেজ লাইনে ট্রেনে করে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুললে পাকিস্তানি সেনাদের ট্রেনটি সান্তাহারে ফিরে আসে। পরে সান্তাহার ওয়ার্কশপ থেকে প্রচণ্ড বেগে গোলা ছুড়তে থাকে। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন, সান্তাহার থেকে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করতে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া হবে। এর দায়িত্ব দেওয়া হয় বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজীত বর্মণকে।

৬৮ নম্বর দলের কমান্ডার এল কে আবুলের পরামর্শে দুটি অ্যান্টি মাইন রেললাইনে লাগানো হয়। প্রথমটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে উড়ে যায় একটি লাইনের বেশ কিছু অংশ। দ্বিতীয় মাইনটি বিস্ফোরণ করতে সুতার মাথায় টান দেন সুজীত বর্মণ। কিন্তু মাইনটি বিস্ফোরিত হয়নি। তিনি সেটি পরীক্ষা করতে যান। আর তখনই মাইনটির বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সুজীতের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সুজীতের বয়স যুদ্ধের সময় ছিল ২২ থেকে ২৪ বছর। ময়মনসিংহের এই কৃতী সন্তানের স্বজনের খোঁজ করছি আমরা। কেউ থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজমল হোসেন বলেন, ‘সুজীত বর্মণের বাড়ি ময়মনসিংহে। সে ছিল স্নাতক পাস। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়েছিল। পরে সান্তাহার এলাকায় ৬৮ নম্বর দলের হয়ে যুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সুজীতের মা-বাবাসহ স্বজনদের খোঁজে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর কোনো ঠিকানা পাইনি।’

মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ও ৬৮ নম্বর দলের কমান্ডার এল কে আবুল বলেন, ‘সুজীত বর্মণে কাঁধে সব সময় একটা ব্যাগ থাকত। সেই ব্যাগে আমাদের দলের সব সদস্যের নাম-ঠিকানা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে সেই ব্যাগসহ সুজীত ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এ কারণে তার বিস্তারিত পরিচয় জানতে পারিনি।’ তিনি বলেন, সুজীত বর্মণ যেখানে শহীদ হয়েছিলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাম রাখা হয় সুজীত রেলগেট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত